বিএনপির সঙ্গে ছাত্রনেতাদের দূরত্ব কাম্য নয়: আসিফ নজরুল
নির্বাচনসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের কথার লড়াই থামাতে উদ্যোগী হয়েছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল।
তিনি বলেছেন, বিএনপির সঙ্গে ছাত্রনেতাদের অথবা গণ-অভ্যুত্থানের শক্তিগুলোর ‘কোনো দূরত্ব বা ভুল-বোঝাবুঝি কাম্য নয়’।
রোববার দুপুরে এক ফেইসবুক পেইজে তিনি লেখেন, “এটি (ভুল-বোঝাবুঝি) গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও তাদের দোসরদের কতটা উৎসাহিত ও বেপরোয়া করে তুলতে পারে, তার কিছুটা প্রমাণ আমরা গত কয়েক দিনে পেয়েছি।”
আসিফ নজরুল বলছেন, ওই ‘ভুল বোঝাবুঝির ফলে’ গত দুদিন ফেইসবুক ‘গুজবে ভরে গিয়েছিল’।
“গত দুদিন ফেসবুক ছেয়ে গিয়েছিল ড. মুহাম্মদ ইউনূস, উপদেষ্টা ও ছাত্রনেতাদের পলায়নের গুজবে। এই গুজবের উন্মত্ততায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নাশকতা করার চেষ্টা করেছে এমন খবরও প্রকাশিত হয়েছে। আতঙ্কিত হয়ে আমার কাছে দু’একজন ফোন করেছেন, ঘটনা কী জানার জন্য।”
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার যেখানে নির্বাচনের আগে সংস্কারকে গুরুত্ব দিয়ে আসছে, সেখানে দেশের বড় দল বিএনপি যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে বারবার।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক সমাজের দাবির প্রেক্ষিতে সরকার জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র প্রণয়নের যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা নিয়েও বিএনপি আগ্রহ দেখায়নি।
এর মধ্যেই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
তার পাল্টায় সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, মির্জা ফখরুলের ‘নিরপেক্ষ’ সরকারের দাবি আরেকটা ‘এক এগারো সরকার গঠনের ইঙ্গিত’ বহন করে।
এক ফেইসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, “ছাত্ররাই এ সরকারের এবং বিদ্যমান বাস্তবতার একমাত্র ফ্যাক্টর, যেটা ১/১১ এর সরকার থেকে বর্তমান সরকারকে সম্পূর্ণভাবে আলাদা করে। বিএনপি কয়েক দিন আগে ‘মাইনাস টু’ এর আলোচনা করলেও এখন ক্ষমতায় যাওয়ার পথ সুগম করার জন্য নিরপেক্ষ সরকারের নামে আরেকটি ১/১১ সরকারের প্রস্তাবনা করছে।”
এর জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস শুক্রবার বলেন, “বিএনপিকে যারা ভিন্ন শিবিরে ঠেলে দিয়ে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছেন, এর পরিণতি ভালো হবে না।”
আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল চারটি বিষয় তার পোস্টে লিখেছেন; তার ভাষায়, এগুলো তিনি জানেন এবং বিশ্বাস করেন।
>> বিএনপি ষড়যন্ত্র বা ১/১১ ধরনের কিছুতে আগ্রহী নয়।
>> ছাত্রনেতারা সরকারে থাকা অবস্থায় কোনো রাজনৈতিক দল গঠন করছেন না বা এতে যোগ দিতে যাচ্ছেন না।
>> জুলাই ঘোষণাপত্র হবে একটি রাজনৈতিক দলিল এবং এটি প্রণয়নে গণঅভ্যুত্থানের শক্তিগুলোর মতামত আন্তরিকভাবে প্রতিফলনের ইচ্ছা ছাত্রনেতাদের রয়েছে।
>> বিএনপি ও ছাত্রনেতারা এমনকি নির্বাচন-কেন্দ্রিক বৃহত্তর সমঝোতার বিষয়েও অনাগ্রহী নন (এর ধরন ও ফর্মুলা আলোচনা সাপেক্ষে)। তাই বিরোধের কোনো কারণ নেই।
সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, “সবাইকে বরং বুঝতে হবে ঐক্য ছাড়া আমাদের বিকল্প নেই। গণহত্যাকারীদের দল আওয়ামী লীগের হাতে রয়েছে লুটের লক্ষ-লক্ষ কোটি টাকা, অনেক অন্ধ স্তাবক ও সুবিধাবাদী গোষ্ঠী, শক্তিশালী প্রচারণা নেটওয়ার্ক, তাদের পেছনে রয়েছে ক্ষমতাশালী ভিন্ন রাষ্ট্র।
“এদেরকে রুখতে হলে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগকে মনে রেখে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আমাদের মধ্যে ভিন্নমত থাকবে, কিন্তু তা বাংলাদেশের শত্রুদের জন্য উৎসাহব্যঞ্জক হয়ে ওঠার পর্যায়ে যেন না যায়।”