শুক্রবার ১০ জানুয়ারি ২০২৫, পৌষ ২৭ ১৪৩১, ১০ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

ফের সিলেট-ম্যানচেস্টার ফ্লাইট বন্ধের শঙ্কা, উদ্বিগ্ন প্রবাসীরা

 প্রকাশিত: ০৮:২৯, ১০ জানুয়ারি ২০২৫

ফের সিলেট-ম্যানচেস্টার ফ্লাইট বন্ধের শঙ্কা, উদ্বিগ্ন প্রবাসীরা

সিলেট-ম্যানচেস্টার রুটে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটের অনলাইনে টিকিট বুকিং আগামী এপ্রিলের পর থেকে বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে এই রুটে সরাসরি ফ্লাইটটি বন্ধ হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

যদিও কী কারণে টিকিট বুকিং নেওয়া হচ্ছে না, তা এখনো স্পষ্ট করেনি বিমান কর্তৃপক্ষ। লাভজনক থাকা স্বত্বেও এ রুটে ফ্লাইট বন্ধের কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা কাটছে না।

ফ্লাইটটি চালু হওয়াতে যেভাবে প্রবাসীদের উচ্ছ্বাস ছিল, তেমনি বন্ধ হওয়ার শঙ্কায় প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে উঠেছেন।

ইতোমধ্যে ম্যানচেস্টার ফ্লাইট বন্ধের পাঁয়তারার প্রতিবাদে সিলেটেও মানববন্ধন সমাবেশ থেকে সপ্তাহে তিন দিনসহ ফ্লাইট চালু অব্যাহত রাখার দাবি জানানো হয়েছে।

অবশ্য ম্যানচেস্টার ফ্লাইট চালু রাখতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ চালিয়ে যাচ্ছেন সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ। বৃহস্পতিবার বিমান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী সিলেটের মানুষের কথা বিবেচনায় নিয়ে ফ্লাইট চালু রাখতে বেসামরিক বিমান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে মৌখিক প্রস্তাবনা দিয়েছি। এ নিয়ে আলোচনা অব্যাহত রাখা হবে।

যুক্তরাজ্যপ্রবাসী দেওয়ান জাকির হোসেন বলেন, ম্যানচেস্টার রুটে বিমানের বাণিজ্যিক সফলতা রয়েছে। তারপরও অদৃশ্য কারণে সরাসরি ফ্লাইট চালু রাখার পক্ষে নয় বিমান কর্তৃপক্ষ।

যদিও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সিলেটের দায়িত্বরত কর্মকর্তা বলছেন, হজ ও হিত্রো ফ্লাইট বাড়াতে ম্যানচেস্টার রুটে ফ্লাইট বন্ধের আশঙ্কা করা হলেও অফিসিয়ালি কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।

ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক মো. হাফিজ আহমদ বলেন, সিলেট-ম্যানচেস্টার ফ্লাইটের আগামী এপ্রিলের পর থেকে অনলাইনে বুকিং নিচ্ছে না বিমান কর্তৃপক্ষ। ফলে ফ্লাইট বন্ধ হওয়ার গুঞ্জন থেকে অনেকে ফোনে জানতে চেয়েছেন। যদিও এ বিষয়ে অফিসিয়ালি কোনো সিদ্ধান্তের বিষয়ে আমরা অবগত নই।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সিলেটের ব্যবস্থাপক শাহ নেওয়াজ মজুমদার বলেন,  ম্যানচেস্টার ফ্লাইটের টিকিট অফিসিয়ালি ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত অনুমোদন (পারমিট) দেওয়া আছে। সম্ভবত; হজ ফ্লাইট অপারেশন করতেই এই ফ্লাইট বন্ধ রাখা হতে পারে। তবে এখনো অফিসিয়ালি কিছুই জানা যায়নি। সিলেট থেকে প্রতি বৃহস্পতি ও মঙ্গলবার ম্যানচেস্টার ফ্লাইট চলাচল করে।  

তিনি বলেন, এর আগে সিলেট থেকে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার রুটে পৃথক ২টি ফ্লাইট ২০২১ ও ২০২২ চালু করা হলেও এয়ারক্রাফট ও ক্রো সংকটের কারণে ফ্লাইটগুলো বন্ধ করা হয়েছিল।  

ম্যানচেস্টার ফ্লাইট বন্ধের শঙ্কা ইস্যুতে সিলেট জেলার সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান রুশো চৌধুরী বলেন, ফ্লাইট বন্ধে সিভিল এভিয়েশনকে এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ কোনো চিঠি ইস্যু করেনি। আর টিকিট ইস্যু না করা হলে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় চিঠি দেওয়ার কথা। সেটা করেননি বিমান কর্তৃপক্ষ। উপরন্তু কিছু না জানিয়ে তারা অনলাইনে টিকিট বুকিং নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। তারা চাচ্ছেন ম্যানচেস্টার ফ্লাইট বন্ধ করে হিত্রো ফ্লাইট বাড়াতে।  

