শুক্রবার ১০ জানুয়ারি ২০২৫, পৌষ ২৭ ১৪৩১, ১০ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

রাতভর বিক্ষোভ, এজলাসে আগুন: বকশীবাজারে হলো না শুনানি

 প্রকাশিত: ১৪:৫৭, ৯ জানুয়ারি ২০২৫

রাতভর বিক্ষোভ, এজলাসে আগুন: বকশীবাজারে হলো না শুনানি

পুরান ঢাকার বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ আদালতের এজলাস কক্ষ পুড়ে যাওয়ায় বৃহস্পতিবার পিলখানার বিস্ফোরক মামলার শুনানি হয়নি।

রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি বোরহান উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আদালত পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এখানে বিচারকাজ করা সম্ভব নয়।

“বিজ্ঞ বিচারক এসেছিলেন। তিনি পুড়ে যাওয়া ভবন পরিদর্শন করেছেন। এরপর চলে গেছেন।”

মামলার শুনানির দিন পরে ঠিক করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

সাড়ে পনের বছর আগে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিস্ফোরক আইনের মামলায় এদিন আলিয়া মাদ্রাসার বিশেষ আদালতে শুনানি হওয়ার কথা ছিল।

তবে মাদ্রাসা মাঠে অস্থায়ী আদালত বসানোর প্রতিবাদে রাতভর আন্দোলনের পর বৃহস্পতিবার সকালে সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখান প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা। তাদের আন্দোলনের মধ্যেই রাতে আগুনে পুড়েছে অস্থায়ী আদালতের এজলাসসহ বিভিন্ন অবকাঠামো।

দুপুর পৌনে ১২টার দিকে পুড়ে যাওয়া এজলাস কক্ষ পরিদর্শন করেন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক ইব্রাহিম মিয়া। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউশন টিম, আইনজীবী ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। বিচারক রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে ১২টা ১০ মিনিটে চলে যান।

প্রসিকিউশন টিমের প্রধান বোরহান উদ্দিন বলেন, “আজকের প্রেক্ষাপটে আদালত পরিচালনা করার মত পরিবেশ নাই। বিচারক এটা অবহিত হয়েছেন। মামলার পরবর্তী তারিখটা কবে হবে- আমাদের ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের সাথে কথা বলে বিচারক ঠিক করবেন।

“তারিখটা আজকেই জানিয়ে দেয়া হবে। দ্রুততম সময়ের মধ্যেই তারিখ নির্ধারণ করা হবে। জামিন শুনানির বিষয় নিষ্পত্তি হোক- এটা নিয়ে আমরা সবাই আন্তরিক ছিলাম। তা তো হলো না।”

অস্থায়ী আদালতের আগুনের কারণ সম্পর্কে মন্তব্য করতে রাজি হননি লালবাগ ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান।

তিনি বলেন, “ভোরে খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনি। আগুনে এজলাস কক্ষের চেয়ার, টেবিল, এসিসহ সবকিছু পুড়ে গেছে।”

ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ডিউটি অফিসার লিমা খানম বলেন, “ভোর ৪টা ২২ মিনিটে বকশিবাজারে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে আগুনের খবর পেয়ে আমাদের দুইটি ইউনিট পাঠানো হয়। কিন্তু সেখানে গিয়ে লোকজনের বাধার মুখে আমাদের কর্মীরা ভেতরে ঢুকতে পারেনি।

“পরে ভোর ৫টার পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ভেতরে গেলেও কাজ করতে হয়নি। ততোক্ষণে এজলাসকক্ষ পুড়ে গেছে।”

আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে আদালত বসানোর সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ।
আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে আদালত বসানোর সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ।


বুধবার রাত থেকে শিক্ষার্থীরা আলিয়া মাদ্রসা মাঠে অবস্থান নেন। বৃহস্পতিবার সকালে তারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মোড়, পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগার, বকশীবাজার অরফানেজ রোড ব্যারিকেড দিয়ে আটকে দেন। পরে পরিস্থিতে নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে যায় সেনবাহিনী ও পুলিশ।

শিক্ষার্থীদের দাবি, বিচার কাজ চলমান থাকলে শিক্ষা কার্যক্রম বিঘ্ন হয়। এর আগে বেশ কয়েকবার মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দেওয়ার পরও সমাধান হয়নি।

দুপুর সোয়া ১টার দিকে মাদ্রাসা মাঠের ফটক বন্ধ দেখা গেছে। ভেতরে বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সপ্তাহের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান চলছিল।

২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদর দপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোড়ন তোলে ওই ঘটনা।

এই ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। হত্যা মামলায় খালাস বা সাজাভোগ শেষে বিস্ফোরক মামলার কারণে ৪৬৮ জনের মুক্তি আটকে আছে।

মাদ্রাসা মাঠে আদালত বসানোর প্রতিবাদে সড়কে আলিয়ার শিক্ষার্থীরা

হত্যা মামলায় ৮৫০ জনের বিচার শেষ হয় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর। তাতে ১৫২ জনের ফাঁসি, ১৬০ জনের যাবজ্জীবন ও ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। খালাস পান ২৭৮ জন।

২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর সেই মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায়ও হয়ে যায় হাই কোর্টে। তাতে ১৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয় ১৮৫ জনকে। আরো ২২৮ জনকে দেওয়া হয় বিভিন্ন মেয়াদে সাজা। খালাস পান ২৮৩ জন।

হাই কোর্টের রায়ের আগে ১৫ জনসহ সব মিলিয়ে ৫৪ জন আসামি মারা গেছেন। হত্যা মামলায় হাই কোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে ২২৬ জন আসামি আপিল ও লিভ টু আপিল করেছেন। অন্যদিকে হাই কোর্টে ৮৩ জন আসামির খালাস এবং সাজা কমানোর রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এসব আপিল ও লিভ টু আপিল এখন শুনানির অপেক্ষায়।

অন্যদিকে বিস্ফোরক আইনের মামলায় ৮৩৪ জন আসামির বিরুদ্ধে বিচারকাজ শুরু হয়েছিল ২০১০ সালে। কিন্তু মাঝপথে বিস্ফোরক মামলার কার্যক্রম এক প্রকার স্থগিত রেখে শুধু হত্যা মামলার সাক্ষ্য উপস্থাপন করে রাষ্ট্রপক্ষ। যে কারণে এই মামলার বিচার ঝুলে যায়।

ক্ষমতার পালাবদলের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনার তদন্ত পুনরায় শুরুর দাবি উঠছে। গত ১৯ ডিসেম্বর অভিযোগ নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যান শহীদ পরিবারের সদস্যরা।

এই হত্যাকাণ্ড পুনঃতদন্তের জন্য গত ২৪ ডিসেম্বর আ ল ম ফজলুর রহমানকে প্রধান করে কমিশন গঠন করে ৯০ দিনের সময় বেঁধে দিয়েছে সরকার।