বুধবার ২৯ জানুয়ারি ২০২৫, মাঘ ১৬ ১৪৩১, ২৯ রজব ১৪৪৬

ব্রেকিং

আড়তের দখল নিয়ে ছাত্রদল-স্বেচ্ছাসেবক দলের সংঘর্ষ-গুলি, আহত ৩০ ফের ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের এবতেদায়ী মাদ্রাসা জাতীয়করণ হচ্ছে গাছ কাটার আগে অনুমতি নিতে হবে: হাই কোর্ট দুর্বল ব্যাংক থেকে টাকা ফেরত পাবেন আমানতকারীরা: গভর্নর যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্টে’ যোগ দেবেন জায়মা রহমান বৈঠক থেকে বেরিয়ে গেলেন রানিং স্টাফ নেতারা, সিদ্ধান্ত হয়নি রেলের কর্মচারীদের `যৌক্তিক দাবি` আগেই মেনে নেওয়া হয়েছে: অর্থ উপদেষ্টা ৭ কলেজের অচলাবস্থা কাটবে কী করে, মাথায় আসছে না শিক্ষা উপদেষ্টার ইসির স্বাধীনতার গ্যারান্টি চাইলেন সিইসি সারাদেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ, ভোগান্তিতে যাত্রীরা গাজায় ফিরেছে ২ লাখ ফিলিস্তিনি

জাতীয়

জাফর ইকবালরা ইভিএমে কেন সায় দিয়েছিলেন, খতিয়ে দেখবে দুদক

 প্রকাশিত: ১৯:২২, ২৭ জানুয়ারি ২০২৫

জাফর ইকবালরা ইভিএমে কেন সায় দিয়েছিলেন, খতিয়ে দেখবে দুদক

‘নিম্নমানের ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন’ (ইভিএম) কিনে অর্থ অপচয়ের অভিযোগ ওঠার পর মুহম্মদ জাফর ইকবালের মত বিশেষজ্ঞরা কেন আগে এ মেশিনগুলোকে ভোটের জন্য যথাযথ মনে করেছিলেন, সেটি খতিয়ে দেখার কথা বলছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

নির্বাচন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে থাকা ইভিএমের কর্মক্ষমতা দৈবচয়নের ভিত্তিতে যাচাই-বাছাইয়ের পর সোমবার সাংবাদিকদের এ তথ্য দেন দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন।

তিনি বলেন, “দেশের প্রথিতযশা বিশেষজ্ঞ মুহম্মদ জাফর ইকবালের মত ব্যক্তিগণ কোন ভিত্তিতে মেশিনগুলোকে যথাযথ মনে করেছিলেন, সেটিও কমিশনের দৃষ্টিগোচরে আনা আবশ্যক মর্মে প্রতীয়মান হয়েছে।”

‘নিম্নমানের ইভিএম’ কিনে রাষ্ট্রের অর্থ অপচয়ের অভিযোগে রোববার ‘এনফোর্সমেন্ট’ অভিযান চালায় দুদক। সেসময় সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, মেশিনগুলো নির্বাচন কমিশন প্রধান কার্যালয়, ১০টি আঞ্চলিক কার্যালয় ও বিএমটিএফে সংরক্ষিত আছে।

অভিযানে ১ হাজার ৫৯৯টি মেশিনের কোনো হদিস না পাওয়ার কথা তুলে ধরে আক্তার হোসেন বলেন, মেশিনগুলো অযত্ন-অবহেলায় পরে রয়েছে। নির্বাচন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে থাকা ৬১৮টি মেশিনের মধ্যে দৈব চয়নের ভিত্তিতে কয়েকটি মেশিনের ‘অপারেশনাল ক্যাপাসিটি’ যাচাই করা হয়। এতে মেশিনগুলোতে ত্রুটি দেখা যায়, যা নিম্নমানের মেশিন কেনার ইঙ্গিত দেয়। দুদক টিমের সঙ্গে উপস্থিত বিশেষজ্ঞরাও মেশিনগুলো ‘মানসম্মত নয়’ বলে মতামত দেন।

ফলে কম্পিউটার বিজ্ঞানের শিক্ষক জাফর ইকবাল ও অন্য বিশেষজ্ঞরা কেন আগে ইভিএমকে ভোটের জন্য যথাযথ মনে করেছিলেন, সেটিই এখন খতিয়ে দেখার কথা বলছে দুদক।

দুদক কর্মকর্তা আক্তার হোসেন বলেন, রোববারের অভিযানে সংগৃহীত অভিযোগ সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র পর্যালোচনার পর ‘এনফোর্সমেন্ট টিম’ পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল করবে।

