রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ব্রেকিং

জাতীয়

তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রশ্নে সবাই একমত: বদিউল

 প্রকাশিত: ১৯:০২, ২৪ নভেম্বর ২০২৪

তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রশ্নে সবাই একমত: বদিউল

তের বছর আগে বাতিল হওয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার।

রোববার নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কমিশনের বৈঠক শেষে তিনি বলেছেন, “এই আলোচনা থেকে যেটা সুস্পষ্ট হলো- তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে সবাই একমত হয়েছে। নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন করতে হবে, শক্তিশালী করতে- বিশেষ করে আর্থিক স্বাধীনতা দিতে হবে।

“নির্বাচন কমিশনকে সরকারের অধীনে আরেকটা সরকার হতে হবে- এমনভাবে তারা শক্তিশালী হবে।”

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বিরোধী দলগুলোর আন্দোলনের চাপে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান এনে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী সংসদে পাস করে বিএনপি।

পরে আবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরলে ২০১০ সালের ১ মার্চ আপিল বিভাগে ত্রয়োদশ সংশোধনী মামলার শুনানি শুরু হয়। শুনানিতে আপিল আবেদনকারী এবং রাষ্ট্রপক্ষ ছাড়াও অ্যামিকাস হিসেবে শীর্ষস্থানীয় ৮ জন আইনজীবী বক্তব্য দেন।

তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহাল রাখার পক্ষে মত দেন। এমনকি তৎকালীন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমও এর পক্ষে মত দেন।

ওই আপিল মঞ্জুর করে সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ ২০১১ সালের ১০ মে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে রায় দেয়। তখন প্রধান বিচারপতি ছিলেন এবিএম খায়রুল হক।

পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হওয়ার আগেই ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হয় এবং রাষ্ট্রপতি ৩ জুলাই তাতে অনুমোদন দেন।

ওই সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত অগাস্টে পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল চেয়ে একটি রিট আবেদন করেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচজন।

অগাস্ট মাসেই ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনার জন্য আপিল বিভাগে আবেদন (রিভিউ) করেন সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচজন। পরে একই আর্জি জানিয়ে আরেকটি আবেদন করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিদ্যমান নির্বাচনি ব্যবস্থা সংস্কারের লক্ষ্যে গত ৩ অক্টোবর সুজন সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারকে প্রধান করে আট সদস্যবিশিষ্ট সংস্কার কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ৯০ দিনের মধ্যে এই কমিশনের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা।

রোববার দুপুরে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম বলেন, “অতীতের নির্বাচন কমিশনগুলো যে কলঙ্কজনক নির্বাচন করেছে বা পাতানো নির্বাচন করেছে- এটা করার মাধ্যমে তারা শপথ ভঙ্গ করেছে, সংবিধান ভঙ্গ করেছে; এইজন্য তাদের বিচারের আওতায় আনার কথা সবাই বলেছে।

“আজকে যারা এসেছেন তারা অনেক অভিজ্ঞ গবেষক। আমরা তাদের সাথে খোলামেলা আলোচনা করেছি।”

তিনি বলেন, “নাগরিক সমাজের যারা এসেছে, তারা সবাই ‘না' ভোটের বিধান চালু করার কথা বলেছে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্য গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার দাবি জানিয়েছে। রাজনৈতিক দলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত না হলে দেশে গণতন্ত্র আসবে না।

“রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়েও আলোচনা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। রাষ্ট্রপতির পদকে শক্তিশালী করার কথা বলেছেন।?

২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে অনুষ্ঠিত নবম সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশের নাগরিকরা প্রথমবারের মতো ‘না ভোট’ দেয়ার সুযোগ পায়।

ওই নির্বাচনে মোট ৩ লাখ ৮১ হাজার ৯২৪ জন ‘না’ ভোট দিয়েছিলেন। ‘না’ ভোটের এই পরিমাণ ছিল বাক্সে পড়া মোট ভোটের শূন্য দশমিক ৫৫ শতাংশ।

তখন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৪০(ক) ধারায় বলা ছিল, যদি ‘না ভোট’ সর্বোচ্চ ভোট পাওয়া প্রার্থীর ভোটকে ছাড়িয়ে যায়; সেক্ষেত্রে নতুন করে নির্বাচন হবে।

আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন করা হলে তাতে ‘না’ ভোটের বিধান বাদ পড়ে।

সংসদে সংরক্ষিত আসন প্রসঙ্গে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি ভোটে ব্যবস্থা করার কথা বলেছেন এবং নারীর জন্য সরাসরি আসন থাকতে হবে ও প্রত্যক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। এক্ষেত্রে আমরা যে ঘূর্ণায়মান পদ্ধতির কথা বলেছি- সেটা হতে পারে।”

নারীর ক্ষমতায়ন প্রশ্নে সরাসরি নির্বাচনে ঘূর্ণায়মান পদ্ধতির দাবি জানিয়ে আসছে সুজন। এ পদ্ধতিতে এক তৃতীয়াংশ সংসদ সদস্য পদ নারীদের জন্য সংরক্ষণের কথা বলা হচ্ছে, যেখানে সরাসরি ভোটের লড়াইয়ে থাকবেন কেবল নারী প্রার্থীরা।

সেজন্য লটারি করে প্রথমবার একশ আসন সংরক্ষণ করার দাবি বেসরকারি সংগঠনটির। অন্য ২০০ আসনে নারী-পুরুষসহ সবরাই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগদানে কথা বলা হচ্ছে। এসব আসন পালা করে সংরক্ষিত হিসেবে থাকবে পরের দুই নির্বাচনে।

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য আবদুল আলীম, জেসমিন টুলী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আল মাসুদ হাসানুজ্জামান, চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন সভায় অংশ নেন।