বৃহস্পতিবার ০৯ জানুয়ারি ২০২৫, পৌষ ২৬ ১৪৩১, ০৯ রজব ১৪৪৬

ব্রেকিং

লন্ডন ক্লিনিকে খালেদা জিয়া একনেক সভায় ৪ হাজার ২৪৬ কোটি টাকার ১০টি প্রকল্প অনুমোদন ইসলামী ব্যাংকের অর্থ ‘আত্মসাৎ’, এস আলমের ছেলের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা হচ্ছে সম্পত্তির নিলাম ঠেকাতে আদালতে যাচ্ছে এস আলম গ্রুপ লন্ডনে খালেদা জিয়া, মাকে স্বাগত জানান তারেক রহমান ফ্যাক্ট চেকারদের আর ব্যবহার করবে না ফেইসবুক, ইনস্টাগ্রাম নির্বাচকদের সঙ্গে দুই দফায় আলোচনার পর ‘সময় নিলেন’ তামিম তিব্বতে ভূমিকম্পে অন্তত ১২৬ জনের প্রাণহানি, জীবিতদের খোঁজে অনুসন্ধান চলছে বেনজীরের স্ত্রী-কন্যার আয়কর নথি জব্দের আদেশ মোটরসাইকেল, ফ্রিজ, এসি শিল্পে আয়কর দ্বিগুণ হল নোট-গাইডের বিরুদ্ধে ‘কঠোর অবস্থানে’ সরকার: এনসিটিবি চেয়ারম্যান শেখ হাসিনার ভিসার মেয়াদ বাড়িয়েছে ভারত হাসিনা, রেহানা ও তাদের সন্তানদের ব্যাংক হিসাব তলব

জাতীয়

কিশোরগঞ্জে ৭৩১ কোটি টাকার বাইপাস প্রকল্প বন্ধ, হাওরবাসীর দুর্ভোগ

 প্রকাশিত: ১০:৪০, ৮ জানুয়ারি ২০২৫

কিশোরগঞ্জে ৭৩১ কোটি টাকার বাইপাস প্রকল্প বন্ধ, হাওরবাসীর দুর্ভোগ

কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের যানজট কমাতে এবং শহীদ সৈয়দ নজরুল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও হাওর অঞ্চলে নির্বিঘ্নে যাতায়াতের জন্য ছয় বছর আগে ৭৩১ কোটি টাকা ব্যয়ে আট কিলোমিটার বাইপাস সড়ক নির্মাণসহ দুই প্রান্তের সড়কের উন্নয়ন কাজ শুরু হয়।

কিন্তু মূল কাজ শুরুর আগেই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে পুরো উন্নয়ন কাজ। এতে অর্থ অপচয়ের পাশাপাশি প্রতিদিনই যানজটে নাকাল হচ্ছেন কিশোরগঞ্জ শহরের মানুষ।

হাওর অঞ্চলে অবস্থিত ইটনা, মিঠামাইন, অষ্টগ্রাম ও করিমগঞ্জ (অর্ধেক) উপজেলার লোকজনদের গন্তব্যে যাতায়াতের জন্য কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের মধ্য দিয়ে রাস্তা অতিক্রম করতে হয়। একইভাবে পাকুন্দিয়া, হোসেনপুর, কটিয়াদী, নিকলী, বাজিতপুর ও কুলিয়ারচরসহ অন্য উপজেলার লোকজনকেও শহীদ সৈয়দ নজরুল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসতে হয় শহরের ভেতর দিয়ে।

এর ফলে সরু পথ ও অতিরিক্ত যানবাহনে জেলা শহরের সড়কগুলিতে ভয়াবহ যানজটের সৃষ্ট হয়। এর ওপর পর্যটন মৌসুমে ‘বাড়তি যানবাহনের’ চাপে পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়ে পড়ে।

এ নিয়ে দীর্ঘদিনের ক্ষোভ রয়েছে জেলা শহরের মানুষের। বাইপাস না হওয়ায় ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা।

‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনের জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ফারুকুজ্জামান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “শহরে যানজটের কারণে নিত্যদিনের চলাফেরাসহ জরুরি প্রয়োজনে দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছানো কোনোভাবেই সম্ভব হচ্ছে না। যানজটের কারণে ভালো করে হাঁটা পর্যন্ত যায় না দুর্ঘটনার ভয়ে।”