বাংলাদেশের নির্বাচনে ভোটগ্রহণে এক যুগ আগে ইভিএম ব্যবহারের শুরু থেকেই রাজনৈতিক অঙ্গনে তা নিয়ে চলছে বিতর্ক। আওয়ামী লীগ সরকার ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে থাকলেও তার ঘোর বিরোধী ছিল বিএনপি। দলটির নেতাদের ভাষ্য ছিল, যন্ত্রের মাধ্যমে ভোটগ্রহণে ব্যাপক কারচুপির সুযোগ রয়েছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বিভিন্ন নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার হলেও ২০২২ সালে দায়িত্ব নেওয়া কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সম্ভাব্যতা যাচাই করে।

ওই বছরের মে মাসে অধ্যাপক জাফর ইকবাল ও বুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক এ কায়কোবাদসহ একদল প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞকে ইভিএম দেখিয়ে ভোটগ্রহণে তা ব্যবহারের সম্মতি নেয় ইসি।

ইভিএম মেশিনের কার্যক্রম দেখে ইসির সঙ্গে ২০২২ সালের ২৫ মে মতবিনিময়ের পর ভোটে মেশিনগুলো ব্যবহারের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন জাফর ইকবাল ও কায়কোবাদ।

সেদিন জাফর ইকবাল বলেছিলেন, “ইভিএম নিয়ে ডেমনস্ট্রেশন পুরোটাই দেখেছি। তার ভেতরের খুঁটিনাটি, টেকনিক্যাল বিষয় যা আছে, তাও জেনে নিয়েছি। সবশেষ আমাদের জন্য রাখা মেশিনটি খুলে দেখেছি। ব্যক্তিগতভাবে আমি কনভিন্সড হয়েছি। অত্যন্ত চমৎকার মেশিন।”

ইভিএমের বিরোধিতাকারী রাজনৈতিক দলকেও যন্ত্রটি ব্যবহারের পক্ষে সায় দেওয়ার অনুরোধ করেন তিনি।

আর বুয়েটের শিক্ষক কায়কোবাদ ইভিএমের প্রতি আস্থা রাখার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বলেন, “এর প্রতিটি অংশ এমনভাবে কাস্টমাইজড, একজন ইচ্ছে করলে সেখানে পরিবর্তন করতে পারবে না।

“কোনো মেশিনকে শতভাগ বিশ্বাস করা যাবে না। তবে এখানে যেটা করা হয়েছে মেশিন লেভেলে আর কোনো কাজ নেই, আর ম্যানিপুলেশনের কোনো সুযোগ নেই।”

তাদের এই মতের ওপর আস্থা রাখতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান তখনকার সিইসি হাবিবুল আউয়াল।

এই কমিশন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অন্তত দেড়শ আসনে ইভিএমে ভোট করার পরিকল্পনা করে। তবে দুই লাখ নতুন ইভিএম কেনার প্রস্তাবে সরকার সায় না দেওয়ায় ইভিএম ব্যবহারের পরিকল্পনা থেকে সরে আসে।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আট মাসের মাথায় গণআন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ও অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর আগের সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। একইভাবে ‘নিম্নমানের ইভিএম মেশিন কিনে অর্থ অপচয়ের অভিযোগ’ জমা পড়েছে সংস্থাটিতে। সেটিই এখন খতিয়ে দেখছে দুদক।

ইভিএম যাত্রার দেড় দশক

>> ২০১০ সালে ইভিএম চালুর পর স্থানীয় নির্বাচনেই তা ব্যবহার হচ্ছিল। এটিএম শামসুল হুদা কমিশন সিটি করপোরেশনে বড় পরিসরে ব্যবহার করেছিল। কিন্তু সংসদ নির্বাচনে নিতে পারেনি।

>> ২০১২ সালে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন ইসি আগের ইভিএমকে অনেকটা অকেজো অবস্থায় ফেলে গিয়েছিল। তখন সিটি নির্বাচনেও ইভিএম ব্যবহার হোঁচট খায়।

>> এরপর কে এম নূরুল হুদার কমিশন নতুন করে ইভিএম নিয়ে এগোয়। ৩ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে দেড় লাখ ইভিএম কেনার প্রকল্প অনুমোদন পায়। আইন সংশোধন করে ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে ছয়টি সংসদীয় আসনে ইভিএম ব্যবহারও করা হয়।

>> এসব যন্ত্রের আয়ুষ্কাল ১০ বছর ধরা হলেও পাঁচ বছরের মাথায় অধিকাংশ ইভিএম অকেজো হয়ে যায়। সেগুলো মেরামতে বড় অঙ্কের অর্থের সংস্থান আর পরে হয়নি।

>> এর মধ্যেও কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন স্থানীয় সরকারের সিংহ ভাগ নির্বাচন আয়োজন করে ইভিএমে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অন্তত দেড়শ আসনে ইভিএমে ভোট করার পরিকল্পনা ছিল ইসির।

>> তবে কোভিড পরবর্তী সময়ে আর্থিক সংকটের মধ্যে আরও দুই লাখ নতুন ইভিএম কেনার প্রস্তাবে সরকার সায় দেয়নি। ফলে দ্বাদশ সংসদে ইভিএম ব্যবহারের পরিকল্পনা থেকে সরে আসে ইসি।