রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহারে চূড়ান্ত হচ্ছে তালিকা
বিগত ১৮ বছরে আওয়ামী লীগ ও ওয়ান ইলেভেনের সময়ে বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারে তালিকা হচ্ছে। যাচাই-বাছাই শেষে ধাপে ধাপে মামলাগুলো প্রত্যাহার করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে হওয়া মামলাগুলো ইতোমধ্যে প্রত্যাহার শেষ হয়েছে। পুরনো মামলাগুলোর মধ্যে বিচারিক প্রক্রিয়াতেও কিছু মামলা নিষ্পত্তি করা হয়েছে। তবে মোট মামলার তুলনায় সেই সংখ্যা খুবই কম।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে করা মামলায় চলতি বছর ১ জানুয়ারি ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন ঢাকার শ্রম আদালত-৩ এর বিচারক বেগম শেখ মেরিনা সুলতানা। পরবর্তীতে গত ৭ আগস্ট ঢাকার শ্রম অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম এ আউয়াল আপিল মঞ্জুর করে তার সাজা বাতিলের রায় দেন।
দুই মামলায় দণ্ড দিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে নাজিমউদ্দিন রোডে অবস্থিত পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রাখা হয়। সেখান থেকে পরে চিকিৎসার জন্য তাকে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায়ই প্রায় আড়াই বছর পর সরকারের নির্বাহী আদেশে তিনি মুক্তি পান। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরদিনই এই দুই মামলায় রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে তার দণ্ড বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করেন।
তবে মওকুফ নয়, আইনি প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়া মামলা মোকাবিলার ঘোষণা দেন। সেই অনুযায়ী গত ২৭ নভেম্বর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় তার সাজা বাতিল করে রায় দেন হাইকোর্ট। একইদিনে তাকে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি দুর্নীতি মামলাতে অব্যাহতি দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩ এর বিচারক আবু তাহের। ইতোপূর্বে নাইকো দুর্নীতি মামলাসহ বেশকিছু রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা থেকে অব্যাহতি বা খালাস পান তিনি।
সবশেষ রোববার (০১ ডিসেম্বর) ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলা থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ সব আসামিকে খালাস দেন হাইকোর্ট।
এর বাইরেও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনও দুদকের মামলায় খালাস বা অব্যাহতি পেয়েছেন।
বিএনপির মামলার তথ্য ও সংরক্ষণ শাখার বরাত দিয়ে গত বছর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৫ বছরে বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ১ লাখ ৩৮ হাজার ৭১টি মামলা থাকার কথা জানা যায়। এসব মামলায় আসামির সংখ্যা ৪০ লাখের উপরে। যদিও সে সংখ্যা গত ৫ আগস্ট পর্যন্ত আরও বেড়েছে। বিচারিক প্রক্রিয়ায় বিএনপিসহ অন্যান্য দলের নেতাকর্মীদের কিছু মামলা শেষ হলেও তা মোট দায়েরকৃত মামলার তুলনায় নগণ্য বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা।
তবে ইতোমধ্যে রাজনৈতিক বিবেচনায় মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশের জন্য কমিটি করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এর মধ্যে জেলা পর্যায়ে মামলা প্রত্যাহারে কমিটির সভাপতি করা হয়েছে জেলা প্রশাসককে। সদস্যসচিব থাকছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক। আর সদস্য পুলিশ সুপার (মহানগর এলাকার জন্য পুলিশের একজন ডেপুটি কমিশনার) ও পাবলিক প্রসিকিউটর (মহানগর এলাকার মামলাগুলোর জন্য মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর)।
ঢাকা মহানগরে ওই কমিটির সদস্য হিসেবে রয়েছেন মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী। জানতে চাইলে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, জেলা প্রশাসকের কাছে যেসব দরখাস্ত আসছে সেগুলো মতামত দেওয়ার জন্য আমাদের কাছে পাঠানো হচ্ছে। আমরা যাচাই-বাছাই করে মতামত দিচ্ছি। পরবর্তীতে কমিটির সবাই একসঙ্গে বসে তালিকা চূড়ান্ত করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। প্রত্যাহার করবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
মামলা প্রত্যাহারে অগ্রগতির বিষয়ে ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, সুপারিশের জন্য ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। এখনো কোনো তালিকা চূড়ান্ত হয়নি। অনেক দুর্নীতি বা মানি লন্ডারিংয়ের মামলাতেও প্রত্যাহার চাওয়া হচ্ছে। আবার ৫ আগস্টের পরের মামলাও অনেকে রাজনৈতিক বলে আবেদন করছেন। তাই আমরা মতামত দেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকছি। রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলার কথা বলে কোনো অপরাধী যেন সুবিধা না পান। আমরা প্রথম ধাপে আবেদনগুলো দ্রুতই চূড়ান্ত করে মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। এরপর ধাপে ধাপে বাকিগুলোও করা হবে।