বুধবার ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, মাঘ ২ ১৪৩১, ১৫ রজব ১৪৪৬

ব্রেকিং

ইভিএম বাতিল, ৪০ শতাংশ ভোট না পড়লে ফের নির্বাচন নির্বাচন ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনতে ১৫০ সুপারিশ কমিশনের সংবিধান সংস্কার: রাষ্ট্রীয় মূলনীতি, দেশের সাংবিধানিক নাম বদলের সুপারিশ রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হবে : আসিফ নজরুল জুলাই গণহত্যার বিচার নির্বাচনের আগেই সম্ভব : আসিফ নজরুল কারামুক্ত ডেসটিনির রফিকুল আমীন প্রধান উপদেষ্টার কাছে ৪ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জমা ছাত্র আন্দোলনে গুলি: এবার আসামি সাবেক রাষ্ট্রপতি হামিদ বেগম খালেদা জিয়ার লিভার প্রতিস্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়নি : ডা. জাহিদ বইয়ে ‘আদিবাসী চিত্রকর্ম’: পক্ষের লোকজনকে পেটাল বিরোধীরা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট: আপিলে খালেদা-তারেকসহ সবাই খালাস দক্ষিণ কোরিয়ার অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট ইউন গ্রেপ্তার

জাতীয়

বইয়ে ‘আদিবাসী চিত্রকর্ম’: পক্ষের লোকজনকে পেটাল বিরোধীরা

 প্রকাশিত: ১৫:০২, ১৫ জানুয়ারি ২০২৫

বইয়ে ‘আদিবাসী চিত্রকর্ম’: পক্ষের লোকজনকে পেটাল বিরোধীরা

পাঠ্যবই থেকে ‘আদিবাসী’ শব্দযুক্ত চিত্রকর্ম বাদ দেওয়ার প্রতিবাদে পাঠ্যপুস্তক ভবনের সামনে অবস্থান নেওয়া শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে ওই চিত্রকর্ম বাদ দেওয়ার পক্ষে অবস্থান নেওয়া অন্যপক্ষ।

বুধবার বেলা ১টার দিকে মতিঝিলে এই হামলার ঘটনায় বেশ কয়েকজনকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেখেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।

মতিঝিল পরিদর্শক তদন্ত মোহাইমেনুল ইসলাম বলেন, “ছাত্রদের ধাওয়া খেয়ে আদিবাসী বিক্ষোভকারী চলে গেছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক। ছাত্ররা সড়কের একপাশে অবস্থান করছে।”

নবম-দশম শ্রেণির বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও নির্মিতি বইয়ের পেছনের প্রচ্ছদে ‘আদিবাসী’ শব্দ সংবলিত একটি চিত্রকর্ম স্থান পেয়েছিল। সেখানে একটি গাছের পাঁচটি পাতায় লেখা ছিল মুসলিম, হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ ও আদিবাসী; পাশে লেখা ছিল ‘পাতা ছেঁড়া নিষেধ’।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী ‘স্টুডেন্ট ফর সভরেন্টি’ ব্যানারে গত ১২ জানুয়ারি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড- এনসিটিবি ঘেরাও করার পর রাতে ওই বইয়ের অনলাইন সংস্করণ থেকে চিত্রকর্মটি সরিয়ে ফেলা হয়।

এর প্রতিবাদে বুধবার বেলা ১১টায় পাঠ্যপুস্তক ভবন ঘেরাওয়ের ঘোষণা দেয় ‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্রজনতা’ নামে আদিবাসী শিক্ষার্থীদের একটি সংগঠন। পরে ‘স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টি’ও একইসময়ে পাঠ্যপুস্তক ভবন ঘেরাও করার ঘোষণা দেয়।

সেই ঘোষণা অনুযায়ী বুধবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সমাবেশ করে সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র জনতা। পরে তারা রোকেয়া হল হয়ে কলাভবন ও মধুর ক্যান্টিন প্রদক্ষিণ করে এনসিটিবি ভবন ঘেরাওয়ের উদ্দেশ্য রওনা দেয়।

অন্যদিকে ‘স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টি’র সদস্যরা বেলা ১১টার দিকেই মতিঝিলে পাঠ্যপুস্তক ভবনের সামনে অবস্থান নেন। ‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র জনতা’ সেখানে পৌঁছালে তৈরি হয় উত্তেজনা।

ঘটনাস্থল থেকে আমাদের আলোকচিত্রী মাহমুদ জামান অভি জানান, দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে পাল্টাপাল্টি স্লোগান দিতে থাকলে পুলিশ মাঝখানে অবস্থান নেয়। তারপরও দুই পক্ষের মধ্যে এক দফা হাতাহাতি হয়।

পুলিশ দুই পক্ষকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেও এক পর্যায়ে ‘স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টি’র অবস্থান থেকে একটি দল লাঠিসোঁটা নিয়ে ‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র জনতা’র ওপর চড়াও হয়।

