শেখ পরিবার ও ১০ গ্রুপের ‘পাচার’ অর্থ ফেরাতে তিন সংস্থার জোট
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার পরিবারের সদস্য এবং ১০ শিল্প গোষ্ঠীর ‘পাচার করা’ অর্থ ফেরত আনতে একসঙ্গে কাজ করবে রাষ্ট্রের তিন সংস্থা।
দুদককে মূল ভূমিকায় রেখে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর যৌথভাবে এ কাজ করবে।
তাদের কাজ সমন্বয় করবে অর্থ পাচার প্রতিরোধে কাজ করা আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবার এবং ১০ শিল্পগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতি, প্রতারণা, জালিয়াতি, অর্থপাচার, কর ও শুল্ক ফাঁকির অভিযোগ রয়েছে।
বিদেশে টাকা পাচার করে সেই অর্থে ব্যবসার মালিকানা এবং ফ্ল্যাট ও বাড়ি কেনায় বিনিয়োগ করার অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে ডিসেম্বরে দাখিল করা শ্বেতপত্র কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার আমলে গড়ে প্রতি বছর ১ হাজার ৬০০ কোটি ডলার ‘পাচার’ হয়েছে।
পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে কাজ শুরু হওয়ার কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ও অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।
প্রধান উপদেষ্টা যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, ইউরোপী ইউনিয়ন, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন এবং তাদের কাছ থেকে আশ্বাস মিলেছে। কূটনৈতিক পর্যায়েও আলোচনা হচ্ছে।
দুদকের অনুসন্ধানের আওতায় থাকা শিল্প গ্রুপগুলো হল- বসুন্ধরা, বেক্সিমকো, এস আলম, জেমকন, নাবিল, নাসা, ওরিয়ন, সিকদার, আরামিট ও সামিট। এসব গ্রুপের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানও রয়েছে এ তালিকায়।
দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এ বিষয়ে ১১টি অনুসন্ধান দল গঠন করা হয়েছে। এই দলগুলো সিআইডি ও এনবিআরের সঙ্গে যৌথভাবে অর্থ পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধান করবে।
তিনি বলেন, “অর্থ পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধান ও পাচার করা অর্থ ফেরত আনতে তৎপরতা রয়েছে দুদকের। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসবে সেগুলো অনুসন্ধান করা হবে। এ ক্ষেত্রে বিশেষ কোনো ব্যক্তি বা দলের প্রতি আনুগত্য দেখানোর সুযোগ নেই।
“অনুসন্ধান বিধি অনুযায়ী কাজ করতে দুদকের কর্মকর্তারা স্বাধীন। এ ক্ষেত্রে তারা অপরাধ প্রমাণে প্রয়োজনীয় নথি ও রেকর্ডপত্র সংগ্রহ থেকে শুরু করে তলবও করতে পারবেন। অভিযোগের প্রমাণ মিললেই সংশ্লিষ্ট বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে।”
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গভর্নর মনসুর এইচ মনসুর বলেছেন, আত্মসাৎ হওয়া অর্থ শনাক্ত ও তা পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ১১টি যৌথ তদন্ত টিম গঠন করেছে।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রধান ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মো. মতিউর রহমান শেখ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার পরিবার ও দশ শিল্প গ্রুপের অর্থপাচারের তদন্তে যে টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে সেখানে দুদক এনবিআর এবং সিআইডি যৌথভাবে তদন্ত করবে।
তিনি বলেন, “সরকারি কর্মকর্তা এবং কর্মচারী দুর্নীতি এবং মানিলন্ডারিংয়ে সম্পৃক্ত থাকলে সেটির অনুসন্ধান- তদন্ত দুদক করে থাকে। এমনিতে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মালিক বা সরকারি কমকর্তা কর্মচারী ছাড়া অন্য যে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মানিলন্ডারিংয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ততরার অভিযোগ সিআইডি তদন্ত করে থাকে। এই টাস্কফোর্সের আওতায় যেসব অর্থপাচারের অভিযোগ তদন্ত হবে তার নেতৃত্ব দেবে দুদক।”
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সে দিন দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান।
সেদিন শেখ হাসিনার সঙ্গে তার বোন শেখ রেহানাও দেশ ছাড়েন। শেখ হাসিনার ছেলে এবং তার সাবেক উপদেষ্টা জয় আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্র্র প্রবাসী। আর রেহানার মেয়ে টিউলিপ যুক্তরাজ্য সরকারের সাবেক প্রতিমন্ত্রী।
বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। যুক্তরাজ্যে থাকা তার ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান সম্প্রতি আলোচনা আসেন সেখানে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে শেখ হাসিনার ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিকের বিষয়ে তোলপাড় শুরু হলে। টিউলিপকে শেষ পর্যন্ত ব্রিটিশ সরকারের প্রতিমন্ত্রীর পদ ছাড়তে হয়।
সামিট গ্রুপের কর্ণধার আজিজ খান কয়েক দশক ধরে সিঙ্গাপুরের স্থায়ী বাসিন্দা।
আরামিট গ্রুপের কর্ণধার সাবেক ভূমি মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর যুক্তরাজ্যে অবস্থানের খবর এসেছে। এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম (এস আলম) দেশের বাইরে থাকার বিষয়টি সংবাদমাধ্যমে এসেছে।
তবে ক্ষমতার পালাবদলের তার পরিবারের অন্যদের প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। বসুন্ধরা, নাবিল, ওরিয়ন, জেমকন ও সিকদার গ্রুপের মালিকদের কাউকেও প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে না।
নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারও গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ অগাস্ট অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নেয়। এরপর প্রায় দুই সপ্তাহের মধ্যে বেক্সিমকো, বসুন্ধরা, সামিট, ওরিয়ন ও নাসার মালিকদের বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল-সিআইসির অনুসন্ধান শুরুর খবর আসে।
ডিসেম্বরে দুদকের বরাত দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের এক সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, বিভিন্ন ‘উন্মুক্ত সূত্র’ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে প্রায় ৫০০ কোটি ডলারের ‘আর্থিক অনিয়ম’ হয়েছে।
“রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য অতিরিক্ত ব্যয় দেখিয়ে ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলারের চুক্তির মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয় এবং ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আত্মসাৎ করেছেন, যা পাচার করা হয়েছে মালয়েশিয়ার বিভিন্ন অফশোর ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে।”
এছাড়া শেখ হাসিনা এবং তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে ৩০ কোটি ডলার পাচারের আরেকটি অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক।
দুদকের মুখপাত্র ও মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে অনুসন্ধান দল রেকর্ডপত্র ও দালিলিক প্রমাণাদি সংগ্রহের কাজ করছে।”
এর অংশ হিসেবে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে অফশোর ব্যাংকিং হিসাব ও পরিচয়পত্র সংক্রান্ত নথি সংগ্রহের জন্য একাধিক দপ্তরে চিঠি পাঠানোরও উদ্যোগ নিয়েছে দুদক।
বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান, সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খান, নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার, ওরিয়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান ওবায়দুল করিম এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের লেনদেনের তথ্য চেয়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
এছাড়া এসব শিল্পগোষ্ঠীর কর্ণধার ও তাদের পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব জব্দ বা অবরুদ্ধ করার খবরও আসে।
এর মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা প্রায় ২৫০ কোটি টাকার সম্পত্তি ক্রোক করেছে সিআইডি।
অর্থ পাচারের ক্ষেত্রে সাধারণত লেয়ারিং বা হাতবদল এবং ট্রেড বেইজড মানিলন্ডারিং (বাণিজ্যের আড়ালে অর্থপাচার) পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় বৈধ বাণিজ্যের আড়ালে অবৈধ অর্থ পাচার করা হয়, যা শনাক্ত করা বেশ কঠিন।
দুদকের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনার জটিল প্রক্রিয়ার কথা বলছিলেন।
