রোববার ২৭ অক্টোবর ২০২৪, কার্তিক ১১ ১৪৩১, ২৩ রবিউস সানি ১৪৪৬

ব্রেকিং

বাফুফের নতুন সভাপতি তাবিথ আউয়াল ছাত্র আন্দোলনে আহতদের ৮৬৭ জন সিএমএইচসমূহে চিকিৎসাধীন ‘অপরাধী’ ব্যবসায়ীর বিচার হবে, চলবে প্রতিষ্ঠান: আসিফ মাহমুদ নরসিংদীতে ট্রাক চাপায় অটোরিকশার ৬ যাত্রী নিহত প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সেনাপ্রধানের সাক্ষাৎ ইরানের সামরিক স্থাপনায় ইসরাইলের হামলা ইরানের ওপর ইসরায়েলের হামলা ‘আত্মরক্ষার মহড়া’: যুক্তরাষ্ট্র ইরানে হামলার পর নেতানিয়াহুর নিরাপত্তা মূল্যায়ন বৈঠক গাজা থেকে ফিরে ট্রমার সঙ্গে যুদ্ধ, আত্মাহুতি দিচ্ছেন ইসরায়েলি সেনারা নারায়ণগঞ্জে গ্যাসের আগুনে নারী-শিশুসহ পরিবারের ৬ জন দগ্ধ হাসনাত আব্দুল্লাহর ছেলে মঈন আব্দুল্লাহ গ্রেফতার

জাতীয়

‘অপরাধী’ ব্যবসায়ীর বিচার হবে, চলবে প্রতিষ্ঠান: আসিফ মাহমুদ

 প্রকাশিত: ১৬:৩০, ২৬ অক্টোবর ২০২৪

‘অপরাধী’ ব্যবসায়ীর বিচার হবে, চলবে প্রতিষ্ঠান: আসিফ মাহমুদ

অর্থপাচারসহ বিভিন্ন অপরাধে যেসব ব্যবসায়ী জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলেও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু থাকবে বলে জানিয়েছেন কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।

তিনি বলেছেন, “ব্যক্তির অপরাধের কারণে ব্যক্তি ট্রায়ালের শিকার হবে, তবে প্রতিষ্ঠানগুলোকে আমরা অভয় দিতে চাই। আপনারা আপনাদের কাজ করুন।

“তাদের জন্য এত বছর জনকল্যাণমুখী কাজ করতে পারেননি, এখন সুযোগ এসেছে সেদিকে নজর দিন।"

শনিবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি অডিটোরিয়ামে ভোক্তা অধিকার সম্মেলনে বক্তব্য রাখছিলেন আসিফ মাহমুদ।

তিনি বলেন, “দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে একটা সমস্যা হলো- ট্রানজেকশনের (লেনদেন) একটা প্রভাব। বাংলাদেশের বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ মালিকের বিরুদ্ধে অর্থপাচার বা ঋণ খেলাপির অভিযোগ আছে। তাদের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। তবে ব্যক্তির অপরাধ এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পার্থক্য আছে।

“যে ব্যক্তি অপরাধ করেছে- ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানকে ব্যাবহার করে এবং সরকারের সাথে সুসম্পর্কের মাধ্যমে অর্থপাচার করেছে; তাদেরকে আমরা ট্রায়ালের আওতায় নিয়ে আসব। কিন্তু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে সক্রিয় রাখার জন্যে সরকার সহযোগিতা করছে।"

এ বিষয়ে উদাহরণ দিতে গিয়ে শ্রম উপদেষ্টা বলেন, “বেক্সিমকোর সাথে ৭০ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর জীবন জড়িত। তার মানে ৭০ হাজারটি পরিবারের জীবন সেখানে জড়িত। তো সেই প্রতিষ্ঠানকে সচল রাখার জন্যে সরকার সাহায্য করছে; তাদেরকে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছে।"

আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, “দ্রব্যমূল্যের একটি ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধি আমরা দেখতে পেয়েছিলাম, সেটিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েই আমরা কার্যক্রম শুরু করি।

“ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের জেলায় জেলায় টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। তাদের সাথে ছাত্র প্রতিনিধিরাও রয়েছেন। তার কিছু সুফল আমরা দেখেছি।”

তিনি বলেন, “গত বছর একজন ভোক্তা হিসেবে দেখেছি- যখন দামটা বাড়া শুরু করে, তখন সেটা অসীম পর্যায়ে চলে যায়। কাঁচামরিচের দাম ১২০০ টাকায় উঠে গিয়েছিল।

“দাম সঠিক সময়ে এবার নিয়ন্ত্রণ করায় আর বাড়তে পারেনি। শীতের সবজি আসছে। দাম আরও কমে আসবে বলে আশা রাখছি।"

শ্রম উপদেষ্টা বলেন, “এ সরকারে তরুণদের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আমি চেষ্টা করি। টাস্কফোর্সে তরুণদের অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে আমি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করেছি।

“ট্রাফিক পুলিশিং যারা করেছিল, তাদেরকে পুলিশে পার্ট টাইম কাজ করানোর কাজ চলমান আছে এবং যেকোনো কাজে তরুণদের অংশগ্রহণই- এই সরকারকে সফল করতে পারে। তরুণদের কাজ করার স্পৃহা, নির্লোভ সত্তা আমাদেরকে নতুন বাংলাদেশের দিকে ধাবিত করতে পারে।"

