বুধবার ০৮ জানুয়ারি ২০২৫, পৌষ ২৫ ১৪৩১, ০৮ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

খালেদা জিয়া ভর্তি হবেন লন্ডন ক্লিনিকে, কী এর বিশেষত্ব

 আপডেট: ১০:২৫, ৭ জানুয়ারি ২০২৫

খালেদা জিয়া ভর্তি হবেন লন্ডন ক্লিনিকে, কী এর বিশেষত্ব

লন্ডন ক্লিনিক

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া যুক্তরাজ্যের যে হাসপাতালে ভর্তি হতে যাচ্ছেন, সেই ‘লন্ডন ক্লিনিকে’ ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি চিকিৎসা নেন অনেক রাষ্ট্রপ্রধান, রাজনীতিক, অভিনেতা ও ধনাঢ্য ব্যক্তি।

প্রায় শত বছরের পুরনো বেসরকারি এই হাসপাতালের অবস্থান সেন্ট্রাল লন্ডনের ডেভনশায়ার প্লেস ও মেরিলিবন সড়কে। এটি ইংল্যান্ডের সবচেয়ে বড় বেসরকারি হাসপাতাল হিসেবেও পরিচতি।

নিজেদের চিকিৎসাসেবার বিশেষত্ব সম্পর্কে চিকিৎসাকেন্দ্রটি বলছে, “লন্ডন ক্লিনিকের ব্রেস্ট (স্তন), ইউরোলজি, গাইনোকলজি (স্ত্রীরোগবিদ্যা) ও চর্মরোগ চিকিৎসায় সুনাম রয়েছে।

“আমরা স্টেম সেল ট্রান্সপ্লান্টেশন ও সেলুলার থেরাপির মান নিয়েও অনেক সংস্থার স্বীকৃতি পেয়েছি।”

হাসপাতালের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, “আমাদের ডাচেস অব ডেভনশায়ার উইংকে ‘চমৎকার’ ক্যান্সার সেন্টার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে ম্যাকমিলান কোয়ালিটি এনভায়রনমেন্ট মার্ক (এমকিউইএম)।”

এর বাইরে রোগীদের দ্রুত সময়ে স্বাস্থ্যপরীক্ষার সেবা দিয়ে থাকে হাসপাতালটি।


৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, ফুসফুস, আর্থ্রাইটিস, কিডনি, ডায়াবেটিসসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন।তাকে লিভার প্রতিস্থাপনের জন্যই বিদেশে নেওয়ার কথা বলে আসছিলেন বিএনপি নেতারা।

লন্ডন ক্লিনিক তাদের ওয়েবসাইটে বলেছে, তাদের হাসপাতালে লিভার প্রতিস্থাপন করা হয় না। সেখানে খালেদা জিয়ার কী ধরনের চিকিৎসা হবে, তা বিএনপি নেতারা সুনির্দিষ্ট করে জানাননি।

খালেদার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “লন্ডন ক্লিনিক বলে একটা পুরনো ঐতিহ্যবাহী হসপিটাল আছে, সেখানে উনাকে (খালেদা জিয়া) ভর্তি করা হবে।

“ম্যাডামের নানা শারীরিক জটিলতা রয়েছে, যা আমরা বিভিন্ন সময়ে বলেছি। উনার লিভারের জটিলতাটা অর্থাৎ লিভার সিরোসিস পরবর্তী কম্পেনসেটরি লিভার ডিজিজের জন্য ‘টিপস’ করা হয়েছে।”

তিনি বলেন, “টিপসের কিছু টেকনিক্যাল অ্যাসপেক্ট আছে, অ্যাডজাস্টমেন্টের বিষয় আছে। হার্টে স্টেন্টিং করার পর চেক করে আবার সেটার জন্য রি-স্টেন্টিং করে অথবা চেক করে দেখা হয় যে স্টেন্টিংটা ভালোভাবে কাজ করছে কি না; এই জিনিসগুলো তো আমরা করতে পারি নাই।”