তিনি বলেন, “এই প্রক্রিয়ার একটি অংশ হল- অভিযোগ তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থার গ্রহণের মাধ্যমে যে দেশে অর্থপাচার করা হয়েছে সেই দেশ থেকে অর্থ উদ্ধারের প্রক্রিয়া শুরু করা। গন্তব্য দেশে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ ছাড়া পাচারের অর্থ ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা কম।
“এর জন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অর্থপাচারের অভিযোগ সে দেশের আদালতে প্রমাণিত হতে হবে এবং রায়ে পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনার নিদের্শনা থাকতে হবে। এর পর যে দেশে অর্থপাচার হয়েছে সেই দেশের আইনি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মিলে উদ্যোগ নিতে হয় করে অর্থ ফিরিয়ে আনার। এই কাজের ব্যাপ্তি অনেক।”
তিনি বলেন, বিদেশে অর্থ-সম্পদ পাচারের অভিযোগ তদন্তের অংশ হিসেবে দুদক অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ের মাধ্যমে মিউচ্যুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিসট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএলএআর) পাঠিয়ে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য ও রেকর্ড সংগ্রহ করে থাকে। সে সব দেশের আইনে যে তথ্য ও কাগজ সরবরাহের বিধান রয়েছে, তারা সে সবই সরবরাহ করে থাকে।
দুদকের এ কর্মকর্তা বলেন, সমন্বিতভাবে কাজ করলে অভিযোগের পক্ষে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব এবং তখন পাচার করা অর্থও ফিরিয়ে আনা অসম্ভব নয়।
দুদকের অনুসন্ধান ও তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, অর্থ পাচারের প্রধান গন্তব্যগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও সুইজারল্যান্ড উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও ইংল্যান্ড, দুবাই, কানাডা, ভারত, মালয়েশিয়া, সাইপ্রাস, হংকংসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে সবচেয়ে বেশি অর্থ পাচার হয়েছে।
পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই, ইউনাইটেড ন্যাশনস অফিস ফর ড্রাগস অ্যান্ড ক্রাইম (ইউএনওডিসি), ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), বিশ্ব ব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সঙ্গে দুদকের বৈঠক হয়েছে।
দুদকের তথ্য অনুযায়ী, পাচার হওয়ার অর্থ উদ্ধার ও তথ্য সংগ্রহে সহায়তা চেয়ে বিভিন্ন দেশে ৭১টি চিঠি (এমএলএআর) পাঠিয়ে ২৭টির জবাব পেয়েছে দুদক।
দুদকের ১১টি অনুসন্ধান দল
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের ‘অর্থ পাচারের’ অভিযোগ অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দুদকের উপপরিচালক মো. সালাহউদ্দিনকে। তার সঙ্গে থাকা বাকি তিন সদস্য হলেন সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া, এ কে এম মর্তুজা আলী সাগর ও এস এম রাশেদুল হাসান।
এই একটি অনুসন্ধান দলই চার সদস্যের। বাকি দলগুলোর প্রত্যেকটিই তিন সদস্যের।
বসুন্ধরা গ্রুপের অভিযোগ খতিয়ে দেখার জন্য উপপরিচালক শেখ গোলাম মাওলার নেতৃত্বে গঠিত দলের সদস্যরা হলেন- সহকারী পরিচালক মো. সাজিদ-উর-রোমান ও মো. মাহমুদুল হাসান ভূঁইয়া।
বেক্সিমকো গ্রুপের অভিযোগ অনুসন্ধানের দায়িত্ব বর্তেছে উপপরিচালক মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীনের কাঁধে। দলের বাকি দুই সদস্য হলেন উপপরিচালক সাজ্জাদ হোসেন ও মিনহাজ বিন ইসলাম।
উপপরিচালক রেজাউল করিমের নেতৃত্বে সহকারী পরিচালক আল-আমিন ও এ কে এম মর্তুজা আলী সাগরকে নিয়ে গঠিত দলের দায়িত্ব জেমকন গ্রুপের অভিযোগ অনুসন্ধান।
নাবিল গ্রুপের অভিযোগ অনুসন্ধান করবে উপপরিচালক মো. মাসুদুর রহমানের নেতৃত্বে সহকারী পরিচালক আসাদুজ্জামান ও হাবিবুর রহমানকে নিয়ে গড়া দল।
নাসা গ্রুপের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে উপপরিচালক মো. রাউফুল ইসলামকে। সদস্যরা হলেন সহকারী পরিচালক সোহাকুল ইসলাম ও মো. আব্দুল মালেক।
ওরিয়ন গ্রুপের অভিযোগ অনুসন্ধানে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে উপপরিচালক মো. রাশেদুর রহমানকে। দলের সদস্যরা হলেন- মো. মেহেদী মুসা জেবিন ও খোরশেদ আলম।
