কাজী নজরুল দৌহিত্র বাবুল কাজী লাইফ সাপোর্টে
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের নাতি বাবুল কাজীর শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে।
শনিবার রাতে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের পরিচালক মারুফুল ইসলাম।
তিনি রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বাবুল কাজীর অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক।
“উনার অবস্থা খুবই ক্রিটিক্যাল। কাল যখন ভর্তি হন, তখন থেকেই তার অবস্থা খারাপ ছিল। এ ধরনের পেশেন্টের সারভাইভ করার চান্স খুব কম। আমরা কাল উনার পরিবারের সদস্যদেরও আমরা এ বিষয়ে ব্রিফ করেছি।”
শনিবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে বনানীর বাড়িতে গ্যাস লাইটার বিস্ফোরণে আহত হন কাজী বাবুল। সকাল পৌনে ৭টায় আশঙ্কজনক অবস্থায় তাকে ঢাকার জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়।
ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক শাওন বিন রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় বার্ন ইনস্টিটিউটে নিয়ে আসা হয়েছে। উনার শরীরের ৭৪ শতাংশ পুড়ে গেছে, শ্বাসনালীও পুড়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। এজন্য তাকে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়েছে।”
ঘটনার বর্ণনায় বাবুল কাজীর বোন খিলখিল কাজী বলেন, "ভোরবেলায় বাথরুমে ঢুকে ধূমপান করার জন্য লাইটার জ্বালিয়েছিলেন। এখন তো শীতের কারণে আমরা সবাই দরজা-জানালা বন্ধ করেই রাখি।
“বাথরুমের ভেতরে আবদ্ধ হওয়ার কারণে সেখানে গ্যাস লাইটার জ্বালানোর পরই বিস্ফোরণ হয়। মিথেন গ্যাস বা কিছুর কারণে এটি হয়েছে। পরে আমরা হাসপাতালে এনেছি। এখন চিকিৎসা চলছে।”
নজরুল সঙ্গীত শিল্পী খিলখিল বলেন, “এখন তো আইসিইউতেই চিকিৎসাধীন আছেন। সবার কাছে আমরা দোয়া চাই। চিকিৎসকরা খুব চেষ্টা করছেন, মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। সবাই দোয়া করবেন- আমার ভাইটা যেন বেঁচে যায়।"
কাজী বাবুলের চিকিৎসায় শনিবারই ১৯ সদস্যের একটি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। ওই টিমের প্রধান মারুফুল ইসলাম।
বোর্ডের সদস্যরা হলেন- ঢাকা মেডিকেলের মানসিক রোগ বিভাগের প্রধান নূর আহমেদ গিয়াস উদ্দিন, রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম, হেপাটোলজি বিভাগের প্রধান ফারুক আহমেদ, অফথালমোলজি বিভাগের প্রধান মোশতাক আহমেদ, নেফ্রোলজি বিভাগের প্রধান নজরুল ইসলাম, বার্ন ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক ফোয়ারা তাসমীম, শরীফ আসফিয়া রহমান, হাসিব রহমান, মোহাম্মদ রবিউল করিম খান, তানভীর আহমেদ, কাজী ইমরান আহমেদ, মলয় কুমার দাস, মুহাম্মদ শায়েস্তা আলী খান, রেবেকা সুলতানা, আসাদুজ্জামান, নেওয়াজ আহমেদ, মোহাম্মদ ইমতিয়াজ মাহবুব ও বীণা সরকার।
স্বাধীনতার পরপর কাজী নজরুল ইসলামকে ভারত থেকে দেশে আনার সময় পরিবারের সঙ্গে আসেন বাবুল কাজী। ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি শেষ করে তিনি ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশোনা করেন।
১৮৯৯ সালে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্ম নেওয়া কাজী নজরুল ইসলাম ২৫ বছর বয়সে কলকাতায় প্রমীলা দেবীকে বিয়ে করেন।
তাদের ঘরে চার ছেলে সন্তানের জন্ম হয়, যাদের মধ্যে প্রথম সন্তান কৃষ্ণ মোহাম্মদ মারা যায় খুব ছোট বয়সে। দ্বিতীয় সন্তান অরিন্দম খালেদ বুলবুলের মৃত্যু হয় মাত্র চার বছর বয়সে। অপর দুই সন্তানের মধ্যে কাজী সব্যসাচী ও কাজী অনিরুদ্ধ কেউই দীর্ঘায়ু পাননি।
আবৃত্তিকার কাজী সব্যসাচী ও উমা কাজীর ছেলে তিন সন্তানের মধ্যে সবার ছোট বাবুল কাজী। তার বয়স ৫৯ বছর। বাবুল কাজীর বড় দুই বোন খিলখিল কাজী ও মিষ্টি কাজী; তারা সবাই বাংলাদেশের নাগরিক।
জাতীয় কবির আরেক ছেলে কাজী অনিরুদ্ধের পরিবারের বসবাস কলকাতায়। তার স্ত্রী কল্যাণী কাজী লেখক ও সংগীতশিল্পী।
তাদের তিন ছেলেমেয়ের মধ্যে কাজী অনির্বাণ সুইজারল্যান্ডে ঘুরতে গিয়ে গত ২ অক্টোবর মারা যান। অনির্বাণের ভাই কাজী অরিন্দমের (সুবর্ণ) থাকেন কলকাতায়, আর তাদের বোন অনিন্দিতা কাজী নিউ জার্সি প্রবাসী।
তাদের বাবা অনিরুদ্ধ ১৯৭৪ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি কাজী নজরুল জীবিত থাকতেই মারা যান।