সাংস্কৃতিক কর্মী আবু জাবিদ ভুইয়াঁ সোহেল বলেন, “দীর্ঘ যানজটের কারণে অনেক সময় মুমূর্ষু রোগী নিয়ে শহীদ সৈয়দ নজরুল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছানো সম্ভব হয় না। ফলে অনেকে পথেই মারা যান। ব্যবসায়ীদেরও অনেক ক্ষতি হচ্ছে যানজটের কারণে। বাইপাস সড়কটি নির্মাণ হলে শহরের যানজট কিছুটা হলেও কমে যেত।”

কিশোরগঞ্জ সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী শাকিল মোহাম্মদ ফয়সাল বলেন, “জেলা শহরে যানজট নিরসনে এবং হাওর অঞ্চল ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নির্বিঘ্নে যাতায়াতের সুবিধার জন্য ২০১৯ নভেম্বর মাসে ৭৩১ কোটি ৩১ লাখ টাকা ব্যায়ে একটি প্রকল্প একনেকে অনুমোদিত হয়।


“প্রকল্পের আওতায় শহরের বাইরে দিয়ে সদর উপজেলার চৌদ্দশত এলাকা থেকে ছয়না এলাকা পর্যন্ত ৭ দশমিক ৮ কিলোমিটার বাইপাস সড়ক নির্মাণ এবং হাওরের প্রবেশদ্বার চামড়া বন্দর পর্যন্ত আরও ২০ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়ন কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত ছিল।”

তিনি বলেন, “কিন্তু বাইপাস সড়ক নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণ ও মাটি ভরাটের কাজ করতেই গত বছরের ৩০ জুন প্রকল্পের সময় শেষ হয়ে গেছে। এ ছাড়া খরচ হয়ে গেছে ৫ কোটি ২০ লাখ টাকারও বেশি।”

বর্তমানে বাইপাস সড়কের কাজ বন্ধ থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন চলাচলকারীরা।

সদর উপজেলার চৌদ্দশত এলাকার বাসিন্দা একরামুল হক বলেন, “এই বাইপাস নির্মাণে ভরাট করা মাটির সড়কে আমাদের অনেক কষ্ট করে চলাচল করতে হয়। শীতে সব সময় তীব্র ধুলাবালি ও খানাখন্দে এবং বর্ষায় জমে থাকা কাদা-জলের মধ্য দিয়ে দুর্ভোগের সীমা থাকে না। সড়কটি চালু হলে তাদের দুর্ভোগ কমে আসত।”

বাইপাস নির্মাণে যাদের জমি অধিগ্রহণ হয়েছে, সেই ভূমি মালিকরাও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

সদর উপজেলার বৌলাই ইউনিয়নের ছয়না গ্রামের বাসিন্দা সুলতান মিয়া বলেন, “জমি অধিগ্রহণের কারণে এমনিতেই জমি কমে যাওয়ায় ফসলাদি চাষের সুযোগ সীমিত হওয়ায় আয় কমে গেছে। তা ছাড়া সড়কে সৃষ্ট ধূলার কারণে আশপাশে বাদ-বাকি জমির ফসল ও মৎস্য খামারের ক্ষতি হচ্ছে।”

বাইপাস প্রকল্পের গুরুত্ব বর্ণনা করে চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির জেলা সভাপতি মো. বেলায়েত হোসেন বেলাল বলেন, “আগ্রহ নিয়ে বাইপাসের কাজ শুরু হলেও সেটা বাস্তবে রূপ নেয়নি। যদি এই প্রকল্পকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে বাস্তবায়িত না করা হয়, তাহলে হাওর অঞ্চলের মানুষ উপকার পাবে না। সেই সঙ্গে কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের যানজটও সাধারণ মানুষের ভোগান্তিও কমবে না।”

সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) সভাপতি ম. ম জুয়েল বলেন, “আমাদের দেশে প্রকল্প গ্রহণে এবং অর্থব্যয়ে যতটা আগ্রহ দেখা যায়, বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ততটাই ধীরগতি দেখা যায়। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়ন ও জনগণের সেবাদানের ক্ষেত্রে ততটা আগ্রহ দেখা যায় না। এর ফলে রাষ্ট্রের যেমন অপচয় হয়, জনগণও সেবা থেকে বঞ্চিত হয়।”

প্রকল্পের মেয়াদ শেষ প্রসঙ্গে কিশোরগঞ্জ সড়ক ও জনপথ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী শাকিল মোহাম্মদ ফয়সাল বলছেন, প্রকল্পের মেয়াদ আরো দুই বছর বৃদ্ধির জন্য এরই মধ্যে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। মেয়াদ বর্ধিত হলে প্রকল্পের কাজ শেষ করা সম্ভব হবে।