নির্বাচন ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনতে ১৫০ সুপারিশ কমিশনের
‘ভাঙা’ নির্বাচন ব্যবস্থাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়ে অন্তর্ভূক্তিমূলক করার পাশাপাশি সব অংশীজনকে দায়বদ্ধতার মধ্যে আনার লক্ষ্যে প্রায় ১৫০ সুপারিশ রেখেছে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন।
বুধবার প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে কমিশন তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
রাষ্ট্র সংস্কারের সুনির্দিষ্ট সুপারিশ নিয়ে এদিন তেজগাঁওয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন ছাড়াও প্রতিবেদন পেশ করেছে সংবিধান, পুলিশ ও দুদক সংস্কার কমিশন।
প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময় নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদারের নেতৃত্বে কমিশনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠায় নির্বাচন কমিশনকে কার্যকর ও স্বাধীন প্রতিষ্ঠান করার লক্ষ্যে তাদের দেওয়া প্রতিবেদন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে কথা বলেছেন বদিউল আলম।
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এটা একটা গুরু দায়িত্ব। নির্বাচন ব্যবস্থা ‘ভেঙে’ গিয়েছে, এটাকে জোড়া লাগানোর জন্য এই সংস্কার কমিশনের প্রচেষ্টা।”
কাজটি করতে গিয়ে তিনি উত্তপ্ত পরিস্থিতি ছিলেন এবং সামনের দিনে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হতে পারে তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমরা কতগুলো প্রস্তাব করেছি- যেগুলো পরিস্থিটাকে আরও উত্তপ্ত করতে সহায়তা করবে।”
নির্বাচন ব্যবস্থায় যাতে স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠিত হয় সে চেষ্টাই করার কথা তুলে ধরেছেন তিনি।
“একই সাথে সব অংশীজনের দায়বদ্ধতা যেন প্রতিষ্ঠিত হয় এবং নির্বাচনটা যেন অন্তর্ভূক্তিমূলক হয়, ভোটারের ভোট দেওয়ার অধিকার যাতে প্রতিষ্ঠিত হয় সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করেছি। ১৫০টির মতো ছোটবড় সুপারিশ রয়েছে।”
নির্বাচনী ব্যবস্থায় সংস্কার আনতে সংশ্লিষ্ট কিছু বিষয়ে সংবিধান সংক্রান্ত সুপারিশ রয়েছে বলেছেন কমিশন প্রধান।
২০২৪ সালের জানুয়ারিতে বিএনপিসহ বেশির ভাগ দলের বর্জনের মধ্য দিয়ে টানা চতুর্থবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। প্রবল আন্দোলনের মুখে ৫ অগাস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয় আওয়ামী লীগ সরকার।
তার আগে ২০১৪ সাল থেকে আওয়ামী লীগের আমলে অনুষ্ঠিত তিনটি নির্বাচন ব্যাপক সমালোচিত হয়। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে কর্তৃত্ববাদী শাসনের অভিযোগ ওঠে।
দুর্নীতি, অর্থ পাচার, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মত গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ দেশে ও বিদেশে চাপে পড়ে আওয়ামী লীগ সরকার।
ফলে ক্ষমতার পালাবদলের পর রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। দুই ধাপে গঠিত হয় ১১টি সংস্কার কমিশন।
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর এই প্রচেষ্টার পেছনে অনুপ্রেরণার কথা তুলে ধরেন বদিউল আলম মজুমদার।
তিনি বলেন, “গ্রামের থেকে অনেক মানুষ এসেছে কথা বলতে। দুয়েকজন বলে গিয়েছে- সংসদ ভবনের এ ইমারতে যেন কুৎসিত লোক আসতে না পারে। আমরা মনে করি- এটা ছিল আমাদের প্রতি ম্যান্ডেট।
“১৮টি উল্লেখযোগ্য জায়গায় ১৫০টির মতো সুপারিশ করেছি। এ সুপারিশের অন্যতম লক্ষ্য- নির্বাচন কমিশনের (ইসি) স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। তাদের ক্ষমতায়িত করা। একই সাথে তাদের দায়বদ্ধ করা।”
দলগুলোর মধ্যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত না হলে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করা যাবে, সে আশা করাও দুরাশা বলে মন্তব্য করেন কমিশন প্রধান।
রাজনৈতিক দলগুলোকে গণতান্ত্রিক চর্চা ও জবাবদিহিতার আওতায় আনার বিষয়ে তিনি বলেন, “দায়বদ্ধতার বিধান অন্তর্ভুক্ত করেছি। এটা চারটিখানি কথা নয়। এটা বলা সহজ; কিন্তু এটা আমাদের করতে হবে।”
বহু বছর ধরে প্রবাসীরা ভোটাধিকার বঞ্চিত তুলে ধরে বদিউল আলম বলেন, তাদের যাতে ভোটাধিকার দেওয়া যায়, তাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে সুপারিশে। প্রার্থীদের যোগ্যতা-অযোগ্যতার বিষয়ে কিছু ‘অভিনব’ প্রস্তাবও করা হয়েছে।
নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন বিষয়ে তিনি বলেন, “এখন যে ব্যবস্থা রয়েছে তা আলঙ্কারিক। তা অসম্মানিত করে। আমরা ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে নারীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার প্রস্তাব করেছি। নির্বাচনী অপরাধের বিচার সুসংহত করে তাদের যেন দায়বদ্ধ করা যায় সে বিষয়ে সুপারিশ করেছি।”
২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের ভোটের কথা উল্লেখ করে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “বিশেষত গত তিনটি নির্বাচনে যারা নির্বাচন ব্যবস্থাকে নির্বাসনে ফেলে দিয়েছে। কর্মকর্তা শুধু নয়, আমাদের কমিশন সদস্যরা, তাদের ব্যাপারে তদন্ত করার, বিশেষত ২০১৮ সালের মধ্যরাতে অভূতপূর্ব কাণ্ড ঘটেছে সে ব্যাপারে তদন্ত করে তাদের বিচারের আওতায়, দায়বদ্ধতার আওতায় আনা বলে গুরুত্বপূর্ণ মনে করি।”
সংস্কার কাজকে এগিয়ে নিতে আরও কিছু আইনের খসড়া নিয়ে কাজ চলছে বলেছেন কমিশন প্রধান।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী ও কার্যকর করার ব্যাপারে গুরুত্ব দিয়ে আইনের খসড়া তৈরি করা হয়েছে। আরও দুই-একটা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। কিছু আইন রয়েছে সংস্কার করা দরকার। ইতোমধ্যে কিছু গুছিয়ে আনা হয়েছে। এজন্য সময় দিতে হবে।
সংস্কার কমিশনের এই কাজকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলে তুলে ধরে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “এটা আমার জীবনে গুরুত্বপূর্ণ এসাইনমেন্ট ছিল।”
‘ভাঙা’ নির্বাচন ব্যবস্থাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়ে অন্তর্ভূক্তিমূলক করার পাশাপাশি সব অংশীজনকে দায়বদ্ধতার মধ্যে আনার লক্ষ্যে প্রায় ১৫০ সুপারিশ রেখেছে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন।
সকল সুপারিশ বিস্তারিত জানতে লিংকে ক্লিক করুন:
https://drive.google.com/file/d/1Dp1qI551FyOgIQcrM0S167dGzzTezXUl/view