সাদপন্থিদের নিষিদ্ধের দাবিতে কাকরাইলে অবস্থানের ডাক
তাবলিগ জামাতের সাদপন্থিদের নিষিদ্ধ ঘোষণাসহ তিন দফা দাবিতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কাকরাইল এলাকায় অনির্দিষ্টকালের জন্য অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেছে জুবায়েরপন্থিরা।
একইসঙ্গে টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা মাঠ এবং তাবলিগের প্রধান কেন্দ্র কাকরাইল মসজিদে সাদপন্থিদের কোনো কার্যক্রম চালাতে না দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার কাকরাইল মসজিদ প্রাঙ্গণে সংবাদ সম্মেলন করে এসব ঘোষণা দেন জুবায়েরপন্থিরা, যারা নিজেদের ‘শুরায়ে নিজাম’ পরিচয় দিয়ে থাকেন।
সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন উত্তরার জামিয়াতুল মানহাল আল কওমিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ কেফায়েতুল্লাহ আজহারী।
তিনি বলেন, “সাদপন্থিদের সকল কার্যক্রম রাষ্ট্রীয়ভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে; টঙ্গীতে হামলার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচারের আওতায় আনতে হবে; কাকরাইল মারকাজ ও টঙ্গীর ইজতেমা মাঠসহ তাবলিগের সকল কার্যক্রম ‘শুরায়ে নিজামের’ অধীনে করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।”
‘গত ১৭ ডিসেম্বর রাতে টঙ্গী ইজতেমা মাঠে অবস্থানরত তাবলিগ জামাতের সাথি ও মাঠে অবস্থিত মাদ্রাসা ছাত্র ও শিক্ষকদের ওপর বিনা কারণে সাদপন্থীদের হামলা ও হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে’ আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, সাদপন্থিদের কার্যক্রমে ভারত ও ইসরায়েলের মদদ রয়েছে।
গত ৫ নভেম্বর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করে জুবায়ের সমর্থকরা সাদপন্থিদের নিষিদ্ধ করাসহ ৯ দফা দাবি জানায়।
দুই পক্ষের বিরোধের মধ্যেই গত সপ্তাহে সংঘর্ষে জড়ান মাওলানা জুবায়ের আহমদ ও দিল্লির মাওলানা সাদ কান্ধলভির অনুসারীরা। তুরাগ তীরে বিশ্ব ইজতেমা মাঠ দখলকে কেন্দ্র করে ১৭ ডিসেম্বর গভীর রাতের এ সংঘাতে অন্তত তিনজন নিহতের পাশাপাশি দুই পক্ষের বহু অনুসারী আহত হন
সংবাদ সম্মেলনে কেফায়েতুল্লাহ আজহারী অভিযোগ করেন, ওই রাতে টঙ্গীতে ইজতেমার প্রস্তুতি ও মাঠ পাহারার দায়িত্বে থাকা তাবলিগের সাথি এবং সেখানে অবস্থিত মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকদের ওপর অতর্কিতে রাম দা, কিরিচ, লোহার রডের মতো অস্ত্র নিয়ে হামলা করে সাদপন্থিরা। এতে তাদের তিনজন সাথি নিহত হন এবং অনেক সাথি ও ছাত্র-শিক্ষক আহত হন।
সংঘাতের পরদিন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সামনে আসেন কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের নেতা মামুনুল হক। সাদপন্থিদের ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়ে তাদের নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবি জানান তিনি। একই দাবিতে ২০ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে সংবাদ সম্মেলন করে হেফাজতে ইসলাম।
সাদপন্থিদের ‘সন্ত্রাসী ও চরমপন্থি বাহিনী’ আখ্যা দিয়ে কেফায়েতুল্লাহ আজহারী বলেন, “তাদের হোতাসহ অনেকের নামে মামলা হয়েছে। তবে আসামিদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার কোনো পদক্ষেপ দৃশ্যমান হচ্ছে না। ১৭ ডিসেম্বর মাঠের নিরাপত্তায় নিযোজিত আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে আছে।
“অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে ফ্যসিস্ট আওয়ামী সরকার ও তাদের দোসররা যোগসাজশ করে সাদপন্থিদের মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করার একটি নীলনকশা করেছিল। তাদের এই নীলনকশা বাস্তবায়নে পাশের একটি দেশ এবং ইসরায়েলের প্রত্যক্ষ মদদ রয়েছে বলে কিছু জাতীয় দৈনিকে ফলাও করে প্রকাশিত হয়েছে।”
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, “তারা (সাদপন্থিরা) কখনোই আর নিজেদের তাবলিগি বলে পরিচয় দিতে পারে না। তারা সন্ত্রাসী বাহিনী হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। কাকরাইল মারকাজ, বিশ্ব ইজতেমার মাঠসহ কোথাও তাদের কোনো কার্যক্রম চলতে দেওয়া যাবে না। তাবলিগের কাকরাইল মারকাজ ‘শুরায়ে নিজামের’ অধীনে চলছে।
“এখান থেকে ঘোষণা দিচ্ছি সাদপন্থিদের কোনো কার্যক্রম কাকরাইল মারকাজে চালাতে দেওয়া হবে না। যারা সরাসরি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের মূল হোতাদের প্রায় কাউকেই ধরা হয়নি। মূল হোতাদের আগামী ২৪ ঘণ্টায় গ্রেপ্তার করতে হবে।”
বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে কাকরাইল ও আশপাশের এলাকায় অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করে কেফায়েতুল্লাহ বলেন, “যতোক্ষণ পর্যন্ত খুনিদের গ্রেপ্তার করা না হবে, সাদপন্থিদের নিষিদ্ধ করা না হবে এবং কাকরাইল ও বিশ্ব ইজতেমার মাঠের কার্যক্রম ‘শুরায়ে নিজামের’ তত্ত্বাবধানে পরিচালনা রাষ্ট্রীয়ভাবে নিশ্চিত করা হবে- ততোক্ষণ পর্যন্ত এই অবস্থান কর্মসূচি চলবে।
“তবে কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ হবে এবং রাস্তা বন্ধ হবে না ও জনদুর্ভোগের কারণ হবে না।”
তাবলিগ জামাতের মুরুব্বি শাহরিয়ার মাহমুদ, বাহাউদ্দিন জাকারিয়া, হাফেজ নাজমুল হাসান কাসেমি, মুফতি মহিউদ্দীন মাসুম, মুফতি আমানুল হক, মাওলানা জুবায়ের আহমেদ অন্যদের মধ্যে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।