সোমবার ২৭ জানুয়ারি ২০২৫, মাঘ ১৪ ১৪৩১, ২৭ রজব ১৪৪৬

ব্রেকিং

জাফর ইকবালরা ইভিএমে কেন সায় দিয়েছিলেন, খতিয়ে দেখবে দুদক ন্যায় বিচারের স্বার্থে ভারত হাসিনাকে ফেরত পাঠাবে, আশা ক্যাডম্যানে পুতুলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার চিঠি ‘এখনও পায়নি’ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় খারাপ নির্বাচনের জন্য দেশের ভাবমূর্তি ভূলুণ্ঠিত হয়েছে: ইসি সানাউল ৮১২ কোটি টাকা আত্মসাৎ: তারিক সিদ্দিকসহ ১৯ জনের নামে চার মামলা ৪৪তম বিসিএসের ৯০০ প্রার্থীর মৌখিক পরীক্ষার সূচি প্রকাশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিল সাত কলেজ সংকট: ধৈর্য ধরার আহ্বান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার ১০ বিষয়ে একমত বিএনপি-ইসলামী আন্দোলন সুরের লকারে এক কেজি স্বর্ণ, দেড় লাখের বেশি ডলার টেবিলের নিচ দিয়ে টাকা দেওয়ার চেয়ে বাড়তি ভ্যাট ভালো: অর্থ উপদেষ্টা সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল ২ মার্চ আনন্দ, উত্তেজনা নিয়ে গাজার উত্তরাঞ্চলে ফিরছেন ফিলিস্তিনিরা

জাতীয়

ঢাবি-ঢাকা কলেজ

৩ ঘণ্টা পর শান্ত পরিস্থিতি, সোমবার ঢাবির ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত

 প্রকাশিত: ০৮:৫৪, ২৭ জানুয়ারি ২০২৫

৩ ঘণ্টা পর শান্ত পরিস্থিতি, সোমবার ঢাবির ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ও ঢাকা কলেজের মধ্যকার উত্তেজনা দীর্ঘ তিন ঘণ্টা পর শান্ত হয়েছে। শিক্ষার্থীরা ধীরে ধীরে নিজেদের হলে ফিরে যাচ্ছেন।

তবে এখনো কিছু শিক্ষার্থীকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে অবস্থান করতে দেখা যাচ্ছে।

রোববার (২৬ জানুয়ারি) রাত আড়াইটা নাগাদ দেখা যায়, রাজধানীর মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণের নিচে ঢাবির একদল শিক্ষার্থী বিচ্ছিন্নভাবে অবস্থান করছেন। অধিকাংশ শিক্ষার্থী হলে ফিরে যেতে শুরু করেছেন।

এদিকে নীলক্ষেত বইয়ের মার্কেটের পাশের রাস্তায় পুলিশ ও বিজিবির সদস্যরা অবস্থান নিয়েছেন। অন্যপাশে এখনো ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের একটি অংশ অবস্থান করছেন।  

শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিশৃঙ্খল পরিবেশের মুখে সোমবার (২৭ জানুয়ারি) ঢাবির ক্লাস ও পরীক্ষার কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।  

বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

ধাওয়া-পালটা ধাওয়ার ঘটনার পর অধিভুক্ত সাত কলেজের সব পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়েছে।

ঢাবির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. বাহালুল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

কী ঘটেছিল?

ঢাবির উপ-উপাচার্য ড. মামুন আহমেদ ঢাকা কলেজ একদল শিক্ষার্থীর সঙ্গে অসদাচরণ করেছেন, এমন অভিযোগে শিক্ষার্থীরা উপ-উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাওয়ের ঘোষণা দিয়ে ঢাবি অভিমুখে রওনা দেন। খবর পেয়ে ঢাবির একদল শিক্ষার্থী মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণ সংলগ্ন এ এফ রহমান হলের সামনে লাঠিসোটা নিয়ে অবস্থান নেন। এরমধ্যে পুলিশ তোরণের একদিকের সড়কে ব্যারিকেড দেয়।

ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা তোরণের বাইরে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। তারা অধ্যাপক মামুনকে তার অসদাচরণের জন্য শিক্ষার্থীদের কাছে এসে ক্ষমা চাইতে বলেন। এদিকে ঢাবির শিক্ষার্থীরা ১শ মিটারের মধ্যেই অবস্থান নেন। দুই পক্ষই পরস্পরকে ভুয়া স্লোগান দেন। এ সময় সমন্বয়ক আব্দুল কাদের, হাসিব আল ইসলাম, সহসমন্বয়ক মোবাশ্বিরুজ্জামান তাদের থামানোর চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে ঢাবির শিক্ষার্থীরা মানবপ্রাচীর ভেঙে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের ধাওয়া করেন। ধাওয়ায় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা নীলক্ষেত পার হয়ে নিউমার্কেটের চার নাম্বার গেটের দিকে চলে যায়। পরে পুনরায় তারা ফিরে এসে ঢাবির শিক্ষার্থীদের ধাওয়া করেন। পুলিশ নীলক্ষেত মোড়ে অবস্থান নিয়ে উভয়পক্ষকে শান্ত করার চেষ্টা করে।

এরপর বেশ কিছুক্ষণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধাওয়া-পালটা ধাওয়া চলতে থাকে। একপক্ষ অপরপক্ষকে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ শুরুতে সাউন্ড গ্রেনেড এবং পরে টিয়ারশেল ছোড়ে। রাত সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশের সংখ্যা বাড়ানো হয়। এদিকে শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি অবস্থানের কারণে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে নীলক্ষেত ও নিউমার্কেট এলাকায় পুলিশের সহায়তায় চার প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করা হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের মধ্যকার উত্তপ্ত পরিস্থিতির ফলে নীলক্ষেত মোড় ও সায়েন্সল্যাব মোড়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে অনেক যানবাহনই মোড় ঘুরিয়ে বিকল্প পথে যাত্রা শুরু করে।

রাত ১২টার পর ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরাও রাস্তায় নেমে আসেন। তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দেন। এ সময় তারা পদযাত্রা করে নীলক্ষেত মোড়ে যেতে চাইলে সমন্বয়ক আব্দুল কাদের, হাসিব আল ইসলাম, ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হল নেতা সাকিব বিশ্বাসসহ একাধিক শিক্ষার্থী তাদের শান্ত রাখার চেষ্টা করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ের সহকারী প্রক্টর রফিকুল ইসলামসহ একাধিক শিক্ষক ও প্রক্টরিয়াল বডির একাধিক সদস্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেন। এরপর পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়।

রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ ঘটনাস্থলে আসেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার জন্য যান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আলোচনা করতে পারেননি। শেষে ফিরে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে ফিরতে অনুরোধ করেন। এ সময় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দিয়ে নিউমার্কেট এলাকা থেকে তোরণের দিকে নিয়ে আসেন।

সর্বশেষ বিজিবি ও পুলিশ সদস্যরা নীলক্ষেত ও মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণের মাঝখানে অবস্থান করেন এবং এই এলাকায় বৈদ্যুতিক বাতি নিভিয়ে দেন। এরপর থেকেই শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থল ছেড়ে বাসস্থানে ফিরে যেতে শুরু করেন।

ঘটনার সূত্রপাত যেভাবে

রোববার দুপুরে ঢাকা কলেজের একটি দল পাঁচ দফা দাবি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মামুন আহমেদের কাছে আসেন। এ সময় একদল শিক্ষার্থী হুড়মুড় করে তার কার্যালয়ে ঢুকে পড়লে মেজাজ হারিয়ে ফেলেন মামুন আহমেদ।

ঘটনার একটি ভিডিও ফুটেজ থেকে দেখা যায়, মামুন আহমেদ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য বলতে থাকেন, ইউ ক্যান নট ডু মবিং, আমি তোমাদের বলেছি দুইজন আসতে, কেন বলেছি? আমি তোমাদের কথা শুনব। বাট তুমি দলবল নিয়ে আমার রুমে ঢুকেছো। তুমি বলছো আমি অস্বীকার করছি! প্লিজ!

