ঢাকায় জাতিসংঘ মানবাধিকারের কার্যালয় চায় না হেফাজত
ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের কার্যালয় খুলতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে অন্তর্বর্তী সরকারকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ।
এর যুক্তি হিসেবে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন কাগুজে’ সংস্থা হিসেবে বর্ণনা করে সংগঠনটি বলেছে, ঢাকায় তাদের কার্যালয় খুলতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত চরম আত্মঘাতী হবে।
“নতুন করে বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা তৈরি হোক এবং তাতে অন্তর্বর্তী সরকার আরও দুর্বল হয়ে পড়ুক তা আমরা চাই না।"
সংগঠনের আমির মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও মহাসচিব সাজেদুর রহমান সংবাদমাধ্যমে বিবৃতিতে পাঠিয়ে এ আহ্বান জানিয়ছেন।
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব আজিজুল হক ইসলামাবাদী বিবৃতির বিষয়টি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে নিশ্চিত করেছেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রধান ফলকার টুর্কের ঢাকা সফরকালে বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিষদের কার্যালয় খোলার প্রস্তাবের বিষয়টি সামনে আসে। জাতিসংঘ এ নিয়ে প্রস্তাব দিলেও এ নিয়ে সিদ্ধান্ত হওয়ার বিষয়ে সরকারের দুই উপদেষ্টা দুই রকম বক্তব্য দিয়েছেন।
ফলকার টুর্কের সঙ্গে বৈঠকের পর মঙ্গলবার সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমীন মুরশিদ বলেন, ওই কার্যালয় খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে এ বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত না হওয়ার কথা পরদিন বলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনের ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে সপ্তদশ দেশ হিসেবে ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের এমন কার্যালয় হতে যাচ্ছে।
বিবৃতিতে হেফাজতের শীর্ষ দুই নেতা এর বিরোধিতা করে বলেন, "দেশে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার আমলজুড়ে অজস্র মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছিল। গুম-খুন ছাড়াও বিশেষত বিডিআর হত্যা, ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরের গণহত্যার পরও নির্বিঘ্নে স্বৈরাচারী শাসন কায়েম রাখতে পেরেছিল হাসিনা।
"পর্যাপ্ত তথ্যপ্রমাণ থাকা সত্ত্বেও হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে কোনো উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিতে পারেনি জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন। উল্টো গত বছরের নভেম্বরে জাতিসংঘের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার দুর্নীতিগ্রস্ত কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে সমস্ত প্রতিবাদ উপেক্ষা করে নিয়োগ দেওয়া হয়।"
এসব কারণে এমন ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন কাগুজে’ মানবাধিকার সংস্থার অফিস ঢাকায় হোক তা দেশের জনগণ চায় না বলে মন্তব্য করেন হেফাজতের নেতারা।
বিবৃতিতে বলা হয়, "জাতিসংঘের মানবাধিকার পলিসিতে এলজিবিটিকিউ তথা সমকামীদের অধিকারের বিষয়টি অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত। কিন্তু বাংলাদেশ মুসলিম-অধ্যুষিত রাষ্ট্র হওয়ায় এদেশে সমকামিতা শুধু ধর্মীয় ও সামাজিকভাবে নিষিদ্ধই নয়, রাষ্ট্রীয় আইনেও দণ্ডনীয় অপরাধ।
"এছাড়াও উত্তরাধিকার সম্পত্তি বণ্টনে তাদের নারী-পুরুষ সমানাধিকার ও সর্বজনীন যৌনশিক্ষার ইস্যুগুলো ইসলামের সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক।"
পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে খ্রিষ্টান রাজ্য বানানোর আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রও উদ্বেগের বিষয় হিসেবে তুলে ধরে হেফাজত নেতারা বলেন, "সন্ত্রাসীরা পার্বত্য চট্টগ্রামে যে সন্ত্রাসবাদ, অশান্তির দাবানল সৃষ্টি করেছে, তা রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল। এমনকি পার্বত্য চট্টগ্রামে ৩৮ হাজার বাঙালি হত্যার দায় ও সব ঘটনার দায় অবশ্যই সন্ত্রাসীদের নিতে হবে। কিন্তু জাতিসংঘ তাদের ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে সন্ত্রাসীদের পক্ষে বক্তব্য বিবৃতি দিয়েছেন।”
হেফাজত বলছে, বিভিন্ন মুসলিম দেশে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার নেতৃত্বে বোমাবর্ষণ, গণহত্যা, আগ্রাসন, লুটপাট ও নজিরবিহীন মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলেও জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদ সেসবের কিছুই ঠেকাতে পারেনি।
"দশকের পর দশক বিনা বাধায় ফিলিস্তিনে ইসরাইলের গণহত্যা ও দখলবাজি চলমান এবং কাশ্মিরে ভারত কর্তৃক মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়মিত ঘটনা। এমনকি সাম্রাজ্যবাদীদের আগ্রাসনকবলিত ইরাক, সিরিয়া, ইয়েমেন, লিবিয়া ও লেবাননসহ অসংখ্য মুসলিম দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধে কোনো দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতেও চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে সংস্থাটি।"
যে কারণে 'দেশের স্বার্থে' ও 'মুসলিম জনগোষ্ঠীর সভ্যতা সংস্কৃতি অক্ষুন্ন রাখার জন্য' এ কার্যালয় খুলতে দেওয়া যাবে না বলে বিবৃতিতে দাবি করেন হেফাজত ইসলামের নেতারা।