শুক্রবার ১০ জানুয়ারি ২০২৫, পৌষ ২৭ ১৪৩১, ১০ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

চীন যাচ্ছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা, কী থাকছে আলোচনায়?

 প্রকাশিত: ২০:৫৭, ৯ জানুয়ারি ২০২৫

চীন যাচ্ছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা, কী থাকছে আলোচনায়?

ক্ষমতার পালাবদলের মধ্য দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর এই প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরে চীন যাচ্ছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।

চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আমন্ত্রণে চলতি মাসের ২০ থেকে ২৪ তারিখ পর্যন্ত পাঁচ দিনের সফরে বেইজিং যাচ্ছে তিনি।

বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এ সফরকে ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’ বলে দাবি করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জনকূটনীতি অনুবিভাগের মহাপরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল আলম।

তিনি বলেন, “চীনের সাথে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরো সুদৃঢ় ও গভীর করার লক্ষ্যে এ সফর একটি বড় সুযোগ।”

এখনও এক সপ্তাহের বেশি বাকী থাকায় সফরের ‘এজেন্ডায়’ সংযোজন ও বিয়োজন হতে পারে তুলে ধরে এ কর্মকর্তা বলেন, “এই সফরকালে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সাথে এক দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মিলিত হবেন। বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা হবে।”

তিনি বলেন, এই সফরে বাংলাদেশ ও চীনের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ভবিষ্যৎ রূপরেখা প্রণয়নকল্পে দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে চলমান সহযোগিতার অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হবে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণ, কৃষি, শিক্ষা, অবকাঠামো, নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে সহযোগিতা, রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধান।

২০২৪ সালের জুলাইয়ে দেশে যখন সরকারি চাকরির কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন বেগবান হতে শুরু করে তখন চীনের প্রধানমন্ত্রী লি চিয়াংয়ের আমন্ত্রণে বেইজিং সফর করেন তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নিকট প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত সফরের দুই সপ্তাহ পর ৮ থেকে ১০ জুলাই বেইজিং সফরে গিয়েছিলেন তিনি। তবে সফর সংক্ষিপ্ত করে ফিরে আসেন শেখ হাসিনা।

সফরে তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিংপিং ও প্রধানমন্ত্রী লি চিয়াং এর সঙ্গে বৈঠকসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

এই সফরে দুই দেশের মধ্যে ২১টি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয় এবং সাতটি প্রকল্পের ঘোষণা আসে।

চীন সফরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে ডাকা সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, অনুদান, সুদমুক্ত ঋণ, রেয়াতি ঋণ ও বাণিজ্যিক ঋণে আকারে বাংলাদেশকে দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ দিতে চীন সম্মত হয়েছে।

সফরের আগে দেশের আর্থিক সংকট মোকাবিলায় চীনের কাছ থেকে ৫০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ চীনা মুদ্রা ইউয়ানে ঋণসহায়তার বিষয়টি আলোচনায় আসে। তবে সফরে বিষয়টি সুরাহা না হলেও বাজেট সহায়তার আশ্বাস দেওয়া হয় চীনের তরফে।

ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর এবারের সফরে বাজেট সহায়তার আলোচনাটি থাকবে কি না এবং কোনো চুক্তি স্বাক্ষর এজেন্ডায় আছে কি না, জানতে চাইলে মোহাম্মদ রফিকুল আলম বলেন, “এখনও সংযোজন-বিয়োজনের সুযোগ আছে। এখনই তাই কিছু বলছি না।”

এ সফরের কর্মসূচি নিয়ে বলেন, “বাংলাদেশ এবং চীন ২০২৫ সালে তাদের কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন করতে চলেছে। এ লক্ষ্যে উভয় দেশ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এ সফরে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ৫০তম বার্ষিকী উদ্যাপনের শুভ সুচনা হবে।

“বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে বার্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যদিও এই বাণিজ্য ভারসাম্য বাংলাদেশের অনুকূলে নয়। এই সফরে বাণিজ্য ভারসাম্য পুনর্গঠনের পাশাপাশি বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে চীনা বিনিয়োগ বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।”

এছাড়াও, বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে চীনের সাংহাই এর ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সাথে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা একটি মিটিং করবেন।

এ সময় শেখ হাসিনা কোন স্ট্যাটাসে ভারতে আছে তা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দিল্লির কাছে জানতে চেয়েছে কি না, প্রশ্ন করলে মুখপাত্র বলেন, “সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে ফেরত চাওয়ার সাথে ভারতে তার স্ট্যাটাসের কোন সম্পর্ক নাই।

“বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আমরা তাকে বাংলাদেশে ফেরত চাইছি। এখানে ইন্ডিয়াতে উনি (শেখ হাসিনা) কোন স্ট্যাটাসে আছেন এটা বিবেচ্য কেন হবে?”

কাউকে ফেরাতে চিঠি দেওয়া হলে অপর রাষ্ট্রের কতদিনে উত্তর দিতে হয় বা না দিলে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করার কূটনৈতিক নিয়ম কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা আমাদের অনুরোধ জানিয়েছি। আমরা ফেরত চেয়েছি। আমরা ভারতের উত্তরের অপেক্ষায় আছি।

“মাঝখানে কী হবে বা এটার কূটনৈতিক রীতিনীতি কী এটা ওপেন ফর ইন্টারপ্রিটিশন। কূটনীতির ধরাবাঁধা অনেক কিছুই থাকে না।”

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা চিঠির উত্তর দিতে তাগিদপত্র পাঠাবেন ও রিমাইন্ডার দেবেন বলেছিলেন তুলে ধরে সেটি কবে নাগাদ হতে পারে জানতে চাইলে মুখপাত্র বলেন, “আমরা এই মুহূর্তে ভারতের উত্তরের অপেক্ষায় আছি।”

সাম্প্রতিক সময়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক’র ভাইস প্রেসিডেন্ট এর সৌজন্য সাক্ষাত বিষয়ে তিনি বলেন, “অবৈধ অর্থ পাচার রোধ এবং বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাচারকৃত সম্পদ ফেরত আনার বিষয়েও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তা কামনা করেন তিনি।

“ভাইস প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার উদ্যোগসমূহ বিশেষতঃ প্রাতিষ্ঠানিক, ও আর্থিক খাতে সংস্কার এবং দুর্নীতি দমনে পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেন।”

যুক্তরাজ্যের এমপি রূপা হকের নেতৃত্বে যুক্তরাজ্যভিত্তিক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্যবসায়ীদের সংগঠন ইউকেবিসিসিআই এর একটি প্রতিনিধিদল ৪ থেকে ৯ জানুয়ারি বাংলাদেশ সফর করছেন তুলে ধরে তিনি বলেন, তারা বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ সম্ভাবনা যাচাইসহ বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য বাণিজ্য সম্পর্ক সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে এ সফর করছেন।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে তাদের সাক্ষাতে বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদার, বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও নতুন বিনিয়োগের ক্ষেত্র নিয়ে আলোচনা হয়। উপদেষ্টা বিদেশি মিডিয়ায় বাংলাদেশ বিরোধী মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচারণা রোধ করতে এবং বাংলাদেশের বিদ্যমান সম্প্রীতি ও সৌহার্দের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরতে সবাইকে আহবান জানান, বলেছেন মুখপাত্র।