মাদ্রাসা মাঠে আদালত বসানোর প্রতিবাদে সড়কে আলিয়ার শিক্ষার্থীরা
পুরান ঢাকার বকশী বাজারের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে অস্থায়ী আদালত বসানোর প্রতিবাদে সড়কে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা।
রাতভর আন্দোলনের পর বৃহস্পতিবার সকালে সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন তারা।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সামনের সড়ক, বকশী বাজার মোড় এবং আশপাশের গলির প্রবেশমুখ বাঁশ দিয়ে আটকে রেখেছেন শিক্ষার্থীরা। তাতে বকশীবাজার মোড় থেকে শিক্ষা বোর্ড এবং চকবাজারের সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
বিডিআর বিদ্রোহের জন্য মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী বিশেষ আদালতে এদিন বিচারকাজ চলার কথা। সেজন্য ভোরে পুলিশ ও এপিবিএন সদস্যরা এলে তাদেরকে সেখানে প্রবেশে বাধা দেন শিক্ষার্থীরা।
আহাদ উল্লাহ নামের এক শিক্ষার্থী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের মাঠ দীর্ঘদিন ধরে সিটি করপোরেশন দখল করে রেখেছিল। আমরা বিশ্বাস করি, জুলাই বিপ্লবের পর এই মাঠ আমাদেরই থেকে যাবে।”
এই মাঠ কেবল শিক্ষার্থীদের মন্তব্য করে সকাল ৯টার দিকে তিনি বলেন, “আগামী এক ঘণ্টার মধ্যে আমাদের মাঠের বিষয়ে সমাধান চাই । দ্রুত সমাধান না আসলে আমরা শিক্ষার্থীরা সমন্বয় করে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলব।"
আরেক শিক্ষার্থী বলেন, “এখানে কাউকে ঢুকতে দেয়া হবে না, কিসের আদালত? বিচারের জায়গা মাঠ হবে কেন?"
জানতে চাইলে চকবাজার থানার ওসি রেজাউল হোসেন বলেন, “ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার মাঠে অস্থায়ী আদালত বসিয়ে বিডিআর বিদ্রোহের বিচারকার্য সম্পাদনের কথা। আজকে আদালত বসবে।
“সেটা যাতে না হয়, সেজন্য ছাত্ররা রাস্তায় নেমেছে, আমরা পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করছি।"
২০২৩ সালের ডিসেম্বরে সংস্কার কাজ শেষে আলিয়া মাদ্রাসার মাঠকে ‘বকশীবাজার কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ’ হিসেবে উদ্বোধন করতে গিয়ে তোপের মুখে পড়েন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) তৎকালীন মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। মাঠটি সিটি করপোরেশন দখল করছে-এমন অভিযোগ তুলে উদ্বোধনের আগেই বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদর দপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোড়ন তোলে ওই ঘটনা।
এই ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। হত্যা মামলায় খালাস বা সাজাভোগ শেষে বিস্ফোরক মামলার কারণে ৪৬৮ জনের মুক্তি আটকে আছে।
হত্যা মামলায় ৮৫০ জনের বিচার শেষ হয় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর। তাতে ১৫২ জনের ফাঁসি, ১৬০ জনের যাবজ্জীবন ও ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। খালাস পান ২৭৮ জন।
২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর সেই মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায়ও হয়ে যায় হাই কোর্টে। তাতে ১৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয় ১৮৫ জনকে। আরো ২২৮ জনকে দেওয়া হয় বিভিন্ন মেয়াদে সাজা। খালাস পান ২৮৩ জন।
হাই কোর্টের রায়ের আগে ১৫ জনসহ সব মিলিয়ে ৫৪ জন আসামি মারা গেছেন। হত্যা মামলায় হাই কোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে ২২৬ জন আসামি আপিল ও লিভ টু আপিল করেছেন। অন্যদিকে হাই কোর্টে ৮৩ জন আসামির খালাস এবং সাজা কমানোর রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এসব আপিল ও লিভ টু আপিল এখন শুনানির অপেক্ষায়।
অন্যদিকে বিস্ফোরক আইনের মামলায় ৮৩৪ জন আসামির বিরুদ্ধে বিচারকাজ শুরু হয়েছিল ২০১০ সালে। কিন্তু মাঝপথে বিস্ফোরক মামলার কার্যক্রম এক প্রকার স্থগিত রেখে শুধু হত্যা মামলার সাক্ষ্য উপস্থাপন করে রাষ্ট্রপক্ষ। যে কারণে এই মামলার বিচার ঝুলে যায়।
ক্ষমতার পালাবদলের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনার তদন্ত পুনরায় শুরুর দাবি উঠছে। গত ১৯ ডিসেম্বর অভিযোগ নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যান শহীদ পরিবারের সদস্যরা।
পনের বছর আগে এই হত্যাকাণ্ড পুনঃতদন্তের জন্য গত ২৪ ডিসেম্বর আ ল ম ফজলুর রহমানকে প্রধান করে কমিশন গঠন করে ৯০ দিনের সময় বেঁধে দিয়েছে সরকার।