এস আলম গ্রুপের অভিযোগ অনুসন্ধানে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে উপপরিচালক তাহসিন মুনাবীল হককে। দলের অন্য সদস্যরা হলেন সহকারী পরিচালক মো. ইসমাঈল ও মাহমুদুল হাসান।
সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এবং তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে উপপরিচালক মো. গুলশান আনোয়ার প্রধানকে। দলের সদস্য সহকারী পরিচালক মো. মাইনউদ্দীন ও মুহা. শোয়াইব ইবনে আলম।
সিকদার গ্রুপের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পরিচালক মো. মঞ্জুর মোর্শেদকে। সদস্য হলেন সহকারী পরিচালক মো. আশিকুর রহমান ও মো. কামিয়াব আফতাহি উন নবী।
সামিট গ্রুপের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে উপপরিচালক আলমগীর হোসেনকে। দলের বাকি সদস্যরা হলেন সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ জিন্নাতুল ইসলাম ও মো. নাসরুল্লাহ হোসাইন।
মামলা ও অনুসন্ধান
যে সব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ‘অর্থ পাচারের’ অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদক মাঠে নেমেছে তাদের সবাই গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সুবিধাভোগী। কেউ কেউ আবার সরকারের মন্ত্রী ও মন্ত্রী পদমর্যাদায় দায়িত্বে ছিলেন।
এরই মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করেছে দুদক।
চট্টগ্রামভিত্তিক আলোচিত শিল্প গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল ইসলামের ছেলে আহসানুল আলমের বিরুদ্ধে ইসলামী ব্যাংকের হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুটি মামলা করেছে।
পণ্য রপ্তানির আড়ালে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে বেক্সিমকো গ্রুপের কর্ণধার সালমান এফ রহমানসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে ১৭টি মামলা করেছে সিআইডি।
সালমান এফ রহমান ও তার মালিকানাধীন বেক্সিমকো গ্রুপের বিভিন্ন কোম্পানির নামে ও বেনামে প্রায় ৩৩ হাজার ৪৭০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে বিদেশে পাচার এবং অন্যান্য আর্থিক অনিয়মের অভিযোগের অনুসন্ধানও চলছে।
ইতোমধ্যে সালমান ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা প্রায় ২৫০ কোটি টাকার সম্পত্তি ক্রোক করার কথা জানিয়েছে সিআইডি।
বসুন্ধরা গ্রুপের বিরুদ্ধে দেড় লাখ কোটি টাকার জমি দখল ও অর্থ পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে সিআইডি।
পোশাক রপ্তানির আড়ালে প্রায় ৩০ লাখ ডলার যুক্তরাষ্ট্রে পাচারের অভিযোগে নাসা গ্রুপের কর্ণধার নজরুল ইসলাম মজুমদারের বিরুদ্ধে সিআিইডি অনুসন্ধান শুরু করেছে।
এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম (এস আলম) ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানে নাম সিআইডির দাবি, প্রাথমিকভাবে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচারের প্রমাণ পেয়েছে তারা।
সিআইডি বলছে, ২০১৬ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে সাবেক ভূমি মন্ত্রী সাইফুজ্জামান যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও আরব আমিরাতে ৬২০টি বাড়ি কেনেন, যার বাজারমূল্য প্রায় ৪৮ কোটি ডলার।
“ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে সাইফুজ্জামান চৌধুরী ২০১০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত নিজের ও স্ত্রী রুকমিলা জামানের নামে যুক্তরাজ্য ও দুবাইয়ে আটটি কোম্পানি খোলেন, যার স্থায়ী ও চলতি সম্পদের মূল্য ২১ কোটি ৭২ লাখ ৬০ হাজার ডলার।”
তারা বলছে, “বাংলাদেশ থেকে পাচার করা অর্থ দিয়েই সাবেক ভূমি মন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে এসব কোম্পানি খুলে বিনিয়োগ করেছেন।”
সিকদার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রন হক সিকদার ও তার ভাই রিক হক সিকদারের বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগে দুটি মামলা করেছে দুদক।
ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে রন হক প্রায় ৫০ কোটি (২০১৭ সালে ডলারের বিপরীতে টাকার মান অনুযায়ী) কোটি টাকা ও রিক হক প্রায় সাড়ে ২১ কোটি টাকা পাচার করেছেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে।