আয়কর দিন ঘরে বসে: প্রধান উপদেষ্টা
দেশবাসীকে অনলাইনে আয়কর ই-রিটার্ন জমা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি বলেছেন, এখন থেকে ব্যাংকে লাইন দিয়ে আয়কর জমা দেওয়া বা আয়কর অফিসে গিয়ে রিটার্ন জমা দেওয়ার ঝামেলা আর করতে হবে না।
“আপনি ঘরে বসেই আয়কর জমা দিয়ে রিটার্ন দাখিল করবেন, এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”
সোমবার দেশবাসীর উদ্দেশে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় এ কথা বলেন মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি বলেন, “আয়কর নিয়ে দুটি কথা বলছি। আপনাদের দেয়া কর-ই দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। অথচ সরকারের কাছে করের টাকা জমা দিতেই পোহাতে হয় নানা ঝামেলা।”
সেজন্য ঘরে বসে অনলাইনে কর দিয়ে রিটার্ন দাখিল সহজ করার কথা তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর শহরের সকল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সকল তফসিলি ব্যাংক, মোবাইল ফোন অপারেটর এবং বেশ কিছু বহুজাতিক কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য এভাবে আয়কর রিটার্ন দেওয়া এখন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
“দেশের বাকি সবাইকে অনলাইনে ই-রিটার্ন ও আয়কর জমা দেওয়ার জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে।”
ইউনূস বলেন, “কোন প্রতিষ্ঠান কত বেশি করদাতার আয়কর রিটার্ন অনলাইনে দিচ্ছেন, তার ভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় পুরস্কার অর্জনের জন্য জেলায় জেলায়, শহরে শহরে প্রতিযোগিতা হোক।
“আপনার আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী, বন্ধুবান্ধবকে শিখিয়ে দিন, কীভাবে ঘরে বসে অনলাইনে ই-রিটার্ন আয়কর জমা দিতে হয়। তরুণ-তরুণীদের অনুরোধ করছি এ ব্যাপারে করদাতাদের সাহায্য করার জন্য। ভবিষ্যতে উদ্যোক্তা হবার প্রস্তুতি এখান থেকেই শুরু হতে পারে।”
ধীরে ধীর সব ধরনের কর অনলাইনে সংগ্রহ করার জন্য সরকার প্রস্তুতি নিচ্ছে জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “সবার জন্য এখন থেকে আয়কর দেওয়ার অভিজ্ঞতা মসৃণ ও ঝঞ্ঝাটমুক্ত হোক।”
এনবিআর গত কয়েক বছর ধরেই অনলাইনে রিটার্ন দাখিলের বিষয়টিকে উৎসাহ দিয়ে আসছে। ২০২৪-২০২৫ করবর্ষের রিটার্ন দাখিল ও কর পরিপালন সহজ করতে এনবিআর গত ৯ সেপ্টেম্বর অনলাইন রিটার্ন দাখিল সিস্টেম উন্মুক্ত করে।
www. etaxnbr. gov.bd ওয়েবসাইটে গিয়ে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতারা সহজে নিজের রিটার্ন তৈরি করে অনলাইনে জমা দিতে পারছেন।
সেজন্য করদাতার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরটি নিজের জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে বায়োমেট্রিক নিবন্ধিত কি না, তা আগে যাচাই করে নিতে হবে। যাচাই করার জন্য ১৬০০১ নম্বরে ডায়াল করতে হবে।
এই পোর্টাল চালুর সময় এনবিআর জানিয়েছিল, ই-রিটার্ন পদ্ধতিতে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতারা নিজের রিটার্ন তৈরি, অনলাইনে রিটার্ন দাখিল অথবা অফলাইনে রিটার্ন দাখিলের জন্য প্রিন্ট করে নিতে পারবেন।
সেই সঙ্গে অনলাইন ব্যাংকিং, ক্রেডিট কার্ড ও ডেবিট কার্ড বা মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে কর পরিশোধ করা যাবে।
এছাড়া রিটার্ন দাখিলের তাৎক্ষণিক প্রমাণপ্রাপ্তি, আয়কর পরিশোধ সনদ ও টিআইএন সনদ, আগের বছর দাখিল করা ই-রিটার্নের কপি, রিটার্ন দাখিলের প্রমাণ প্রিন্ট বা ডাউনলোডের সুবিধা আছে।
এ বছর ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সকল সরকারি কর্মচারীর অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করে বিশেষ আদেশ জারি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর।
দেশের সকল তফশিলি ব্যাংকের কর্মকর্তা ও কর্মচারীর জন্যও এ আদেশ প্রযোজ্য হবে।
একই সঙ্গে ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো বাংলাদেশ, ইউনিলিভার বাংলাদেশসহ সকল মোবাইল অপারেটরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্যও অনলাইনে রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।