রোববার ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, মাঘ ৬ ১৪৩১, ১৯ রজব ১৪৪৬

ব্রেকিং

মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ কাজী নজরুল দৌহিত্র বাবুল কাজী আর নেই পিলখানা হত্যাকাণ্ড: বিস্ফোরক মামলায় দুই শতাধিক আসামির জামিন ১৮ দিনে রেমিট্যান্স এলো ১৪ হাজার ৮৪৪ কোটি টাকা আ. লীগকে নিষিদ্ধের পরিকল্পনা নেই সরকারের: প্রেস সচিব সাকিব আল হাসানকে গ্রেপ্তারে পরোয়ানা গণতন্ত্র নিশ্চিত করতে দ্রুত নির্বাচনের আহ্বান ফখরুলের বাইক্কা বিলে দেখা মিলল বিশ্বের দ্রুততম পাখি পেরিগ্রিন ফ্যালকনের তিন জিম্মির নাম দিল হামাস, যুদ্ধবিরতি শুরু প্রধান উপদেষ্টা ঘোষিত সময়েই নির্বাচন: সিইসি রাজনীতি-সংশ্লিষ্টদের ভোটার হালনাগাদ কার্যক্রমে নিয়োগ নয় গাজার ধ্বংসস্তূপ: অবিস্ফোরিত বোমা সরাতে যাবে এক দশক

জাতীয়

পিলখানা হত্যাকাণ্ড: বিস্ফোরক মামলায় দুই শতাধিক আসামির জামিন

 প্রকাশিত: ১৯:১৩, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫

পিলখানা হত্যাকাণ্ড: বিস্ফোরক মামলায় দুই শতাধিক আসামির জামিন

সাড়ে ১৫ বছর আগে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিস্ফোরক আইনের মামলায় দুই শতাধিক আসামি জামিন পেয়েছেন।

কেরাণীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে রোববার শুনানি শেষে এ আদেশ দেন ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক ইব্রাহিম মিয়া।

মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ ও পাঁচ শতাধিক আসামির জামিন শুনানির জন্য রোববার দিন ঠিক করা ছিল। বেলা সাড়ে ১১টার পর আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। রাষ্ট্রপক্ষ মেজর সৈয়দ মো. ইউসুফ নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীর হাজিরা দাখিল করে। আসামিপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ পারভেজ হাসান সাক্ষ্য পেছানোর আবেদন করেন।

রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি বোরহান উদ্দিন সাক্ষ্য নেওয়ার জন্য আবেদন করেন। এ নিয়ে কিছুটা তর্ক-বিতর্কের পর ১১টা ৪৭ মিনিটে সৈয়দ মো. ইউসুফ সাক্ষ্য দেওয়া শুরু করেন। সেদিন পিলখানায় কী ঘটেছিল, তিনি কীভাবে বেঁচে ফিরেছেন- এসব বিষয় সাক্ষ্যে তুলে ধরেন। প্রায় দুই ঘণ্টা শেষে তার সাক্ষ্য শেষ হয়।

এরপর প্রায় শতাধিক আসামির জামিন শুনানি হয়; যাদের মধ্যে হত্যা মামলায় খালাস পাওয়া ২৭৭ জন এবং ১০ বছরের সাজা শেষ হওয়া ২৫৬ জন ছিলেন। এছাড়া মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত কয়েকজন আসামির জামিন চেয়ে আবেদন করা হয়।

আসামিদের পক্ষে মোহাম্মদ পারভেজ হাসান, আমিনুল ইসলাম, ফারুক আহাম্মদ জামিন শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে বোরহান উদ্দিন জামিনের বিরোধিতা করেন। বেলা আড়াইটার দিকে জামিন প্রশ্নে শুনানি শেষ হয়। বিচারক আধাঘন্টা বিরতি দিয়ে ৩টায় জামিনের বিষয়ে আদেশ দেবেন বলে জানান।

বিরতির পর ৩টা ১৩ মিনিটের দিকে আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। বিচারক বলেন, “যখন কোনো ইনজাস্টিস হয়ে যায়, তখন আমাদের উচিত জাস্টিজ রিস্টোর করা। যারা হত্যা মামলায় খালাস পেয়েছেন, তাদের ছেড়ে দেওয়া উচিত বলে আমার অভিমত।

“তবে যারা এ মামলার আসামি তারা আপাতত কারাগারেই থাকবেন। সাক্ষী তো চলবেই। বিচার শেষ হতে আর বেশিদিন লাগবে না।”

পরে আদালত আড়াই শতাধিক আসামির জামিনের আদেশ দেন, যারা নিম্ন আদালত, উচ্চ আদালত ও আপিল বিভাগ থেকে খালাস পেয়েছেন। এছাড়া আপিলে যে দুই আসামির এক বছর করে সাজা হয়েছে, তাদের জামিনের আদেশও দেয় আদালত।

আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি মামলার পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ ঠিক করা হয়।

