সারজিসের আশ্বাসে শাহবাগ ছাড়লেন চিকিৎসকরা, কর্মবিরতি ‘চলবে’
দাবি পূরণের আশ্বাস পেয়ে প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা পর ঢাকার শাহবাগে সড়ক থেকে অবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাহার করলেও কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকরা।
বেসরকারি পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনিদের ভাতা ২৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করার দাবিতে রোববার বেলা ১টার পর শাহবাগে সড়ক অবরোধ করেন চিকিৎসকরা। তাতে ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আশপাশের সড়কে তৈরি হয় তীব্র যানজট।
জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেতা সারজিস আলম আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলতে বিকেলে শাহবাগে যান। তার কাছ থেকে দাবি পূরণের আশ্বাস পেয় চিকিৎসকরা বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে সড়ক থেকে সরে যান।
পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. জাবির হোসেন সন্ধ্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তিনি (সারজিস আলম) আমাদের প্রত্রিশ্রুতি দিয়েছেন, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকদের নবম গ্রেড দেওয়া হবে। এটা আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে গেজেট আকারে প্রকাশিত হবে। এ কারণে আমরা অবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছি।
“কিন্তু আমাদের কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে। প্রজ্ঞাপন হাতে এলে আমরা কাজে ফিরব।”
শাহবাগ থানার ওসি মোহাম্মদ খালিদ মনসুর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা সড়ক থেকে উঠে গেছেন। এখন যান চলাচল স্বাভাবিক।”
বাংলাদেশে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনির সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে পড়াশোনার পাশাপাশি সেখানে চিকিৎসাসেবা দেন তারা। এ সময় তারা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুযোগ পান না।
ভাতা বাড়ানোর দাবিতে ২০২২ সাল থেকে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকরা। দাবি আদায়ের জন্য বিভিন্ন সময় কর্মবিরতি, অবস্থান কর্মসূচি এবং অনশনের মত কর্মসূচি তারা পালন করে আসছেন।
আন্দোলনের পর গত বছরের জুলাইয়ে পোস্টগ্র্যাজুয়েট প্রাইভেট চিকিৎসকদের মাসিক ভাতা পাঁচ হাজার টাকা বাড়িয়ে ২৫ হাজার টাকা করা হয়।
তবে ওই ভাতাও যৌক্তিক নয় বলে আন্দোলনকারীদের ভাষ্য। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর আবারও ভাতা বাড়ানোর দাবি নিয়ে তারা আন্দোলন শুরু করেন।
তারা বলছেন, ভাতা বাড়ানোর জন্য বিসিপিএস, বিএসএমএমইউ, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সবার সঙ্গে কথা বলেছেন তারা। সবাই ভাতা বৃদ্ধির দাবিকে ‘যৌক্তিক’ বলেছেন, এটি দ্রুত বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু এতদিনেও কাজ হয়নি।
ভাতা বৃদ্ধির সুপারিশ অর্থ মন্ত্রণালয় পাঠানো হয়েছে বলেও জানিয়েছিলেন আন্দোলরত চিকিৎসকরা। কিন্তু সেখানে আর কোনো অগ্রগতি হয়নি। সেটি অনুমোদিত হয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়েও আসেনি।
গত ১৪ ডিসেম্বর ডক্টরস মুভমেন্ট ফর জাস্টিস সোসাইটি শহীদ মিনার থেকে রাজু ভাস্কর্য পর্যন্ত মশাল মিছিল করে। সেদিন ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন চিকিৎসকরা।
পরদিন ১৫ ডিসেম্বর চিকিৎসকদের প্রতিনিধি, নাগরিক কমিটি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র সারজিস আলমসহ অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটি বৈঠক হয়। সেখানে নথিটি অনুমোদন দিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর কথা জানানো হয়। তবে সেটি আর হয়নি।
সে কারণে রোববার সকাল থেকে ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন প্রাইভেট পোস্টগ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি ডাক্তাররা। তাদের বেঁধে দেওয়া বেলা ১২টা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে সরকারের তরফ থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে বেলা ১টার পর তারা শাহবাগে অবস্থান নেন।
বিভিন্ন হাসপাতালে জরুরি বিভাগে রোগী ভর্তি, ভর্তি রোগীদের চিকিৎসা, ছাড়পত্র দেওয়ার কাজটি করেন এই পোস্টগ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকরা। তাদের কর্মবিরতির কারণে হাসপাতালগুলোর কার্যক্রমে প্রভাব পড়ে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একজন চিকিৎসক বলেন, “ইনস্টিটিউটগুলো চলেই পোস্টগ্র্যাজুয়েটদের দিয়ে। ইন্টার্ন চিকিৎসকরা কাজে না থাকলে সেবা ব্যাহত হয়। তবে মেডিকেল কলেজে ইন্টার্ন থাকায় পোস্ট গ্র্যাজুয়েটরা কর্মবিরতিতে থাকলেও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের দিয়ে কাজ চালিয়ে নেওয়া যায়।”
রোববার কর্মবিরতির কারণে কী সমস্যা হয়েছে জানতে চাইলে বিএসএমএমইউর পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. রেজাউর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শুনেছি কিছু চিকিৎসক কম এসেছে। তবে তারা না থাকায় হাসপাতালের কোনো বিভাগের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে বা স্থবির হয়ে গেছে এমন ঘটনা আমাকে এখন পর্যন্ত কেউ বলেনি। আমাদের এখানে এখনো তেমন প্রভাব পড়েনি।”