বৃহস্পতিবার ০২ জানুয়ারি ২০২৫, পৌষ ১৯ ১৪৩১, ০২ রজব ১৪৪৬

ব্রেকিং

হাসিনাকে ফেরানো আর স্বার্থের বিষয়গুলো পাশাপাশি চলবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এমপিও ভুক্ত শিক্ষকরা জানুয়ারি থেকে ইএফটি’র মাধ্যমে বেতন পাবেন: শিক্ষা উপদেষ্টা রেমিটেন্সের জোয়ারে ডিসেম্বরে এল ২.৬৪ বিলিয়ন, বাড়ল ৩৩% বাধ্যতামূলক অবসরে আরও ৩ অতিরিক্ত আইজিপি যুক্তরাষ্ট্রে নববর্ষ উদযাপনের সময় গাড়িচাপা, নিহত ১০ দুয়ার খুলল বাণিজ্য মেলা: ২০২৫ সালের বর্ষপণ্য আসবাব বন্ধের নোটিস প্রত্যাহার, খুলে দেওয়া হয়েছে এস আলমের ৯ কোম্পানি বায়তুল মোকাররমকে দৃষ্টিনন্দন মসজিদে রূপান্তর করা হবে: ধর্ম উপদেষ্টা মাদারীপুর হাসপাতালে জলাতঙ্কের টিকা নেই ৬ মাস, ভোগান্তি নতুন বছর শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ইসরায়েলে রকেট ছুড়ল হামাস

জাতীয়

আলোচিত তিন মামলায় খালাস পেলেন যারা

 প্রকাশিত: ১১:৩১, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪

আলোচিত তিন মামলায় খালাস পেলেন যারা

আইন অনুসারে ৫ বছর পূর্ণ হওয়ার পর ২০০৬ সালের শেষের দিকে ক্ষমতা ত্যাগ করে চারদলীয় জোট সরকার। তারপর থেকে বিএনপি-জামায়াত নেতৃবৃন্দ ও তৎকালীন সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বিভিন্ন মামলায় জড়ানো ও তাদের বিরুদ্ধে নতুন মামলা দেওয়া হয়।

 এসব মামলায় সাবেক কয়েকজন মন্ত্রীর মৃত্যুদণ্ডও হয়। নিম্ন আদালতে বিভিন্নজনের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়। এ তালিকায় রয়েছেন বিএনপি-জামায়াতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ, মন্ত্রী, সচিব ও গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ ব্যক্তি। বিএনপির অভিযোগ, তাদের নেতৃবৃন্দ থেকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে এসব মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়। এর মধ্যে আলোচিত তিন মামলায় আপিলের পর চলতি বছরের নভেম্বর ও ডিসেম্বরে এসে হাইকোর্ট বিভাগ থেকে বেশিরভাগ ব্যক্তি খালাস পেয়েছেন। কয়েকজনের দণ্ডও কমানো হয়েছে।  

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা

২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা করা হয়। ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে মামলাটি করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তদন্ত শেষে ২০১২ সালে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ খালেদাসহ চার আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। সাক্ষ্যগ্রহণ কার্যক্রম শেষ হলে দুদকের পক্ষে এই মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে ২০১৮ সালের অক্টোবরে রায় ঘোষণা করা হয়।

পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রশাসনিক ভবনের সাত নম্বর কক্ষে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫’র বিচারক মো. আখতারুজ্জামান (বর্তমানে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি) জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন। একইসঙ্গে তাকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একই সাজা হয় মামলার অপর তিন আসামিরও।

দণ্ডপ্রাপ্ত অপর তিন আসামি হলেন- সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার তৎকালীন রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী (প্রয়াত), হারিছ চৌধুরীর তৎকালীন একান্ত সচিব জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র প্রয়াত সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান। সে সময় হারিছ চৌধুরী পলাতক হন। বাকি আসামিরা হাইকোর্টে আপিল করেন। এ আপিলের শুনানি শেষে গত ২০ নভেম্বর বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ আপিল মঞ্জুর করে সব আসামিকে খালাস দেন।

এ মামলায় খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন ও কায়সার কামাল বলেছিলেন, এই মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসনের দণ্ড মওকুফ করা হয়েছে। তারপরও আপিল শুনানি কেন? আমরা বলেছি, তিনি (খালেদা জিয়া) আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। রাষ্ট্রপতি মওকুফ করেছেন। সেখানে ক্ষমার কথা আছে। খালেদা জিয়া ক্ষমার প্রতি বিশ্বাসী না। তিনি অপরাধ করেননি। তিনি ক্ষমাও চাননি। তাই এটা আইনগতভাবে মোকাবিলা করতে আইনজীবীদের নির্দেশ দিয়েছেন। তাই আপিল শুনানি করা হয়।

গ্রেনেড হামলা মামলা

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা হয়। এতে ২৪ জন নিহত হন। আহত হন শতাধিক নেতাকর্মী। গ্রেনেড হামলার ঘটনায় মামলা হয় মতিঝিল থানায়। ২০০৭ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার মামলাটির তদন্ত নতুনভাবে শুরু করে। ২০০৮ সালে এ মামলায় প্রথমে ২২ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। পরে আওয়ামী লীগ সরকার আমলে এ মামলার (হত্যা ও বিস্ফোরক) অধিকতর তদন্ত হয়। এরপর তারেক রহমানসহ আরও ৩০ জনকে যুক্ত করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।

