সালতামামি
চার মাসে ৯ বিচারপতির পদত্যাগ
চলতি বছরে সুপ্রিম কোর্টের নয়জন বিচারপতি পদত্যাগ করেছেন। ১০ আগস্ট থেকে ১৯ নভেম্বরের মধ্যে তৎকালীন প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের ছয়জন ও হাইকোর্ট বিভাগের তিনজন পদত্যাগ করেন।
এর মধ্যে প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের ছয়জন ছাত্র আন্দোলনের মুখে এবং বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাত থেকে জুডিসিয়াল কাউন্সিলের হাতে ফিরে আসার পর হাইকোর্ট বিভাগের তিনজন পদত্যাগ করেন। এ তিনজনকে ২০১৯ সাল থেকে বিচারকজ থেকে বিরত রাখা হয়েছিল।
এছাড়া ছাত্র আন্দোলনের এক পর্যায়ে ১২ বিচারপতিকে বিচারকাজ থেকে বিরত রাখা হয়। অবশ্য এ ১২ জনের মধ্যে একজন ইতোমধ্যে অবসরে গেছেন।
ছয় বিচারপতি
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে দেশ ছাড়েন ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা। ভেঙে দেওয়া হয় সংসদ। গঠন করা করা অন্তর্বর্তী সরকার। এরপর ১০ আগস্ট প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের বিচারপতিদের পদত্যাগ দাবিতে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের অ্যানেক্স ভবনের সামনে বিক্ষোভ করেন আন্দোলনকারীরা। এরপর দুপুর দেড়টার দিকে খবর আসে প্রধান বিচারপতি পদত্যাগ করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এরপর দুপুর ২টার দিকে আন্দোলনকারীরা হাইকোর্ট এলাকা ছেড়ে চলে যান।
প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ছাড়া অন্য বিচারপতিরা হলেন- বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী, বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম ও বিচারপতি কাশেফা হোসেন।
বর্তমানে তারা তাদের সময়ে দেওয়া আপিল বিভাগের রায়গুলোর পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি লিখছেন। এর মধ্যে একাধিক রায় সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। তবে আলোচিত কোটা নিয়ে রায় এখন প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে।
তিন বিচারপতি
গত ১৯ নভেম্বর পদত্যাগ করা তিন বিচারপতি হলেন- বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হক। ২০১৯ সালের ২২ আগস্ট সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন থেকে জানানো হয়, হাইকোর্ট বিভাগের তিনজন বিচারপতির বিরুদ্ধে প্রাথমিক অনুসন্ধানের প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে পরামর্শক্রমে তাদের বিচারকাজ থেকে বিরত রাখার সিদ্ধান্তের কথা অবহিত করা হয়েছে। সেই থেকে তারা আর বিচারকাজ পরিচালনা করতে পারেননি।
বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের কাছে নিতে ১০ বছর আগে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী এনেছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। পরে হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগ ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন। ২০১৭ সালে রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আপিল বিভাগে রিভিউ আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।
গত ২০ অক্টোবর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করে রায় দেন আপিল বিভাগ। রায়ে আপিল বিভাগ সংবিধানের এ সংক্রান্ত ৯৬ অনুচ্ছেদের ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭ ও ৮ উপ-অনুচ্ছেদ পুনর্বহাল করা হয়। এর মধ্য দিয়ে বিচারপতিদের অপসারণের প্রক্রিয়া জাতীয় সংসদের পরিবর্তে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের হাতে ফেরে। সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল গঠিত হয় প্রধান বিচারপতি ও পরবর্তী জ্যেষ্ঠ দুজন বিচারপতিকে নিয়ে।
উল্লেখ্য, নিয়ম অনুযায়ী আইন উপদেষ্টা পদত্যাগপত্রগুলো প্রধান উপদেষ্টার মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাবেন।
পরে ৭ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্ট থেকে জানানো হয়, ষোড়শ সংশোধনী রায়ের পর সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল গঠন করা হয়। ওই কাউন্সিলে কয়েকজনের বিচার সংক্রান্ত তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলমান।
এরপর ১৯ নভেম্বর এ তিন বিচারপতি পদত্যাগ করেন।