নষ্ট করা হয়েছে ‘আয়নাঘরের’ আলামত: গুম সংক্রান্ত কমিশন
প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) কার্যালয়ে গিয়ে বহুল আলোচিত ‘আয়নাঘর’ বা বন্দিশালা ঘুরে দেখে আলামত নষ্টের প্রমাণ পাওয়ার কথা জানিয়েছে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে গুমের ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিশন।
কমিশনের সভাপতি হাই কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরী বৃহস্পতিবার ঢাকার গুলশানে কমিশনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, কাজে নেমে দুই সপ্তাহে গুমের প্রায় চারশ অভিযোগ তারা পেয়েছেন।
ডিজিএফআই কার্যালয়ের বন্দিশালা দেখার অভিজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, “ডিজিএফআইয়ের যেটা আয়নাঘর বা জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেল, ওইটা ডিজিএফাইয়ের কমপাউন্ডে আছে, এটা দোতলা বিল্ডিং। নিচতলায় প্রায় ২০ থেকে ২২টা সেল আছে। উপরের তলায় কিছু রুম আছে। সোশাল মিডিয়ায় এটা বলা হচ্ছে আয়নাঘর, কিন্তু, এটা বেসিক্যালি জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেল।”
কমিশনের সভাপতি বলেন, সবচেয়ে বেশি গুমের অভিযোগ এসেছে র্যাব, ডিজিএফআই, ডিবি ও সিটিটিসির বিরুদ্ধে।
“২৫ সেপ্টেম্বর আমরা ডিজিএফআইয়ের আয়নাঘর পরিদর্শন করেছি। ১ অক্টোবর আমরা ডিবি ও সিটিটিসি পরিদর্শন করেছি। তবে সেখানে কোনো বন্দি আমরা পাইনি। সম্ভবত ৫ অগাস্টের পর সেখানে থেকে সবাইকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। র্যাবেরটায় আমরা এখনও পরিদর্শন করি নাই, সামনে করব।”
তবে আয়নাঘরের বিভিন্ন আলামত নষ্ট করা হয়েছে জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে গুম কমিশনের সদস্য সাজ্জাদ হোসেন বলেন, “সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ এভিডেন্স তারা নষ্ট করে দিয়েছে ওয়ালে পেইন্ট করে।
“ভিক্টিমরা বলেছিল ওয়ালে তাদের অনেক কথা, নাম এগুলো লেখা ছিল। অনেকের ফোন নম্বর, অনেকের ঠিকানা লেখা ছিল। ওই জিনিসগুলো পেইন্ট হওয়ার কারণে সেটা আর আমরা ওখানে পাইনি। গত ৫ অগাস্ট যখন রেজিম চেইঞ্জ হল, তার পরপরই এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে বলে আমাদের ধারণা।”
কমিশনে কেমন অভিযোগ জমা পড়ছে এই প্রশ্নের জবাবে বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ভার্চুয়ালি কাজ শুরুর পর ১৩ দিনে তারা ৪০০ অভিযোগ পেয়েছেন।
“অনেকে লিখিতভাবে অভিযোগ পাঠিয়েছেন, অনেকে ইমেইলে পাঠিয়েছেন। আপনারা বুঝতেছেন এটা একটা সময়সাপেক্ষ কাজ।”
তিনি বলেন, “রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় বা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক যারা গুম হয়েছেন, তাদের অভিযোগগুলো নিয়েই আমরা কাজ করেছি। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাদেরও আমরা ডাকব। বক্তব্যের জন্য সমন দেব। অভিযুক্তরা না এলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
এই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিজেদের নিরাপদ মনে করছেন কিনা– এমন প্রশ্নের জবাবে অবসরপ্রাপ্ত এই বিচারপতি বলেন, “আমরা নিজেদের নিরাপদ মনে করছি। কোনো প্রতিষ্ঠানের চাপ নেই আমাদের ওপর।”
আওয়ামী লীগ সরকারের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ‘গুমের’ ঘটনা তদন্তে গত ২৭ অগাস্ট অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের এই কমিটি গঠন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
কমিশন গঠনের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, “আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, শৃঙ্খলা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা, তদন্তকারী সংস্থা এবং অনুরূপ যে কোনো বাহিনী বা সংস্থার কোনো সদস্য বা সরকারের মদদে, সহায়তায় বা সম্মতিতে কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তি-সমষ্টি কর্তৃক 'আয়নাঘর' বা যেকোনো জ্ঞাত বা অজ্ঞাত স্থানে বলপূর্বক গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান, বলপূর্বক গুমের ঘটনার সহিত জড়িত ব্যক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান চিহ্নিতকরণ ও তাহাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ প্রদান এবং বলপূর্বক গুম হওয়ার ঘটনা প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় আইন সংস্কারের সুপারিশসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কার্যাদি” সম্পাদনের জন্য এই কমিশন গঠন করা হয়েছে।
২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ৫ অগাস্ট সরকার পতনের দিন পর্যন্ত সময়ের ঘটনা কমিশনের বিবেচনায় আনা যাবে।
গত ১২ সেপ্টেম্বর অভিযোগ জানানোর প্রক্রিয়া তুলে ধরে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে কমিশন। অভিযোগ জানাতে প্রথমে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় দেওয়া হলেও পরে তা ১০ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ানো হয়।