দুই ডেপুটি গভর্নরের পদত্যাগ দাবিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ফের বিক্ষোভ
আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নিয়োগ পাওয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নরদের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একদল কর্মকর্তা।
তারা সময় বেঁধে দিয়ে বলেছেন, ডেপুটি গভর্নর নূরুন নাহার ও হাবিবুর রহমানকে রোববারের মধ্যে পদত্যাগ করতে হবে।
রোববার দুপুর আড়াইটার দিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৩০ তলা ভবনের সামনে দুই ডেপুটি গভর্নরের পদত্যাগের দাবিতে এই বিক্ষোভ চলে। তার আগে আন্দোলনকারীদের ৪০ সদস্যের একটি দল সকালে গভর্নর আহসান এইচ মনসুর সঙ্গে দেখা করে দুই ডেপুটি গভর্নরকে সরানোর দাবি জানিয়ে আসেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের অতিরিক্ত পরিচালক নজরুল ইসলাম বিক্ষোভ কর্মসূচিতে বলেন, “এখনও বাংলাদেশ ব্যাংকে আগের সরকারের নিয়োগ দেওয়া দুই ডেপুটি গভর্নর রয়েছেন। তাদের অবিলম্বের পদত্যাগের দাবি জানাচ্ছি। ডিজি এক ও ডিজি দুইতে পরিবর্তন আনার দাবি জানানো হয়েছিল আমাদের পক্ষ থেকে। গভর্নর বলেছেন এই বিষয়ে তিনি ব্যবস্থা নিবেন।”
তিনি বলেন, “কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন কর্মকর্তা, যারা এস আলম ও বিভিন্ন গ্রুপকে সহায়তা করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।”
নজরুল বলেন, গভর্নর তাদের বলেছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অনেকে ‘রাজনীতির সঙ্গে’ জড়িয়ে পড়েছেন। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নির্বাচন নিয়ে যেসব কর্মকাণ্ড হয়েছে, তাতেই এটা তার মনে হয়েছে।
তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অফিসার্স ওয়েলফেয়ার কাউন্সিলের নির্বাচন আপাতত স্থগিত থাকবে বলে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন গভর্নর।
গভর্নরের বক্তব্যের কারণেও ব্যাংক খাতে ‘এক ধরনের অনাস্থা’ তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ করেন নজরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, “গভর্নরের বক্তব্যের কারণে ব্যাংক থেকে আমানত তুলে নিয়েছেন অনেক গ্রাহক। তাই পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো ধরনের স্টেটমেন্ট দেওয়ার আগে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।”
৫ অগাস্ট ক্ষমতার পালাবদলের পর ইসলামী ব্যাংকে আন্দোলনের মাধ্যমে ব্যাংকখাতেও আন্দোলন শুরু হয়। ইসলামী ব্যাংকে এস আলমের ক্ষমতার বলয় থেকে মুক্ত করার দাবিতে ৬ অগাস্ট ইসলামী ব্যাংকের সামনে আন্দোলন করেন ব্যাংকটির কয়েকশ কর্মী।
বিক্ষোভের হাওয়া লাগে বাংলাদেশ ব্যাংকেও। ৭ অগাস্ট তৎকালীন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, চার ডেপুটি গভর্নর, বিএফআইইউ প্রধান ও পলিসি উপদেষ্টার পদত্যাগে উত্তাল হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এরপর ওই সপ্তাহেই গভর্নর, বিএফআইইউ প্রধান, পলিসি উপদেষ্টা ও দুই ডেপুটি গভর্নর পদত্যাগ করেন। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দুই ডেপুটি গভর্ন নুরুন নাহার ও হাবিবুর রহমান থেকে যান।
বিক্ষোভে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালক বায়েজিদ সরকার বলেন, “৫ অগাস্টের আগে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া ডেপুটি গভর্নর যারা এখনও বাংলাদেশ ব্যাংকে কর্মরত রয়েছেন, তাদের অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে। ৭ অগাস্ট যেসব দাবি জানানো হয়েছিল, সেসব দাবি পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে হবে।”
এ বিষয়ে ডেপুটি গভর্নর নূরুন নাহার ও হাবিবুর রহমানের বক্তব্য জানতে পারেনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।
যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "এ বিষয়ে গভর্নরের সঙ্গে কথা হয়েছে। এ বিষয়ে কী করতে হবে তিনি বলেছেন।"
কী নির্দেশনা পেয়েছেন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, "এ বিষয়ে আমি কোন কিছু বলতে পারব না।"
আরেক ডেপুটি গভর্নর মোহাম্মদ হাবিবুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, "এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে চাচ্ছি না। আমার কোনো বক্তব্য নেই।"