বিমান কর্তৃপক্ষের সিলেটবিদ্বেষী মনোভাবের কারণে এমনটি করা হচ্ছে মনে করেন তিনি। ম্যানচেস্টার ফ্লাইট সব সময় হাউজফুল থাকে। অথচ বিমান কর্তৃপক্ষ সিস্টেম লস দেখায়। অথচ ৭০০ পাউন্ডের টিকিট ১৫০০ পাউন্ডেও পাচ্ছেন না যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত সিলেটিরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওসমানী বিমানবন্দরের এক কর্মকর্তা বলেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ার লাইন্স সরকারের টাকায় ব্যবসা করে। বিমান কর্মকর্তাদের অস্বচ্ছ ব্যবহার প্রশ্নবিদ্ধ। বিশেষ করে যাত্রীদের প্রতি অশ্রদ্ধা সর্বদা কাজ করে। বিমানের চরিত্র এ ধরনের হওয়া উচিত না।  এর আগে সিলেট-চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার রুটে বিমানের ফ্লাইট চালু করা হলেও থেমে থেমে বছরখানেক চলার পর এয়ারক্রাফট ও ক্রো সংকট দেখিয়ে বন্ধ রাখা হয়। অথচ যুক্তরাজ্য  ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা সিলেটের প্রবাসীরা দেশে আসলে সরকার রাজস্ব পায়। সে ক্ষেত্রে বিমান কর্তৃপক্ষ তাদের প্রতি আরো নমনীয় হওয়া উচিত ছিল।

প্রবাসীরা জানান, যুক্তরাজ্যের নর্থ ইংল্যান্ডে অন্তত আড়াই থেকে তিন লাখ প্রবাসীর অধিকাংশই সিলেটের। ম্যানচেস্টার-সিলেট সরাসরি ফ্লাইটের সুবিধা পাচ্ছেন বার্মিংহাম, নিউক্যাসল, সান্ডারল্যান্ড, গ্রেটার ম্যানচেস্টার ও পুরো স্কটল্যান্ডের প্রবাসীরা। নির্বিঘ্ন যাত্রার কারণে ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এই রুট। তবে প্রবাসীদের অভিযোগ, লাভজনক হওয়া সত্ত্বেও এই রুটে তিনটি একটি ফ্লাইট গত অক্টোবরে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আরো দুটি ফ্লাইট বন্ধের পাঁয়তারা চলছে।

সিভিল এভিয়েশন সূত্র জানায়, যুক্তরাজ্যপ্রবাসী সিলেটিদের কথা চিন্তা করে ২০২০ সালের ৭ জানুয়ারি শুরু হয় সিলেট-ম্যানচেস্টার রুটে সরাসরি ফ্লাইট। ওইদিন ২৯৭ যাত্রী নিয়ে ম্যানচেস্টারের উদ্দেশ্যে আকাশে উড়াল দেয় ফ্লাইটটি। করোনা মহামারিতে ফের বন্ধ হলেও ২০২১ সালে আবারো চালু হয় ফ্লাইটটি। শুরুতে এ রুটে তিনটি ফ্লাইট পরিচালিত হতো। তবে, গত অক্টোবর থেকে বন্ধ করা হয় একটি। এবার অপর ২টি ফ্লাইট বন্ধের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বর্তমানে প্রতি সপ্তাহে সরাসরি সিলেট-ম্যানচেস্টার রুটে দুটি ও হিথ্রো বিমানবন্দরে চারটি ফ্লাইট পরিচালনা করছে বাংলাদেশ বিমান। এছাড়া সিলেট--চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার রুটে পৃথক ২টি ফ্লাইট ২০২১ ও ২০২২ চালু করা হয়। কিন্তু বছর ঘুরতে না ঘুরতে এয়ারক্রাফট ও ক্রো সংকটের দেখিয়ে সেই ফ্লাইটগুলোও বন্ধ করা হয়েছিল।

প্রবাসীরা জানান, এই রুটে ফ্লাইটের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে এবং ফ্লাইট বাড়াতে ম্যানচেস্টারের সহকারী হাইকমিশনের কার্যালয়ে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়েছে। ফ্লাইট চালু রাখতে ইতোমধ্যে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।

এদিকে, ম্যানচেস্টার রুটে বিমানের ফ্লাইট বন্ধের পাঁয়তারার প্রতিবাদে এনআরবি সোসাইটি ইউকের উদ্যোগে গত ৫ জানুয়ারি সিলেটে বাংলাদেশ বিমান অফিসের সামনে এক প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এরও আগে প্রবাস বাংলা ইউকের উদ্যোগে একই ইস্যুতে গত ২৫ ডিসেম্বর সিলেট কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়।