মঙ্গলবার রাত ১০টায় কাতারের আমিরের বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে লন্ডনের উদ্দেশ রওনা হবেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।

খালেদার জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য এফএম সিদ্দিকী গত অক্টোবরে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “এখনও সময় আছে যদি ‘টিপস’ করা হয় এবং বিদেশে উন্নত মাল্টিডিসিপ্লিনারি সেন্টারে নিয়ে উনার ‘টিপস’ পরবর্তী লিভার প্রতিস্থাপনের ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে আমরা হয়ত উনার অবস্থার উন্নতি ঘটাতে পারব।”

পরে ওই মাসেই যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের চার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ঢাকায় এসে এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা দেন। তারা যকৃতে ‘ট্র্যান্সজাগুলার ইন্ট্রাহেপেটিক পোরটোসিসটেমিক শান্ট (টিপস)’ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দুই রক্তনালীর মধ্যে একটি নতুন সংযোগ তৈরি করে দেন।

লিভার প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন পড়লে খালেদা জিয়াকে যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে নেওয়ারও ইঙ্গিত দিয়েছেন জাহিদ হোসেন।

সোমবারের সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘‘যদি ওখান (লন্ডন ক্লিনিক) থেকে সুপারিশ করে, ইয়েস শি নিডস, তাদের এখানে এই সুবিধা নাই, জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটি হসপিটাল নিয়ে যেতে হবে; তখন হয়ত সেখানে যাওয়ার একটা প্রশ্ন আসে।”

লন্ডন ক্লিনিকের রোগী ছিলেন যারা

এ হাসপাতালে ক্যান্সারের চিকিৎসা নেন ব্রিটিশ যুবরাজ প্রিন্স অব ওয়েলস উইলিয়ামের স্ত্রী প্রিন্সেস অব ওয়েলস ক্যাথরিন।

একই হাসপাতালে চিকিৎসা নেন রাজা তৃতীয় চার্লস। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ, তার স্বামী ফিলিপ অব এডিনবরা একাধিকবার এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।

অ্যানটনি ইডেন ও ক্লিমেন্ট অ্যাটলিসহ অনেক ব্রিটিশ সরকারপ্রধানের চিকিৎসাও হয়েছে যুক্তরাজ্যের এই হাসপাতালে।

লন্ডন ক্লিনিকের রোগীর তালিকায় নাম লেখিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি ও ব্রিটিশ-আমেরিকান অভিনেত্রী লিজ টেইলরও।

এ হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করেছেন সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন।

লন্ডন ক্লিনিকের যাত্রা শুরু ১৯৩২ সালে। তৎকালীন ডিউক ও ডাচেস অব ইয়র্ক এটি উদ্বোধন করেন। ১৯৯১ সালে এর এমআরআই ইউনিট উদ্বোধন করেন প্রিন্সেস মার্গারেট। ২০১০ সালে ক্যান্সার ইউনিট উদ্বোধন করেন প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ।

যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবার মান পর্যবেক্ষণ করে ‘কেয়ার কোয়ালিটি কমিশন। ব্রিটিশ স্বাস্থ্য বিভাগের অধীনে কাজ করা এই কমিশনের ২০২১ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লন্ডন ক্লিনিকের বহির্বিভাগে প্রতিবছর গড়ে এক লাখ ১০ হাজার মানুষ চিকিৎসা নেয়। হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেয় ২৩ হাজার রোগী।

এই হাসপাতালে প্রোস্টেট ক্যান্সারের রোগীদের জন্য রয়েছে রেডিওথেরাপির ব্যবস্থা। এন্ডোস্কপির জন্য রয়েছে ‘স্পাইগ্লাস’ প্রযুক্তি। ক্যান্সার রোগীদের জন্য আছে ‘সিএআর-টি’ ইমিউনোথেরাপি।

২০১৯ সালে লন্ডন ক্লিনিকে রোবোটিক সার্জারি ইউনিটের উদ্বোধন করা হয়।