আসামিপক্ষের আইনজীবী আমিনুল ইসলাম বলেন, “২ দিন পর দেখে শুনে জামিনপ্রাপ্তদের জামিননামা দাখিল করতে বলেছেন আদালত- যেন দণ্ডপ্রাপ্ত কোনো আসামি ভুল করে বের হয়ে যেতে না পারেন।

“আমরা ২ দিন পর দেখেশুনে জামিননামা দাখিল করব। ২ দিন পর জেলখানা থেকে তারা মুক্তি পাবেন।”

এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি বোরহান উদ্দিন বলেন, “আসামিপক্ষ যে দরখাস্ত দিয়েছে, তারা ঠিক বলতে পারেনি যে- কতজনের জন্য জামিনের দরখাস্ত দিয়েছেন। হাই কোর্টে কতজন খালাস পেয়েছেন তা নিয়েও বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়েছে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। নিম্ন আদালত থেকে খালাস পেয়েছে- এমন ৩০ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করেছিল। সেখান থেকে ১৫ জনের যাবজ্জীবন এবং ১৫ জন খালাস পান।

“এই তথ্য ছাড়া বাকিদের সংখ্যা বলতে পারেনি আসামিপক্ষ। বলতে না পারায় আদালতের কাছে বিষয়টি সুস্পষ্ট না হওয়ায় আদালত শর্ত দিয়েছেন যে, যারা নিম্ন আদালত, উচ্চ আদালত ও আপিল বিভাগ থেকে খালাস পেয়েছেন, তারাই জামিন পাবেন। তবে জামিন পাওয়ার সংখ্যা দুই শতাধিক হবে।”

এদিকে আসামিদের স্বজনরা সকাল থেকেই কারাগারের মূল ফটকের সামনে অবস্থান করেন। বিকালে জামিন আদেশের খবর শুনে অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন।

২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদরদপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোড়ন তোলে ওই ঘটনা।

সেই বিদ্রোহের পর সীমান্ত রক্ষা বাহিনী বিডিআরের নাম বদলে যায়, পরিবর্তন আসে পোশাকেও। এ বাহিনীর নাম এখন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বা বিজিবি।

বিদ্রোহের বিচার বিজিবির আদালতে হলেও হত্যাকাণ্ডের মামলা বিচারের জন্য আসে প্রচলিত আদালতে। এই ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। হত্যা মামলায় খালাস বা সাজাভোগ শেষে বিস্ফোরক মামলার কারণে মুক্তি আটকে যায় ৪৬৮ বিডিআর সদস্যের।

বিস্ফোরক আইনের মামলায় ৮৩৪ জন আসামির বিরুদ্ধে বিচারকাজ শুরু হয়েছিল ২০১০ সালে। কিন্তু মাঝপথে বিস্ফোরক মামলার কার্যক্রম এক প্রকার স্থগিত রেখে কেবল হত্যা মামলার সাক্ষ্য উপস্থাপন করে রাষ্ট্রপক্ষ। এ কারণে এই মামলার বিচার ঝুলে যায়।

অন্যদিকে হত্যা মামলায় ৮৫০ জনের বিচার শেষ হয় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর। তাতে ১৫২ জনের ফাঁসি, ১৬০ জনের যাবজ্জীবন ও ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। খালাস পান ২৭৮ জন।

২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর সেই মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায়ও হয়ে যায় হাই কোর্টে। তাতে ১৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয় ১৮৫ জনকে। আরো ২২৮ জনকে দেওয়া হয় বিভিন্ন মেয়াদে সাজা। খালাস পান ২৮৩ জন।

হাই কোর্টের রায়ের আগে ১৫ জনসহ সব মিলিয়ে ৫৪ জন আসামি মারা গেছেন। হত্যা মামলায় হাই কোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে ২২৬ জন আসামি আপিল ও লিভ টু আপিল করেছেন।

অন্যদিকে হাই কোর্টে ৮৩ জন আসামির খালাস এবং সাজা কমানোর রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এসব আপিল ও লিভ টু আপিল এখন শুনানির অপেক্ষায়।

ক্ষমতার পালাবদলে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনা পুনঃতদন্তের দাবি জোরাল হয়। ওই ঘটনার তদন্তে জাতীয় স্বাধীন কমিশন/কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে গত নভেম্বরে রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের দুই আইনজীবী।

ক্ষমতার পালাবদলে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনা পুনঃতদন্তের দাবি জোরাল হয়। গত ১৯ ডিসেম্বর অভিযোগ নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যান শহীদ পরিবারের সদস্যরা। সাড়ে পনের বছর আগের এই হত্যাকাণ্ড পুনঃতদন্তে গত ২৪ ডিসেম্বর আ ল ম ফজলুর রহমানকে প্রধানের দায়িত্ব দিয়ে কমিশন গঠন করে ৯০ দিন সময় বেঁধে দিয়েছে সরকার।