বুধবার ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, মাঘ ২ ১৪৩১, ১৫ রজব ১৪৪৬

ব্রেকিং

ইভিএম বাতিল, ৪০ শতাংশ ভোট না পড়লে ফের নির্বাচন নির্বাচন ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনতে ১৫০ সুপারিশ কমিশনের সংবিধান সংস্কার: রাষ্ট্রীয় মূলনীতি, দেশের সাংবিধানিক নাম বদলের সুপারিশ রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হবে : আসিফ নজরুল জুলাই গণহত্যার বিচার নির্বাচনের আগেই সম্ভব : আসিফ নজরুল কারামুক্ত ডেসটিনির রফিকুল আমীন প্রধান উপদেষ্টার কাছে ৪ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জমা ছাত্র আন্দোলনে গুলি: এবার আসামি সাবেক রাষ্ট্রপতি হামিদ বেগম খালেদা জিয়ার লিভার প্রতিস্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়নি : ডা. জাহিদ বইয়ে ‘আদিবাসী চিত্রকর্ম’: পক্ষের লোকজনকে পেটাল বিরোধীরা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট: আপিলে খালেদা-তারেকসহ সবাই খালাস দক্ষিণ কোরিয়ার অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট ইউন গ্রেপ্তার

জাতীয়

ছাগলকাণ্ড: মতিউরের তিন দিনের রিমান্ড, স্ত্রী কারাগারে

 প্রকাশিত: ১৯:৩৮, ১৫ জানুয়ারি ২০২৫

ছাগলকাণ্ড: মতিউরের তিন দিনের রিমান্ড, স্ত্রী কারাগারে

ছাগলকাণ্ডে আলোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক কর্মকর্তা মতিউর রহমানকে অস্ত্র মামলায় তিন দিনের রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ।

তার স্ত্রী লায়লা কানিজ লাকিকে দুর্নীতির মামলায় কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছে আদালত।

একই সঙ্গে তাকে রিমান্ডে চেয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের করা আবেদন শুনানির জন্য রোববার দিন ধার্য্য করা হয়েছে।

বুধবার শুনানি শেষে ঢাকার দুটি আদালত পৃথকভাবে এই আদেশ দেয়।

মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে মতিউর রহমান ও তার স্ত্রী লায়লা কানিজকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।

ডিএমপির উপকমিশনার (মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশনস) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এক বার্তায় বলেছেন, মতিউর রহমান ও তার স্ত্রী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান লায়লা কানিজকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।

বুধবার দুইজনকে আলাদাভাবে আদালতে হাজির করা হয়।

ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতের ভাটারা থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা এসআই জাকির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে মতিউরকে আদালতে আনা হয়। এ সময় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ভাটারা থানা এসআই রুবেল মিয়া তাকে ১০ দিনের রিমান্ডে চেয়ে আবেদন করেন।

ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ড আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে আবেদন করেন।

শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম নাজমিন আক্তার মতিউরের তিন দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়, মতিউর রহমানকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে তার হেফাজতে একটি অস্ত্র থাকার কথা বলেছেন তিনি। পরে সাক্ষীদের উপস্থিতিতে মতিউর রহমান তার বাসার শয়ন কক্ষের কাঠের আলমারী থেকে কালো রঙের কভারের মধ্যে রাখা অস্ত্র এবং গুলি বের করে দেন। অস্ত্রটি বিদেশি শর্টগান।

এজাহারে বলা হয়েছে, অস্ত্রটির লাইসেন্সের মেয়াদ ২০২১ সালে শেষ হয়ে হওয়ার পরেও তা কেন নিজের হেফাজতে রেখেছেন সে বিষয়ে মতিউর সদোত্তর দিতে পারেননি। তিনি ২৫ রাউন্ড গুলিসহ অস্ত্রটি কেনার কথা বললেও জব্দ করার সময় ২৪ রাউন্ড গুলি পাওয়া গেছে। বাকি গুলিটি তিনি কি করেছেন তারও কোন সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেনি। এ কারণে তার বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলাটি করা হয়েছে।

তার আাগে লায়লা কানিজের রিমান্ড শুনানি তারিখ দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ জাকির হোসেন গালিব।

দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মীর মোহাম্মদ আলী সালাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, লায়লা কানিজের সাতদিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক মো. ইসমাইল। আদালত রিমান্ড শুনানির জন্য রোববার দিন ঠিক করেছে এবং তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছে।

দুদকের মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ইসমাইল বলেছেন, ১২ জানুয়ারি তিনি বাদী হয়ে লায়লা কানিজের নামে মামলা করেছেন। তাকে ‘সহযোগিতার’ অভিযোগে এ মামলায় মতিউরকেও আসামি করা হয়েছে।

লায়লা কানিজকে রিমান্ড চেয়ে করা আবেদনে দুদকের এই সহকারী পরিচালক বলেন, তার বিরুদ্ধে ১ কোটি ৫৩ লাখ ৬৩ হাজার ৬৯০ টাকার সম্পদের ‘তথ্য গোপন’ ও ‘অবৈধভাবে’ ১৩ কোটি ১ লাখ ৫৮ হাজার ১০৬ টাকা সম্পদ অর্জনের মামলার তদন্ত চলছে।

লায়লা কানিজের বিরুদ্ধে সরকারি চাকরিতে থাকার সময় ‘ক্ষমতার অপব্যবহার’ ও জালিয়াতির মাধ্যমে বিপুল প্লেসমেন্ট শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় করার অভিযোগ রয়েছে।

