‘ধর্ম অবমাননা’: সুনামগঞ্জের সেই আকাশ দাস রিমান্ডে
ধর্ম অবমাননার অভিযোগে সাইবার নিরাপত্তা আইনের মামলায় সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার সেই আকাশ দাসকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ।
রোববার সুনামগঞ্জের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে হাজির করে আকাশের (১৭) সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে বিচারক নির্জন কুমার মিত্র পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন বলে আদালতের পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো. তোফায়েল আহমদ জানান।
দোয়ারাবাজার থানার ওসি জাহিদুল হক বলেন, “এসআই আরাফাত বিন শফিউল্লাহ বাদী হয়ে আইসিটি অ্যাক্ট ও পেনাল কোডের ধারায় মামলাটি করেছেন।”
মামলার বরাতে পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার উপজেলার মংলারগাঁও গ্রামের প্রফুল্ল দাসের ছেলে আকাশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেইসবুকে একটি পোস্টে গিয়ে মন্তব্য করেন। এরপরই স্থানীয় ‘তৌহিদি জনতা’ ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে তার গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি করে বিক্ষোভ করে।
এর মধ্যেই রাতে কয়েকশ উত্তেজিত জনতা মংলারগাঁও ও উপজেলা সদরের বাজারে হিন্দু সম্প্রদায়ের বেশকিছু বাড়িঘর, দোকানপাট ও মন্দিরে হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। এতে ওই এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
ঘটনার শুরুর দিকেই পুলিশ আকাশ দাসকে আটক করে। পরে পুলিশের পক্ষ থেকে আকাশের বিরুদ্ধে সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা করে।
সেদিন রাত থেকেই আক্রান্ত গ্রামটি ঘিরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলে। হামলার ভয়ে যারা পালিয়ে গিয়েছেন তাদের বাড়িঘরে ফেরার আহ্বান জানান তারা। সেনাবাহিনী ও প্রশাসনেরর পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসীর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের অভয় দেন।
শুক্রবার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান সরকার পতনের পর তৈরি হওয়া আন্দোলনকারীদের জাতীয় নাগরিক কমিটির একটি প্রতিনিধিদল মংলারগাঁও পরিদর্শন করেন এবং সেখানকার ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলেন।
পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রতিনিধিদলের নেতা অ্যাডভোকেট মানজুর আল মতিন বলেন, “যারা হিন্দু ভাইদের বাড়িঘরে হামলায় জড়িত, তাদের বিচার হওয়ার দরকার, তাদের আইনের আওতায় আনা জরুরি। যারা হামলা করেছেন, তারা গোটা দেশের ঐক্য ও সম্প্রতি রক্ষার যে চেষ্টা, সেটাকে বাধাগ্রস্ত করছেন। তাদের চিহ্নিত করতে হবে।”
তিনি বলেন, “যিনি কোরআন অবমাননা করেছেন, তারও বিচার নিশ্চিত হওয়া জরুরি। না হলে এ ধরনের আবেগকে কেন্দ্র করে মানুষকে বিপথে নেওয়ার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। এটা কোনোভাবে হতে দেওয়া যাবে না।”