অন্যপাশে এক শিক্ষার্থী বলেন, দুইজন তো সব কথা বলতে পারবে না। তখন তিনি বলেন, কেন বলতে পারবে না, তোমার বক্তব্য প্রতিনিধি হিসেবে বলবা। শিক্ষার্থী বলেন, ওরা মানবে না স্যার। তখন অধ্যাপক মামুন বলেন, মানবে না, দ্যাটস নট মাই বিজনেস, ওকে। ’ তখন এক ছাত্রী বলেন, আপনি এত এগ্রেসিভ হয়ে যাচ্ছেন কেন? তখন স্যার বলেন, এগ্রেসিভ হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। ’

তখন ছাত্রীটি বলতে থাকেন, ‘আপনি যেভাবে এগ্রেসিভ হয়ে গেলেন, এটা কিন্তু গ্রহণযোগ্য আচরণ নয়। তখন স্যার বলেন, ‘অবশ্যই এটা গ্রহণযোগ্য আচরণ। প্লিজ স্যরি, তোমার কথা শুনব না। ’ তোমার কথা বারবার শোনার জন্য এখানে বসিনি। ’

একপর্যায়ে তিনি চেয়ার থেকে উঠে এগিয়ে আসেন। অন্যদিকে ছাত্রী বলতে থাকেন, ‘এটা কোনো কালচার হলো স্যার, আপনি বলছেন আমরা মবিং করছি। আমাদের কথা শোনা তো আপনার দায়িত্ব। ’ এরপর শিক্ষার্থীরা ফিরে গিয়ে মামুন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে সায়েন্সল্যাব মোড় অবরোধ করেন। সেখানে তারা পাঁচ দফা দাবি দেন।

এদিকে উল্লেখিত ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ড. মামুন আহমেদ। তিনি বলেন, গতকাল সন্ধ্যায় সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমার অফিসে আলোচনাকে কেন্দ্র করে রাতে যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে, তা দুঃখজনক। এতে আমি গভীরভাবে মর্মাহত। আমি বিশ্বাস করি, সুষ্ঠু পরিবেশে পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে এই ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটবে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে তা প্রশমিত করার জন্য সব পক্ষকে ধৈর্যধারণ করার জন্য আমি আহ্বান করছি।

তৃতীয়পক্ষ যেন সুযোগ নিতে না পারে: ঢাবি উপাচার্য

এদিকে এ ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমদ খান আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। এই ঘটনায় তিনি গভীরভাবে মর্মাহত।

গণমাধ্যমকে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি ধৈর্যধারণ এবং সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, বর্তমানে দেশ এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। এমন অবস্থায় আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকা একান্তভাবে জরুরি। কোনোভাবেই তৃতীয়পক্ষ যাতে সুযোগ নিতে না পারে, সেই ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।

উপাচার্য বলেন, আজ ২৭ জানুয়ারি অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় শিক্ষার্থীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করা হবে। যেসব বিষয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন, সেগুলো আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

এ সংক্রান্ত অপরাপর বিষয় সরকার কর্তৃক গঠিত কমিটির নজরে এনে তা সমাধানের ব্যাপারে সহযোগিতা কামনা করা হবে।

পথচারীসহ সাতজন আহত

এদিকে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়ায় পথচারীসহ সাতজন আহত হয়েছেন। আহত সাতজন হলেন, ইরফান (২০), পথচারী উজ্জ্বল (৩২), আশরাফ (২০), মেহেদি (২৩), ফয়সাল আহমেদ (২২), সাদ (২২) ও রিপন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) জরুরি বিভাগের একাধিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

সূত্রের দাবি, আহতদের মধ্যে কে কোনো কলেজের সেটা এখনো জানা যায়নি।  চিকিৎসকরা আহতদের চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন। উজ্জ্বল নামের এক শিক্ষার্থীকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হলে তার পরিবারের সদস্যরা আবার তাকে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন। বর্তমানে তিনিও চিকিৎসাধীন।

ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (ইন্সপেক্টর) মো. ফারুকের সঙ্গে রাতে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলানিউজকে জানান, মারামারির ঘটনায় কয়েকজন আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

আহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করছেন তিনি।