এ মামলায় ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ রায় দেন। রায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনকে দেওয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। এ ছাড়া সেনাবাহিনী ও পুলিশের সাবেক ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে ৪৯ জনকে সাজা দেওয়া হয়েছিল। গ্রেনেড হামলা মামলায় ২০১১ সালে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন যিনি পরে তা আদালতে প্রত্যাহার করেন বলে জানান আসামিপক্ষের আইনজীবীরা।  

তবে গ্রেনেড হামলা মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ের আগে অন্য একটি মামলায় মুফতি হান্নানের ফাঁসি কার্যকর হয়। বিচারিক আদালতের রায়ের পর ২০১৮ সালে মামলার সব নথিপত্র হাইকোর্টে এসে পৌঁছায়। পাশাপাশি কারাবন্দি আসামিরা হাইকোর্টে আপিল করেন। ওই আপিলের শুনানি শেষে গত ১ ডিসেম্বর হাইকোর্ট সব আসামিকে খালাস দেন। রায়ে হাইকোর্ট ন্যায়বিচার নিশ্চিতে যথাযথ ও বিশেষজ্ঞ সংস্থার মাধ্যমে নতুন করে তদন্তের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো উচিত বলে অভিমত দেন। এই পর্যবেক্ষণের আলোকে যথাযথ ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে আদেশের অনুলিপি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে বলা হয়।

১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা

২০০৪ সালের ১ এপ্রিল চট্টগ্রামের সিইউএফএল ঘাট থেকে আটক করা হয় ১০ ট্রাক ভর্তি অস্ত্রের চালান। এ নিয়ে কর্ণফুলী থানায় ১৮৭৮ সালের অস্ত্র আইন ও ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে চোরাচালানের অভিযোগ এনে দুটি মামলা হয়। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) পুলিশ দুটি মামলা একসঙ্গে তদন্ত করে। এর বিচারও একসঙ্গে শুরু হয়। ওই মামলায় ২০১৪ সালের ৩০ জানুয়ারি চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালত এবং বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ রায় দেন। বিচারিক আদালতের রায়ে সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন আমির মতিউর রহমান নিজামী (অন্য মামলায় ফাঁসি কার্যকর), সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবর, ভারতের পরেশ বড়ুয়া এবং দুটি গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ১৪ জনকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়।  

এরপর আসামিদের ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। অস্ত্র আইনে করা অন্য মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ হয় একই আসামিদের। আপিলের পর চলতি বছরের ১৮ ডিসেম্বর রায় ঘোষণা করেন বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি নাসরিন আক্তারের হাইকোর্ট বেঞ্চ। রায়ে মৃত্যুদণ্ড থেকে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবরসহ ছয়জন খালাস পান। অপর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপর ৬ আসামির সাজা কমিয়ে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি পরেশ বড়ুয়ার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

খালাস পেলেন যারা: রায়ে আদালত বলেছেন, লুত্ফুজ্জামান বাবর, রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা চিটাগং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডের (সিইউএফএল) তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহসিন উদ্দিন তালুকদার, তৎকালীন মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) কে এম এনামুল হক ও প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরীর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। যে কারণে তারা অভিযোগ থেকে খালাস পাওয়ার অধিকারী। তাদের খালাস দেওয়া হলো।

ওই মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদণ্ড ও জরিমানা হয়েছিল। হাইকোর্ট রায়ে বলেছেন, মারা যাওয়ায় তার আপিল মেরিটে নিষ্পত্তি করে অব্যাহতি দেওয়া হলো। মামলাটিতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত শিল্প মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব নুরুল আমিনকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট। তার বিষয়ে রায়ে আদালত বলেছেন, বিচারের শুরু থেকেই তিনি পলাতক। তার বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। তাই তিনি অভিযোগ থেকে খালাস পাওয়ার অধিকারী।

যাদের দণ্ড কমানো হয়: মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পরেশ বড়ুয়ার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৬ আসামিকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেন হাইকোর্ট। তারা হলেন এনএসআই’র তৎকালীন মাঠ কর্মকর্তা আকবর হোসেন খান, এনএসআইয়ের সাবেক উপপরিচালক মেজর (অব.) লিয়াকত হোসেন, তৎকালীন পরিচালক উইং কমান্ডার (অব.) সাহাব উদ্দিন আহাম্মদ, চোরাকারবারি হাফিজুর রহমান, শ্রমিক সরবরাহকারী দ্বীন মোহাম্মদ ও ট্রলারমালিক হাজি সোবহান। এছাড়া এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আবদুর রহিমের বিষয়ে রায়ে হাইকোর্ট বলেন, মারা যাওয়ার কারণে তার আপিল অ্যাবেট (পরিসমাপ্তি) ঘোষণা করা হলো। বিচারিক আদালতের দেওয়া জরিমানার আদেশ সংশোধন করে ১০ হাজার টাকা জরিমানা আরোপ করা হলো।