পঙ্গু হাসপাতাল: ১৫ ঘণ্টা পর সড়ক ছেড়েছেন আন্দোলনে আহতরা
গভীর রাতে চার উপদেষ্টা হাজির হয়ে দাবি বাস্তবায়নসহ বৈঠকের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর হাসপাতালে ফিরে গেছেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহতরা।
বৃহস্পতিবার ভোর ৪টার দিকে আন্দোলনকারীরা সড়ক ছেড়ে দেন বলে জানিয়েছেন শেরেবাংলা নগর থানার এসআই সঞ্জীব কুমার সরকার।
এদিন সকালে আন্দোলনকারীদের একজন সালমান বলেন, “চার উপদেষ্টা এসে আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন।
“আজ দুপুর ২টায় সচিবালয়ে আমাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। পরে আমরা সড়ক ছেড়ে ফিরে যাই।”
সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসনের দাবিতে বুধবার দুপুর থেকে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালের সামনে শ্যামলী-আগারগাঁও সড়ক অবরোধ করে রাখে কোটা সংস্কার ও আওয়ামী লীগ সরকার পতনের সময় আন্দোলনে আহতরা।
তারা সমন্বয়ক থেকে অন্তর্বর্তী সরকারে উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়া নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম ও সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদের সাক্ষাৎ না পাওয়া পর্যন্ত অবস্থান চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
রাত সাড়ে ১২টার দিকে দ্বিতীয় দফায় উপস্থিত হয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ আন্দোলনকারীদের বলেন, উপদেষ্টা আসিফ ও নাহিদ এই মুহূর্তে ঢাকায় নেই। সবার সঙ্গে বসতে হলে বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার আগে সম্ভব নয়।
হাসনাতের আহ্বানে সড়ক ছেড়ে না দিয়ে অবস্থান ধরে রাখেন আন্দোলনকারীরা। রাত ৩টার দিকে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দেখা করতে যান উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল, প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার ও যুব উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়ে তারা বলেন, আন্দোলনকারী প্রতিনিধির সঙ্গে বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে বৈঠক করা হবে।
এ সময় নিজেদের ‘ভুল স্বীকার’ করে আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে আসিফ নজরুল বলেন, “আমি প্রথমেই আপনাদের কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। আমাদের ব্যর্থতা আছে, ভুল আছে।
“আপনাদের প্রতি আমাদের অনেক বেশি দায়িত্বশীল হওয়া উচিত ছিল, কিন্তু আমরা কাজটি করতে পারিনি। আগামীকাল ২টায় আসেন, আমরা একটা কমপ্লিট রূপরেখা দেব, একটা লিখিত দেব।”
বুধবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে জুলাই-অগাস্টে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহতদের দেখতে পঙ্গু হাসপাতালে যান স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম।
হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে ফিরে আসার সময় সব আহতদের ‘দেখতে না যাওয়ায়’ বিক্ষোভের মুখে পড়েন তিনি। তারা উপদেষ্টার গাড়ি আটকে দেন। কিছু সময় পর উপদেষ্টা ওই হাসপাতাল ত্যাগ করলে বেলা ১টার দিকে বিক্ষোভকারীরা শ্যামলী থেকে আগারগাঁও যাওয়ার সড়কে গিয়ে অবস্থান নেন।
উপদেষ্টা চলে যাওয়ার পর তারা পঙ্গু হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ফটক বরাবর রাস্তাটির দুই পাশ আটকে দেন। রাস্তার উপর হুইল চেয়ার ক্রাচ হাতে কয়েকজন আহতকে বসে থাকতে দেখা যায়।
পরে রাত ৮টার দিকে হাসনাত আবদুল্লাহ সেখানে এসে কথা বলার চেষ্টা করেন বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে। তবে আন্দোলনকারীরা তার কাছে দাবি-দাওয়া তুলে ধরতে চাননি।
এর আগে সন্ধ্যা ৭টার দিকে ‘জুলাই শহীদ ফাউন্ডেশন’র প্রধান নির্বাহী মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলতে আসেন। তিনি আহতদের সুচিকিৎসা ও প্রয়োজনে বিদেশে নেওয়ার আশ্বাস দেন। তবে বিক্ষোভকারীদের হইচইয়ের স্নিগ্ধ কথা শেষ করতে পারেননি। বারবারই তাকে থেমে যেতে হয়।