ইভ্যালির রাসেল ও শামীমার ২ বছরের সাজা
বিশ্বাস ভঙ্গ ও প্রতারণার এক মামলায় ই-কমার্স কোম্পানি ইভ্যালির প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ রাসেল ও তার স্ত্রী কোম্পানির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনকে দুই বছর করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
ঢাকার মহানগর হাকিম পার্থ ভদ্র বুধবার এ রায় ঘোষণা করেন। কারাদণ্ডের পাশাপাশি দুই আসামিকে ১০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন তিনি।
রায়ের সময় রাসেল বা শামীমা আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। তাদের ‘পলাতক’ দেখিয়ে বিচারক সাজা পরোয়ানাসহ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন বলে বাদীপক্ষের আইনজীবী তৌসিফ মাহমুদ জানান।
২০১৮ সালের ডিসেম্বরে যাত্রা শুরুর পর গাড়ি, মোটরসাইকেল, আসবাবপত্র, স্মার্ট টিভি, ফ্রিজ, এসি, ওয়াশিং মেশিনের মত পণ্য অর্ধেক দামে বিক্রির বিজ্ঞাপন দিয়ে সাড়া ফেলে অনলাইন মার্কেট প্লেস ইভ্যালি।
তাদের চটকদার অফারের ‘প্রলোভনে’ অনেকেই বিপুল অংকের টাকা অগ্রিম দিয়ে পণ্যের অর্ডার করেছিলেন পরে বেশি দামে বিক্রি করে ভালো লাভ করার আশায়। কিন্তু মাসের পর মাস অপেক্ষা করেও তাদের অনেকে পণ্য বুঝে পাননি; ইভ্যালি অগ্রিম হিসেবে নেওয়া টাকাও ফেরত দেয়নি।
এক পর্যায়ে ক্রেতা ও পণ্য সরবরাহকারীদের কাছে ৫৪৩ কোটি টাকার দায়ে পড়ে ইভ্যালি। এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনার মধ্যে ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে ইভ্যালিসহ আরও বেশ কিছু ই কমার্স কোম্পানির বিরুদ্ধে প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে বিক্ষোভে নামে গ্রাহকরা।
সে সময় রাসেল ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে কয়েকশ মামলা হয়; এ মামলা তারই একটি। তৌফিক মাহমুদ নামের এক গ্রাহক ২০২৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি আদালতে এই মামলা দায়ের করেন।
মামলার বিবরণে বলা হয়, চমকপ্রদ বিজ্ঞাপনে ‘আকৃষ্ট’ হয়ে তৌফিক মাহমুদ ২০২১ সালের ২০ মার্চ ইভ্যালি থেকে ইয়ামাহা বাইক অর্ডার করেন। মূল্য বাবদ দুই লাখ ৪৫ হাজার টাকাও পরিশোধ করেন।
পরে ৩ এপ্রিল তিনি আরও দুটি বাইক অর্ডার করেন। দাম বাবদ ৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা পরিশোধ করেন। কিন্তু ইভ্যালি কর্তৃপক্ষ প্রতিশ্রুত ৪৫ দিনের মধ্যে বাইক তিনটি সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়।
তৌফিক মাহমুদ পরে ইভ্যালির ধানমন্ডি অফিসে যোগাযোগ করেন। কর্তৃপক্ষ তাকে দুটি চেক দেয়। তবে ব্যাংক হিসেবে পর্যাপ্ত পরিমাণ অর্থ না থাকায় চেকটি নির্ধারিত তারিখে ব্যাংকে জমা না দিতে অনুরোধ করেন।
টাকা ফেরত না পেয়ে তিনি লিগ্যাল নোটিস পাঠান। তাতেও কাজ না হওয়ায় তিনি আদালতে গিয়ে মামলা করেন রাসেল ও শামীমার বিরুদ্ধে।
এক গ্রাহকের করা মামলায় ২০২১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর রাসেল ও তার স্ত্রী শামীমা নাসরিনকে ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে গ্রেপ্তার করেছিল র্যাব। এরপর তাদের বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়; নেওয়া হয়েছিল রিমান্ডেও।
ইভ্যালির পুনর্গঠন হিসাব-নিকাশের সুবিধার্থে তার স্ত্রী শামীমাকে এক বছরের মাথায় শর্ত সাপেক্ষে জামিন দেয় আদালত। পরে রাসেলও জামিনে মুক্তি পান।
এর আগে ২০২৪ সালের ২ জুন চেক প্রতারণার এক মামলায় রাসেল ও শামীমাকে এক বছর করে কারাদণ্ড দেয় চট্টগ্রামের একটি আদালত।