মঙ্গলবার ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, পৌষ ২৩ ১৪৩১, ০৭ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

তিন দিন পর সূর্যের উত্তাপ পেল খেটে খাওয়া মানুষ

 প্রকাশিত: ১৫:৩৪, ৪ জানুয়ারি ২০২৫

তিন দিন পর সূর্যের উত্তাপ পেল খেটে খাওয়া মানুষ

টানা তিন দিন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সূর্যের দেখা মেলেনি বললেই চলে। পৌষের শীতের হিমেল হাওয়া কাঁপুনি ধরিয়ে দেওয়ার পর শনিবার সকালে রোদ উঁকি দিয়েছে; স্বস্তি ফিরেছে নগরজীবনেও।

গেল তিন দিন ধরেই প্রায় দিনভর রাজধানী ছিল কুয়াশার চাদরে ঢাকা। দিনভর ঠাণ্ডা হাওয়ায় ভুগতে হয়েছে বাইরে খেটে খাওয়া মানুষ আর সকাল-সকাল অফিসগামী যাত্রীদের।

ভুগেছেন বাইরে খেটে খাওয়া মানুষ

রাজধানীর মহাখালী এলাকার রিকশাচালক মো. রাসেল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আইজ অন্যদিনের চাইয়া সকালে একটু শীত কম। এই কয়দিন ঠাণ্ডা আর কুয়াশায় কাবু হইয়া গেছি। রিকশার হ্যান্ডেল ধইরা রাখতেও কষ্ট হইছে। রাইতেও তাড়াতাড়ি গাড়ি বন্ধ করছি। কষ্টই হইছে কয়দিন।”

মহাখালীতে আইসিডিডিআর'বির সামনের চা দোকানি জামাল হোসেন বলেন, “এই দুই-তিনদিন অনেক ঠাণ্ডা পড়ছে। সকালে তো দোকানই খুলতে পারি নাই। আজ আবার সকালে রোদ উঠায় দোকান খুলছি।”

কয়েকদিনের শীতে বিক্রি বেড়েছে শীতবস্ত্রের। এই এলাকায় ফুটপাতে শীতবস্ত্র বিক্রেতা মো. জিহাদ বললেন, “এই কয়েকদিন বেচাবিক্রি একটু ভালো হয়েছে। আসলে শীত কম পড়লে তো আর মানুষ শীতের জামাকাপড় কিনতে চায় না।”

রাজধানীর সাতরাস্তা এলাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকুরে আফজাল হোসেন বলেন, “আমি সাধারণত সকাল আটটায় অফিসের জন্য বের হই; রাত আটটায় ফিরি। এই দুই-তিন দিন সকালে বের হয়ে খুবই কষ্ট পেলাম শীতে।”

রাতভর দুই পথে বন্ধ ফেরি

এদিকে, ঘন কুয়াশায় নৌপথে চলাচল বিঘ্নিত হয়েছে। রাতভর দুই পথে বন্ধ ছিল ফেরি চলাচল। পরে সকালে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।

ঘন কুয়াশায় প্রায় ৯ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া-রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া নৌপথে এবং ৮ ঘণ্টা পর মানিকগঞ্জের আরিচা-পাবনার কাজিরহাট নৌপথে ফেরি চলাচল শুরু হয়।

বিমান চলাচলে অসুবিধা হয়নি

ঘন কুয়াশায় নৌ-পথে চলাচলে সমস্যা হলেও উড়োজাহাজ চলাচলে তেমন সমস্যা হয়নি বলে জানিয়েছেন শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম।

শনিবার সকালে তিনি বলেন, “ঘন কুয়াশার কারণে কোনো ফ্লাইট ডাইভারশন (বৈরি আবহাওয়ায় নির্ধারিত বিমানবন্দর ছাড়া অন্য বিমানবন্দরে অবতরণ করা) হয়নি। তবে, ৪টি ফ্লাইটে বিলম্ব হয়েছে অপারেশনাল কারণে।”

কুয়াশায় সড়কে যান ও রেল চলাচলে নির্দেশনা

ঘণ কুয়াশায় নিরাপদে গাড়ি চালানোর জন্য মোটরযান চালকদের বেশ কিছু সতর্কতামূলক নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)।

কুয়াশায় ধীরগতির মধ্যে থামানো যায়, এমন নিয়ন্ত্রণ উপযোগী গতিতে গাড়ি চালানো, লো বিমা বা ডিপার হেডলাইট জ্বালানো, যত্রতত্র ওভারটেকিং না করা, হর্নের যথাযথ ব্যবহার ইত্যাদি ছিল নির্দেশনায়।

আর, ঘন কুয়াশার ফলে দৃষ্টিসীমা কমায় ট্রেন পরিচালনায় যুক্ত কর্মীদের যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। লেভেল ক্রসিংয়ে দায়িত্বরত কর্মচারীদের সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। অরক্ষিত লেভেল ক্রসিং পারাপারে পথচারীদের সতর্ক থাকতে হবে। এছাড়া রেললাইনে অকারণে যাতায়াত না করার নির্দেশনা ও পরামর্শ দিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ রেলওয়ে।

শীতের দাপট কমবে, তাপমাত্রা বাড়বে

আগামী ২ দিনে কুয়াশা কেটে শীতের দাপট কমবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সেই সঙ্গে দিনে এবং রাতের তাপমাত্রা বাড়বে।

আবহাওয়াবিদ আফরোজা সুলতানা শনিবার সকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঢাকায় তো ইতোমধ্যেই রোদ উঠে গেছে আজকে। ৫ তারিখ থেকে ৭ তারিখ পর্যন্ত রোদ থাকতে পারে। তবে, এই সময়ে উত্তরাঞ্চলে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। ঢাকায় সে সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। এরপর ৮ তারিখের দিকে ফের তাপমাত্রা কমতে পারে।”

আবহাওয়া অধিদপ্তরের নিয়মিত বুলেটিনে বলা হয়েছে, শনিবার সকালে ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে।

আর, মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশে মাঝারী থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং তা কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত থাকতে পারে।

ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নদী পরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগ সাময়িকভাবে ব্যাহত হতে পারে।

অধিদপ্তর জানিয়েছে, এই সময়ে সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে পারে।

ঘন কুয়াশার কারণে সারাদেশের কোথাও-কোথাও দিনের বেলায়ও শীতের অনুভূতি বিরাজমান থাকতে পারে বলে বুলেটিনে জানানো হয়েছে।

বর্তমানে দেশের উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

গেল ২৪ ঘণ্টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়; সেখানে তাপমাত্রার পারদ নেমেছে ৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।

এছাড়া, যশোরে ১১ ডিগ্রি, কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে ১১ দশমিক ৪ ডিগ্রি, নীলফামারীর সৈয়দপুরে ১১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা নথিবদ্ধ করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

এই সময়ে দেশের অধিকাংশ স্থানেই সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২০ ডিগ্রির নিচে।

এই সময়ে রাজধানী ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল টেকনাফে; ২৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।