কুয়েতে সংকটে ৮০ বাংলাদেশি শ্রমিক, দূতাবাসের উদ্যোগে সমাধানের চেষ্টা
কুয়েতে একটি ক্লিনিং কোম্পানিতে কর্মরত ৮০ জন বাংলাদেশি শ্রমিক বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে কর্মবিরতি দেওয়ায় কোম্পানির রোষানলে পড়েছেন। তাদের সমস্যা সমাধানে কাজ করছে বাংলাদেশ দূতাবাস।
মঙ্গলবার দেশটির ‘ক্লিনটি জেনারেল ট্রেডিং অ্যান্ড ক্লিনিং কোম্পানি’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ওই শ্রমিকরা তাদের মালিকের কাছে বিভিন্ন দাবি উপস্থাপন করেন।
তাদের দাবিগুলোর মধ্যে ছিল: নির্ধারিত ৮ ঘণ্টার পর অতিরিক্ত সময় কাজ করতে না চাওয়া, কাজের মেয়াদ এক থেকে দুই বছর বৃদ্ধি, আকামা (কাজের অনুমতি) জটিলতা দূরীকরণ, বতাকা বা হাওয়াইয়া (সিভিল আইডি) প্রদান, বেতন প্রতি মাসের ১০ তারিখের আগেই পরিশোধ এবং এক বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা।
বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম কল্যাণ উইংয়ে মিনিস্টার আবুল হোসেন এসব তথ্য জানিয়ে বলেন, “কোম্পানির মালিকপক্ষ প্রথমে এসব দাবি মানতে অনাগ্রহ প্রকাশ করলেও, পরবর্তীতে দাবি মেনে নেয়।”
কিন্তু সমস্যার সমাধানের পর শ্রমিকদের কাজে যোগ দেওয়ার কথা থাকলেও, তারা স্থানীয় পাবলিক অথরিটি ফর ম্যানপাওয়ার অফিসে গিয়ে একই অভিযোগ করেন। এতে বিষয়টি আরও জটিল হয়ে ওঠে। স্থানীয় আইন অনুযায়ী কর্মবিরতি নিষিদ্ধ হওয়ায় শ্রমিকরা আইনি জটিলতায় পড়ার শঙ্কা তৈরি হয়।
এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কোম্পানির পক্ষ থেকে শ্রমিকদের জানানো হয়, তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর জন্য এয়ার টিকেট প্রস্তুত করা হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় শ্রমিকরা জানান, তাদের পদত্যাগ পত্রে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করা হচ্ছে।
শ্রম কল্যাণ উইংয়ে মিনিস্টার আবুল হোসেন, “শ্রমিকরা দূতাবাসে এসে তাদের সমস্যার কথা বলেছেন, তাদের কথা শুনেছি এবং সব সমস্যা সমাধান করে দেওয়া হয়েছে।”
তিনি আরও জানান, “দূতাবাস প্রবাসীদের প্রকৃত সেবা দিয়ে যাচ্ছে। তবে সবসময় প্রত্যাশা শতভাগ পূরণ করা সম্ভব হয় না। শুক্র ও শনিবার ছুটির দিন হওয়ায়, রোববার শ্রমিকদের স্বার্থে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
কয়েকজন শ্রমিক জানান, দূতাবাসের নেওয়া পদক্ষেপগুলো সঠিক ছিল। তবে পাবলিক অথরিটি ফর ম্যানপাওয়ার অফিসে গিয়ে অভিযোগ করা তাদের ভুল হয়েছে।
শ্রমিকরা জানান, বেদু ফিরোজ নামে একজন প্রবাসীর কাছ থেকে তারা প্রতিটি ভিসার জন্য ৭-৮ লাখ টাকা খরচ করে কুয়েতে এসেছেন। সম্প্রতি বেদু ফিরোজকে ভিসা জালিয়াতি ও অর্থপাচারের অভিযোগে গ্রেপ্তার করে কুয়েত প্রশাসন। তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
কুয়েত বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবাজার। এখানে দীর্ঘদিন ভিসা বন্ধ থাকার পর বর্তমানে বিশেষ অনুমোদনের মাধ্যমে ভিসা দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে ভিসা ব্যবসায়ীরা বেশি মূল্যে ভিসা বিক্রি করছেন, এটি প্রবাসীদের জন্য বাড়তি আর্থিক চাপ সৃষ্টি করেছে বলে জানান অভিবাসন সংশ্লিষ্টরা।