জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট: আপিলে খালেদা-তারেকসহ সবাই খালাস
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, তার ছেলে তারেক রহমানসহ সবাই খালাস পেয়েছেন।
বুধবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ এ রায় দেন। রায়ে বলা হয়, এ মামলায় আসামিদের কারো ‘অপরাধ পাওয়া যায়নি’।
এর আগে গত ২৭ নভেম্বর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে খালাস দেওয়া হয়। এর ফলে আওয়ামী লীগ আমলে দুই মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়া বিএনপি চেয়ারপারসন দুটোতেই নির্দোষ প্রমাণিত হলেন। ফলে তার নির্বাচন করার আর বাধা থাকল না।
আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, অ্যাডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজল, অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম, ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসীম, অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান খান, অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন, অ্যাডভোকেট ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া, ব্যারিস্টার সানজিদ সিদ্দিকী, অ্যাডভোকেট মাকসুদ উল্লাহ, অ্যাডভোকেট আজমল হোসেন খোকন।
দুদকের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট আসিফ হোসাইন এবং রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার আসামিপক্ষের আইনজীবী জয়নুল আবেদীন আদালত চত্বরে বলেন, “মামলাটা এতোটা বিদ্বেষপূর্ণ ছিল যে, যারা আপিল করেছে এবং যারা আপিল করতে পারেনি-সবাইকে খালাস দেওয়া হয়েছে। এ মামলায় যে বেল বন্ড দেওয়া হয়েছিল সেগুলোও আর থাকল না।”
আসামিপক্ষের আরেক আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, “সাধারণত আপিল অ্যালাও করা হলে হাই কোর্টের রায় বাতিল করা হয়। এই মামলা এতটাই বিদ্বেষপূর্ণ ছিল আদালত হাই কোর্ট এবং বিচারিক আদালত- দুই রায়ই বাতিল ঘোষণা করেছেন।
“আদালত এই রায়কে ‘ঐতিহাসিক’ ঘোষণা করে বলেছে যে, ‘এই মামলায় আপিলকারীদের যে সম্মানহানি ঘটেছে তার একটা চিরসমাপ্তি ঘটবে; এবং তাদের ইনোসেন্সটা পুনরুজ্জীবিত হবে।
“আদলত প্রত্যাশা করেন, এ ধরনের ‘ম্যালিশাস’ প্রসিকিউশন আর কখনও কেউ করবে না। এটি একটি ঐতিহাসিক রায় এবং বাংলাদেশের আদালতে এ রায় যুগ যুগ ধরে রেফারেন্স হিসেবে থাকবে।”
ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, “শেখ হাসিনা সংসদে দাঁড়িয়ে বলতেন যে খালেদা জিয়া এতিমের টাকা মেরে খেয়েছেন। আজ এ রায়ের মাধ্যমে প্রমাণিত হলো দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ইনোসেন্ট।সর্বোচ্চ আদালত বলেছে- ফাউন্ড নট গিলটি।”
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বকশীবাজারে কারা অধিদপ্তরের প্যারেড গ্রাউন্ডে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ মো. আখতারুজ্জামান অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন।
একইসঙ্গে তার ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমানকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
ওই বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে হাই কোর্টে আপিল করেছিলেন খালেদা জিয়া, কাজী সালিমুল হক কামাল এবং ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ।
দণ্ডিত অপর তিনজন তারেক রহমান, কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান পলাতক থাকায় আপিল করতে পারেননি।
এদিকে খালেদা জিয়ার সাজা বৃদ্ধি চেয়ে দুদকও হাই কোর্টে আবেদন করে।
দুই আবেদনের শুনানি করে ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চ খালেদা আসামিদের আপিল আবেদন খারিজ করে দেয়। আর দুদকের আবেদন মঞ্জুর করে খালেদা জিয়ার সাজা পাঁচ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর করে।
ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি চেয়ে ২০১৯ সালের ১৪ মার্চ আপিল বিভাগে আবেদন করেন খালেদা জিয়া। সরকার পরিবর্তনের পর সেই আবেদনের ওপর শুনানি শেষে গত বছরের ১০ নভেম্বর আপিল বিভাগ তার সাজা স্থগিত করে আপিলের অনুমতি দেয়।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৭ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় এ মামলা দায়ের করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের উপপরিচালক হারুন অর রশিদ।
২০০৯ সালের গত ৫ অগাস্ট খালেদা জিয়া, তারেক রহমান, জিয়াউর রহমানের ভাগনে মোমিনুর রহমান, সাবেক সাংসদ কাজী সলিমুল হক কামাল, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্যসচিব কামালউদ্দিন সিদ্দিকী ও সরফুদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।
একই বছরের ৭ সেপ্টেম্বর এ মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণ করে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত।