‘এইচআরডব্লিউ’র প্রতিবেদনে হাসিনা গুম-খুনের সরাসরি নির্দেশদাতা’
জুলাই-অগাস্টের গণআন্দোলন নিয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দেওয়া (এইচআরডব্লিউ) এক প্রতিবেদনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘গুম-খুনের সরাসরি নির্দেশদাতা বলা হয়েছে’ বলে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর জানিয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে মঙ্গলবার এইচআরডব্লিউর একটি প্রতিনিধি দল সাক্ষাত করে প্রতিবেদনটি হস্তান্তর করেছে বলে তার দপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
“এইচআরডব্লিউর সে প্রতিবেদন অনুযায়ী, গুমের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তারা সংস্থাটিকে বলেছেন- শেখ হাসিনা ও তার সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নির্জন বন্দিত্বের বিষয়ে জানতেন। কিছু ক্ষেত্রে হাসিনা সরাসরি গুম ও হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন।”
তুমুল গণআন্দোলনে ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রিত্ব ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে সেখানেই থাকছেন।
জুলাই-অগাস্টের আন্দোলন দমাতে ‘গণহত্যার’ একটি অভিযোগে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তাকে ফেরত পাঠানোর জন্য ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে ভারতকে আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানানো হয়েছে।
ট্রাইব্যুনালে এ পর্যন্ত অর্ধশতাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে শেখ হাসিনা এবং তার সরকারের মন্ত্রী, এমপি ও আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে অন্তত দুটি গুমের অভিযোগ রয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত গুম-সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন গত ১৫ ডিসেম্বর যে প্রতিবেদন দিয়েছে, সেখানে গত ১৫ বছরে সংঘটিত বিভিন্ন গুমের ঘটনায় ‘নির্দেশদাতা’ হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়ার কথা বলা হয়েছে।
এইচআরডব্লিউ তার প্রতিবেদনে র্যাব বিলুপ্তির সুপারিশ ছাড়াও শেখ হাসিনার সময়ে গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার সঙ্গে জড়িত এই বাহিনীর কর্মকর্তাদের জবাবদিহির আওতায় আনার কথা বলেছে।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতের সময় মানবাধিকার সংস্থাটির এশিয়া পরিচালক এলেইন পিয়ার্সন বলেছেন, “শেখ হাসিনার ১৬ বছরের শাসনে নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর ‘রাজনীতিকরণ’ হয়েছিল এবং তারা ‘শাসক দলের ক্যাডার’ হিসেবে কাজ করে।
“এসব বাহিনীর পদ্ধতিগত সংস্কার প্রয়োজন।”
প্রতিনিধি দলটি সংস্কার কার্যক্রম ও দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নয়নে অন্তর্বর্তী সরকারের চেষ্টার প্রশংসা করেছে।
পিয়ার্সন বলেন, “জুলাই-অগাস্টের আন্দোলনের সময় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা ছিল মূলনীতি। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ এখন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মানবাধিকারের গুরুত্ব বুঝতে পারছে।”
প্রধান উপদেষ্টা শেখ হাসিনার শাসনকালে এইচআরডব্লিউ’র ভূমিকার প্রশংসা করে বলেন, গত ১৬ বছরের শাসনামলের অপরাধের বিস্তারিত তুলে ধরেছে মানবাধিকার সংস্থাটির প্রতিবেদনগুলো।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, র্যাব তাদের অপরাধের জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়েছে, তবে বাহিনীর যেসব কর্মকর্তা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুমের জন্য দায়ী, তাদের বিচারের মুখোমুখি করে শাস্তি দেওয়া হবে।
“আমরা অবাধ ও স্বচ্ছতার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা সব সংস্কার সুপারিশ প্রকাশ করছি যাতে জনগণ কাঙ্ক্ষিত সংস্কারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। আপনারা যেমন বলেছেন, ১৫ বছরের নিপীড়ন ও অপরাধের প্রভাব কাটিয়ে ওঠা একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ।”
এইচআরডব্লিউ বলছে, সংস্কারগুলো দৃঢ়ভাবে বাস্তবায়ন করা উচিত ও নিরাপত্তা বাহিনীকে যথাযথ তদারকির আওতায় আনা উচিত।
সংস্থাটির এশিয়া প্রধান পিয়ার্সন বলেন, তার সফরের সময় বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের প্রধান ও রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রধান উপদেষ্টার উচ্চ প্রতিনিধির সঙ্গে তিনি সাক্ষাৎ করেছেন।
রাখাইনে নিজভূমিতে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের জন্য একটি নিরাপদ অঞ্চল তৈরির আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টা। জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও প্রধান বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি এই নিরাপদ অঞ্চলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।