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে উপদেষ্টা হওয়া আসিফ মাহমুদ বলেন, “ভোক্তা অধিকার আইন সংশোধনের বিষয়ে আমি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার সাথে কথা বলেছি।

“আমরা দ্রব্যমূল্য লাঘবসহ বেশ কিছু বিষয়ে আলোচনা করেছি। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। আমরা দ্রুত দ্রব্যমূল্য লাঘবের চেষ্টায় আছি।"

তিনি বলেন, “মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আমরা কৃষক থেকে সরাসরি বাজারে পণ্য পাঠাতে সাহায্য করছি। কোনো প্রকার সিন্ডিকেট বা মধ্যসত্ত্বভোগীর দৌরাত্ম্য যেন না আসে- সেদিকে তারা কাজ করছে।

“কৃষক থেকে সরাসরি বাজারে পণ্য পাঠাতে যারা কাজ করছে, তাদেরকে সরকার সাহায্য করছে।”

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা এ এইচ এম সফিকুজ্জামানকে গত ৫ সেপ্টেম্বর শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব করে সরকার।

শ্রম উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, “এ এইচ এম সফিকুজ্জামানকে আমার সেক্রেটারি হিসেবে নেওয়ার কারণ হলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উনার কাজ দেখা। তাই আমি বলতে চাই- পদোন্নতির জন্য আপনি ঘুষ নয়, নিজের কাজ ভালোভাবে করলে পদোন্নতি হবে।”

বর্তমান সরকার কোনো ব্যবসায়ীর কাছে জিম্মি নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আমরা দেখেছি ইতিপূর্বে যে সরকারগুলো ছিল, তারা সবাই কর্পোরেটদের হাতে জিম্মি ছিল।

“আমরা কর্পোরেটদের হাতে বন্দি নই, আমরা স্বাধীন। আমরা যে কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারি এবং নিচ্ছি। দেশের অন্যতম দুটি প্রতিষ্ঠানের মালিকদেরও কিন্তু ছাড় দেইনি।"

মাঠ প্রশাসনকে সক্রিয় করাই অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জ মন্তব্য করে আসিফ মাহমুদ বলেন, “একটা কাজ করতে গেলে আমাদের সদিচ্ছাগুলো আটকে যায় বাস্তবায়নে গিয়ে। আমরা মাঠ প্রশাসনে প্রভাব দেখতে পাই না।

“আমরা চেষ্টা করছি সেখানে রদবদল করে সমাধান করার। দক্ষ কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দিয়ে তারা যেন জনকল্যাণে কাজ করতে পারে- সে নির্দেশনা দিচ্ছি।”

অনুষ্ঠানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব সেলিম উদ্দিন বলেন, “দুর্ভাগ্যজনক বিষয়- কিছুদিন আগে বন্যা হয়েছে, অনেক জেলায় ফসলহানি হয়েছে; বছরের এই সময়ে সারাদেশে কার্তিক-অগ্রহায়ণের মঙ্গা নামে পরিচিত শীতে কিছু ফসলের ঘাটতি হয়।

“এদিকে আন্তর্জাতিকভাবে কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে, কিন্তু এটিকে আমরা অজুহাত হিসেবে নিতে চাই না। এটি তো আমরা আগে থেকেই জানতাম যে- এসময় এমন হবে। তাই এটি আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।"

তিনি বলেন, “জনগণকে সচেতন হতে হবে। আইন প্রয়োগ করে বাস্তবায়ন করার চেয়ে জনগণের সচেতনতায় এটি সমাধান সহজ। নৈতিক মূল্যবোধ থাকতে হবে। এ আইন বাস্তবায়ন করতে জনগণকে আমাদের সাথে দরকার।"

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান বলেন, “ডিমের মত দ্রব্যের দাম বাড়ার পেছনে দায়ী মধ্যস্বত্ব। মধ্যস্বত্ব বাদ দিয়ে ডজনে ২৫-৩০ টাকা কমানো গেছে। সিন্ডিকেটের তথ্য গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে পেলে আমরা ব্যবস্থা নেব।

“তবে বাস্তবতাকে অনেকে বুঝতে চায় না। একটা রক্তাক্ত অভ্যুত্থান হলো, তারপর বড় বন্যা হলো। এতে দেশের বিভিন্ন এলাকার ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হলো। এতে সাধারণ মানুষ ও ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে দ্রব্যমূল্য বাড়া শুরু করলো।"

তিনি বলেন, “আমি আপনাদের সকলের সামনে কথা দিচ্ছি, আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। ভোক্তা অধিকার সর্বোচ্চ কাজ করবে। তবে সব কিছুই আমার আওতাধীন নয়। কিছু বিষয় মন্ত্রণালয়ের অধীনে আছে।"

শ্রম ও কর্ম সংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান, সাবেক অতিরিক্ত সচিব রাশেদুল হক,

জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা, বাংলাদেশ ছাত্র শিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল জাহিদুল ইসলাম অন্যদের মধ্যে সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।