হাসিনাকে ফেরানো আর স্বার্থের বিষয়গুলো পাশাপাশি চলবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরানোর চেষ্টার পাশাপাশি ভারতের সঙ্গে স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় সমানতালে চালিয়ে নেওয়ার কথা বলেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।
শেখ হাসিনাকে ফেরানো চেষ্টার প্রেক্ষাপটে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়ে বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমি মনে করি যে, দুটো পাশাপাশি চলবে। কারণ, এটা হলো একটা ইস্যু। কিন্তু আমাদের আরও অনেক স্বার্থের ইস্যু আছে, দুপক্ষেরই। আমরা সেগুলো নিয়েও পাশাপাশি আগাব।”
প্রবল গণ আন্দোলনের মুখে গত ৫ অগাস্ট ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে সেখানেই আছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এরমধ্যেই ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সরকারের চালানো দমন পীড়নকে ‘গণহত্যা’ বিবেচনা করে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুবনালে শেখ হাসিনাসহ অন্যদের বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
গত ৫ জুলাই থেকে ৫ অগাস্ট পর্যন্ত সময়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্যে সারাদেশে ‘গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের’ অনেক অভিযোগ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন অফিসে জমা পড়েছে।
এর মধ্যে একটি মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এবং আরেক মামলায় তার পরিবারের সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতাসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে ট্রাইব্যুনাল।
প্রায় তিনশ মামলায় শেখ হাসিনার বিচার চলার মধ্যে প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় তাকে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে গত সোমবার ভারত সরকারকে ‘কূটনৈতিকপত্র’ পাঠিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
ভারত সরকারের তরফে শেখ হাসিনাকে চিঠি পাওয়ার কথা নিশ্চিত করা হলেও প্রত্যর্পণের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।
এর মধ্যে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনাকে ফেরত না পাঠানোর অবস্থানে আছে ভারত সরকার। ঢাকার চিঠির জবাব দিতে দিল্লি কয়েক মাস সময় নিতে পারে, এমন কথাও বলা হয় এসব প্রতিবেদনে।
অগাস্টে শেখ হাসিনার পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে প্রতিবেশী ভারতের সম্পর্কে টানাপড়েন তৈরি হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্য চালু থাকার মধ্যে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন এবং অন্যান্য ইস্যুতে পাল্টাপাল্টি বিবৃতি দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
এমন প্রেক্ষাপটে ভারত, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র, এই তিন দেশের সঙ্গে ‘আরও ভালো সম্পর্ক’ করার বিষয়কে নতুন বছরে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।
তিনি বলেন, “আমরা আসলে সবগুলো দিকেই মনোনিবেশ করব। কারণ, আমাদের প্রতিবেশীদের সাথেও ভালো সম্পর্ক চাই, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথেও আমরা ভালো সম্পর্ক চাই, চীনের সাথেও ভালো সম্পর্ক চাই। কারণ, আমাদের স্বার্থ আছে প্রতিটি ক্ষেত্রেই, ভালো সম্পর্ক রাখার ক্ষেত্রে।
“এবং আমি বিশ্বাস করি যে, যাদের কথা বললাম, তাদেরও স্বার্থ নিহিত আছে ভালো সম্পর্কের মধ্যেই। কাজেই, আমি যথেষ্ট আশাবাদী এ বছরের ব্যাপারে। আমি আশা করব যে, এ বছর শেষ হতে হতে আমরা আরও অনেক নিশ্চিতভাবে বলতে পারব যে, হ্যাঁ, আমাদের সব প্রতিবেশি এবং বন্ধুপ্রতীম দেশের সাথে আমাদের সম্পর্ক আরও উন্নত হয়েছে এক বছরে।”
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কোন দেশের বিষয়ে অগ্রাধিকার দেবে, এমন প্রশ্নে তৌহিদ হোসেন বলেন, “প্রায়োরিটি কিন্তু কোনোটাই কম না। কারণ, আমি মনে করি যে, এই তিনটি দেশের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমাদের প্রায়োরিটি যথেষ্টই আছে। কারণ, এই তিন জায়গাতেই বিভিন্নভাবে আমাদের স্বার্থ খুব শক্তভাবে নিহিত।”
সরকারের কাজের অগ্রাধিকারের বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “প্রায়োরিটি হচ্ছে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান, প্রায়োরিটি হচ্ছে এই তিন গুরুত্বপূর্ণ দেশের সাথে সম্পর্ক ভালো রাখা এবং প্রায়োরিটি হচ্ছে আমাদের অর্থনৈতিক এবং কূটনৈতিক ক্ষেত্রে যাতে স্থিতিশীলতা এবং আরও ভালো অবস্থার সৃষ্টি হয়।”
চলতি মাসে চীন সফরে যাওয়ার কথাও এক প্রশ্নে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “আমি যেটা বললাম, তিন দেশের সাথেই আমাদের সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ। চীনারা যেহেতু আমাকে নিমন্ত্রণ করেছে যেতে, আমি যাচ্ছি সেখানে। সেখানে আমাদের যেগুলো স্বার্থ আছে, সেগুলো নিয়ে আমরা আলাপ-আলোচনা করব।
“কী ইস্যু আছে, সেগুলো আমি এখন বলব না। কারণ, একটা আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক পররাষ্ট্র সচিব আহ্বান করেছেন, সেখানে আমরা ঠিক করব আমাদের কী কী অর্জন করার মতো, কী কী তাদের কাছ থেকে সমাধান করতে পারি।”