গত বছর কোরবানির জন্য ঢাকার মোহাম্মদপুরের সাদিক অ্যাগ্রো থেকে ইফাত নামের এক তরুণের ১৫ লাখ টাকা দামে ছাগল কেনার ফেইসবুক পোস্ট ঘিরে মতিউর রহমানকে নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় সমালোচনা শুরু হয়।

তার আগে ছাগল কিনতে গিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন ইফাত। ধানমন্ডির বাসায় ঈদের দিন ছাগলটি কোরবানি দেওয়ার কথা বলেছিলেন তিনি। তখন ছাগলসহ ইফাতের ছবি জুড়ে দিয়ে অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশ্ন তোলেন- ১৫ লাখ টাকা দিয়ে ছাগল কেনার অর্থের উৎস কী?

এ প্রশ্ন ঘিরে সামনে আসতে থাকে ইফাতের পরিচয়। ইফাত নিজেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবিসহ পোস্ট দিয়ে ও সংবাদমাধ্যমে বাবার পরিচয় দিতে গিয়ে বলেন, তার বাবা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাস্টমস, এক্সসাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের সভাপতি মো. মতিউর রহমান।

ইফাতের বাবার পরিচয় ধরে অনেকে প্রশ্ন তোলেন, একজন সরকারি কর্মকর্তার ছেলের বিপুল ব্যয়ে কোরবানির পশু কেনার সামর্থ্য হল কী করে?

অবশ্য ছাগলটি ইফাত শেষপর্যন্ত কেনেননি বলে দাবি সাদিক এগ্রোর কর্ণধার মোহাম্মদ ইমরান হোসাইনের। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেছেন, ইফাত শুধু ১ লাখ টাকা দিয়ে ছাগলটির বুকিং করেছিলেন। তবে অবশিষ্ট মূল্য পরিশোধ করে ছাগলটির তিনি আর নিয়ে যাননি।

বিষয়টি নিয়ে ইফাতের বক্তব্যও এসেছে সংবাদমাধ্যমে। তার দাবি, ইমরান হোসাইনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সূত্রে তার ‘অনুরোধে’ ছাগলটি নিয়ে প্রচারের জন্য এতটা দামের কথা বলে পোস্ট দিয়েছিলেন তিনি।

মতিউর রহমান এ আলোচনায় ‘ঘি ঢেলেছেন’ ছেলের পরিচয় ‘অস্বীকার’ করে। একটি টেলিভিশনের প্রশ্নের জবাবে তিনি দাবি করেন, মুশফিকুর রহমান ইফাত নামে কেউ তার ছেলে বা আত্মীয় নয়, এমন নামে কাউকে চেনেন না পর্যন্ত। তার একটিই ছেলে, তার নাম তৌফিকুর রহমান।

এরপর ইফাতের পরিচয় ও পারিবারিক ঠিকুজি নিয়ে ফেইসবুকে নানা তথ্য আসতে থাকে। ইফাতের সঙ্গে মতিউর রহমান এবং পরিবারের অন্যদের ছবিও প্রকাশিত হয়।

এক পর্যায়ে সামনে আসেন ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী। একটি টেলিভিশন অনুষ্ঠানে তিনি দাবি করেন, ইফাত তার মামাতো বোনের সন্তান। আর মতিউর রহমানই ইফাতের বাবা।

এ সংসদ সদস্য বলেন, ইফাত এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমানের দ্বিতীয় পক্ষের (স্ত্রীর) ছেলে। মতিউর রহমানের প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ লাকি ছিলেন শিক্ষা ক্যাডারের সাবেক কর্মকর্তা। সরকারি চাকরি ছেড়ে তিনি নাম লেখান রাজনীতিতে। তিনি এখন নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান।

মতিউর রহমান এর আগে ব্রাসেলসে বাংলাদেশের কমার্শিয়াল কাউন্সিলের, চট্টগ্রাম কাস্টমসের কমিশনার, ভ্যাট কমিশনারসহ বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন।

১৯৯৪ সালে সরকারি চাকরিতে যোগ দেওয়া এ কর্মকর্তা পড়ালেখা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগে। এর আগেও তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, সেসব দুদক তদন্তও করেছে।

দুদিন আগে বেসরকারি এক টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “চারবার দুদক তদন্ত করে দেখেছে, আমি কোনো দুর্নীতি করিনি।”

মতিউর সরকারি চাকরির পাশাপাশি ব্যবসায় জড়িয়েছেন; বিনিয়োগ করেছেন পুঁজিবাজারেও।

বিপুল আয়ের উৎস সম্পর্কে প্রশ্ন করলে মতিউর ওই সাক্ষাৎকারে বলেন, “একটা গ্রুপ অব কোম্পানির ৩০০ একরের জমিতে আমার একটা অংশ আছে। কোনো কারখানায় আমার বিনিয়োগ আছে। কিন্তু ৩০০ একর জমি বা কারখানার পুরোটা আমার না। আমাদের পরিবারের বিনিয়োগ আছে মাত্র।”

দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে আলোচনার মধ্যে মতিউরকে এনবিআরের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে সংযুক্ত করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। বাদ পড়েছেন সোনালী ব্যাংকের পরিচালক পর্ষদ থেকেও। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মতিউর পরিবারের সম্পদ ক্রোকের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।