বেদম পিটুনিতে আদিবাসী ছাত্র জনতার কর্মসূচিতে অংশগ্রণকারীরা ছাত্রভঙ্গ হয়ে যায় এবং পরে তাদের দৈনিক বাংলা মোড়ের দিকে চলে যেতে দেখা যায়। ‘স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টি’র সদস্যরা এরপরও লাঠিসোঁটা নিয়ে এনসিটিবি ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে ছিলেন।

সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্রজনতার সংগঠক অলিক মৃ পরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "স্টুডেন্ট ফর সভরেন্টির শিক্ষার্থীরা আমাদের ওপর হামলা করেছে। এতে ১১ জন আহত হয়েছেন।"

অন্যদিকে স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টির আহ্বায়ক মুহম্মদ জিয়াউল হক জিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "উপজাতিদের হামলায় স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টির ১৪ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।"

এর আগে রাজু ভাস্কর্যে ‘আদিবাসী ছাত্র জনতার’ সমাবেশে বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অলিক মৃ বলেন, "একদল বিচ্ছিন্নতাবাদীর চাপে পড়ে তারা সেই গ্ৰাফিতি মুছে ফেলেছে। আমাদের বিচ্ছিন্নতাবাদী বলে আখ্যা দিয়েছে।

“এনসিটিবির কি রাষ্ট্র চালায় নাকি সরকার রাষ্ট্র চালায়? আমরা বাংলাদেশের নাগরিক। আপনাদের যেমন অধিকার আছে, আমাদেরও সেই অধিকার আছে। কিন্তু উল্টো আমাদের বিচ্ছিন্নতাবাদী বলে আখ্যা দিচ্ছেন তারা।"

পাঠ্যবইয়ে 'আদিবাসী' শব্দ সংবলিত ওই চিত্রকর্ম পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “এখন থেকে পাঠ্যবইয়ে আদিবাসীদের যথাযথ মর্যাদা থাকতে হবে।”

এই আন্দোলনের কারণ জানতে চাইলে ‘স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টি’র আহ্বায়ক মুহম্মদ জিয়াউল হক জিয়া মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পাঠ্যবইয়ের কভার পৃষ্ঠার রাষ্ট্রদ্রোহী পরিভাষা ‘আদিবাসী’ যুক্ত অখণ্ড ভারতের কল্পিত গ্রাফিতিটি বাদ দেওয়ায় আমাদের আংশিক দাবি পূরণ হয়েছে মাত্র। কিন্তু পরিমার্জন কমিটিতে থাকা রাখাল রাহা ওরফে সাজ্জাদকে অপসারণ এবং এর সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করতে তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি ছিল।

“এনসিটিবি আমাদের আশ্বাস দিয়েছিল আমাদের দাবি মেনে নেবে, তদন্ত কমিটি করবে। কিন্তু এখনো আমাদের এই দাবিগুলোর বাস্তবায়ন হয়নি। তাই আমরা পুনরায় বিক্ষোভ সমাবেশ এবং এনসিটিবি ঘেরাও কর্মসূচি দিতে বাধ্য হয়েছি।“

এ সংগঠনটির যুগ্ম আহ্বায়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুহম্মদ মুহিউদ্দীন রাহাত বলেন, “পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীরা বিদেশি প্ররোচনায় ২০০৭ সাল থেকে নিজেদেরকে আদিবাসী দাবি করলেও তারা তা নয়। তারা বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসে আমাদের ভুখণ্ডে বাঙালিদের সঙ্গে সহাবস্থান করছে। আদিবাসী বলতে বোঝায় আদি বাসিন্দা। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের আদি নিবাস হচ্ছে পার্শ্ববর্তী মিয়ানমার, ভারত, কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড ইত্যাদি রাষ্ট্রগুলোতে।

“২০০৭ সালে জাতিসংঘের ৬১তম অধিবেশনে আদিবাসী বিষয়ক একটি ঘোষণাপত্র উপস্থাপন করা হয়, ওই ঘোষণাপত্রে এমন কিছু বিতর্কিত অনুচ্ছেদ রয়েছে যেগুলো বাস্তবায়ন করতে গেলে আদিবাসী অঞ্চলের ওপর রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ ও অখণ্ডতা থাকে না। দেশে কোনো উপজাতীয় আদিবাসী না থাকায় বাংলাদেশ ওই ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেনি। ওই ঘোষণাপত্রের একটি অনুচ্ছেদে আদিবাসীদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার ও আরেকটি অনুচ্ছেদে স্বায়ত্তশাসন ও নিজস্ব সরকার গঠনের অধিকার দেওয়া হয়েছে। দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতার জন্য হুমকি হওয়ায় আমরা সংবিধানবিরোধী ওই শব্দ পাঠ্যবই থেকে বাতিলের দাবি জানিয়েছিলাম।”