সাত কলেজ সংকট: ধৈর্য ধরার আহ্বান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় সব পক্ষকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
আলোচনার মাধ্যমে উদ্ভূত সমস্যার ‘সমাধান আসবে’ বলেও মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের এই উপদেষ্টা।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “আমার মনে হয় আলোচনার মাধ্যমে এটার সমাধান পেয়ে যেতে পারি। এক্ষেত্রে সবারই ধৈর্য ধরতে হবে। আমরা যদি অধৈর্য হয়ে যাই, কোনো কিছুরই সমস্যার সমাধান হবে না। সবারই ধৈর্যের সাথে এগুলো মোকাবেলা করতে হবে।"
মাঠের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদেরও ধৈর্য নিয়ে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
“তারা ধৈর্যের সাথে জিনিসটা মোকাবিলা করবে এবং ছাত্র ভাইদেরও অনুরোধ করব প্রত্যেকটা জিনিস ধৈর্যের সাথে আলোচনার মাধ্যমে যেটা সমাধান হয় ওদিকে যেতে হবে।”
সোমবার সচিবালয়ে নিজের মন্ত্রণালয়ের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
আগের রাত ১১টার দিকে রাজধানীর নীলক্ষেত এলাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে শুরু হওয়া সংঘর্ষ চলে গভীর রাত পর্যন্ত।
শিক্ষার্থীদের দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে পরিস্থিতি সামাল দিতে সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ার সেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে পুলিশ। একপর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের সঙ্গে যোগ দেয় চার প্লাটুন বিজিবি।
প্রোভিসি মামুনের পদত্যাগসহ ৬ দাবি সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের
ঢাকায় রাতের সংঘর্ষের পর সতর্ক অবস্থানে পুলিশ
শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের প্রসঙ্গ তুলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “ঘটনাটা তো স্বরাষ্ট্রের বিষয় নয়। এ ঘটনাটা হল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের। এখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সাত কলেজেরে ছাত্রদের একটা বাকবিতণ্ডা হয়েছে। এটা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাবজেক্ট। বাট যেহেতু ল’ এ্যান্ড অর্ডার সিচুয়েশন চলে এলে আমরা কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইনভল্ভ হয়ে যাই। ছোটোখাটো ঘটনা থেকে এ ঘটনার সূত্রপাত।"
এ সময় বিক্ষোভকারীদের রাস্তা বন্ধ করে রাজধানীবাসীর জন্য দুর্ভোগ তৈরি না করতেও অনুরোধ জানিয়েছেন জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
আন্দোলন-বিক্ষোভের জন্য কয়েকি জায়গাও দেখিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের মাঠ আছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান রয়েছে, এসব জায়গায় প্রতিবাদ করলে সবচেয়ে ভালো হয়। তা না হলে যানজটে জনগণকে দুর্ভোগে পড়তে হয়। রোগীদেরও কষ্ট হয়। শাহবাগে দুটো হাসপাতাল, সবচেয়ে বেশি ঝামেলায় পড়ে।"
কোনো দাবি থাকলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করে সমাধান করার পথও বাতলে দিয়েছেন তিনি।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “প্রত্যেকটা জিনিস আলোচনার মধ্যে সলভ হোক তা চাই। কতগুলো দাবি যৌক্তিক থাকতে পারে। আলোচনার মাধ্যমে যে দাবি থাক না কেন সমাধান করতে হবে।”
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি মামুন আহমেদের পদত্যাগ এবং স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপরেখা প্রণয়নসহ ছয় দফা দাবি পূরণে চার ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।
প্রোভিসি মামুন বিকাল ৪টার মধ্যে ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগ না করলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে তারা ঘোষণা দিয়েছেন।
রোববার সন্ধ্যায় পাঁচ দফা দাবি নিয়ে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি মামুন আহমেদের সঙ্গে আলোচনা করতে যান। সেখানে তিনি ‘দুর্ব্যবহার’ করেন বলে পরে অভিযোগ করেন আন্দোলনকারী সাত কলেজের শিক্ষাথীরা।
ক্যাম্পাসে ৭ কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ধাওয়া, পাল্টা-ধাওয়া
এর প্রতিবাদে রাতে শাহবাগ, সায়েন্স ল্যাব ও টেকিনিক্যাল মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। পরে সায়েন্সল্যাব মোড়ের অবরোধ থেকে মিছিল নিয়ে প্রোভিসি মামুন আহমেদের বাসভবন অভিমুখে রওনা হন শিক্ষার্থীদের একটি অংশ।
মিছিলটি নীলক্ষেত মোড় হয়ে ক্যাম্পাসের মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণের সামনে এলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মুখোমুখি অবস্থানে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। আর সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পক্ষে অবস্থান নেয় বলে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ।
পুলিশের বিরুদ্ধে ‘পক্ষপাতের’ অভিযোগ তুলে তারা হামলায় জড়িত সবার বিচারের দাবিতে সোমবার সকাল ৯টা থেকে নিজ নিজ কলেজের সামনের সড়ক অবরোধ করার ঘোষণা দেন।
এমন পরিস্থিতিতে সোমবার ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত রাখার ঘোষণা দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের সোমবারের সব চূড়ান্ত পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাউন্ড গ্রেনেড, বিজিবি মোতায়েন
এ পরিস্থিতিতে সোমবার সকাল থেকে শাহবাগ, নীলক্ষেত ও নিউ মার্কেট এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। প্রস্তুত রাখা হয় জলকামান, সাঁজোয়া যান ও প্রিজনভ্যন।