বুধবার ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, মাঘ ২ ১৪৩১, ১৫ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

‘সংস্কারের’ পথ করতে সরে দাঁড়াল হাবিবুল আউয়াল কমিশন

 আপডেট: ১৬:১৫, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪

‘সংস্কারের’ পথ করতে সরে দাঁড়াল হাবিবুল আউয়াল কমিশন

ক্ষমতার পট পরিবর্তনে পালাবদলের ঢেউয়ে এবার কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনকেও সরে যেতে হল।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন আয়োজন করা এ কমিশন মেয়াদ শেষ হওয়ার আড়াই বছর বাকি থাকতেই সাংবিধানিক পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিল।

বৃহস্পতিবার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, “আমিসহ মাননীয় কমিশনারগণ দেশের পরিবর্তিত বিরাজিত অবস্থায় পদত্যাগ করতে মনস্থির করেছি। আমরা অদ্যই পদত্যাগপত্র মহামান্য রাষ্ট্রপতির সমীপে উপস্থাপনের নিমিত্তে কমিশনের সচিব মহোদয়ের কাছে দেব।”


দুই নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান ও সাবেক আমলা মো. আলমগীর সংবাদ সম্মেলনে সিইসির সঙ্গে ছিলেন। নির্বাচন কমিশনার রাশদা সুলতানা ও আনিছুর রহমান অনুপস্থিত ছিলেন।

২০২২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি দেশের ত্রয়োদশ সিইসি হিসেবে দায়িত্ব নেন সাবেক আমলা হাবিবুল আউয়াল। তার নেতৃত্বে এ কমিশনের পরিচালনায় এ বছর ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হয়। এছাড়া এ আড়াই বছরে দেড় সহস্রাধিক বিভিন্ন নির্বাচন করেছে কমিশন।

ছাত্র-জনতার গণ আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশজুড়ে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির মধ্যে ৮ অগাস্ট নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যাত্রা শুরু করে। ৬ অগাস্ট সংসদ ভেঙে দেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।

রাষ্ট্র সংস্কারের আহ্বানের মধ্যে সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরে পদত্যাগের হিড়িক পড়ে যায়। আন্দোলনকারীদের চাপের মুখে সরে যেতে হয় প্রধান বিচারপতিকে, পদ ছেড়ে দেন বিভিন্ন বিশ্বাবিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ আরও অনেকে। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীও ২ সেপ্টেম্বর পদত্যাগ করেন। এবার সেই তালিকায় যোগ হল হাবিবুল আউয়াল কমিশনের নাম।

বাংলাদেশে মেয়াদপূর্তির আগে পুরো কমিশনের বিদায় নেওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম নয়। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি জরুরি অবস্থা জারির পর ফখরুদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার এলে বিদায় নিতে হয়েছিল বিচারপতি এম এ আজিজ নেতৃত্বাধীন তৎকালীন নির্বাচন কমিশনকে।

সিইসির দায়িত্বে বিচারপতিদের মধ‌্যে মো. ইদ্রিস ও এটিএম মাসউদ এবং সাবেক আমলাদের মধ‌্যে এম এ সাঈদ, শামসুল হুদা, কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ ও নূরুল হুদা পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ করতে পেরেছিলেন।

বাংলাদেশে নির্বাচন কমিশন গঠনে দীর্ঘদিন কোনো আইন ছিল না। ২০২২ সালে নতুন কমিশন গঠনের আগে আকস্মিকভাবেই আইন প্রণয়ন হয়, আর সেই আইনের অধীনে প্রথম নির্বাচন কমিশনে দায়িত্ব নেন কাজী হাবিবুল আউয়ালসহ পাঁচজন।

তাদের মধ্যে হাবিবুল আউয়াল এক সময় সরকারের আইন সচিব ছিলেন। পরে ধর্ম সচিব, জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সচিব এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

কমিশনের অন্য সদস্যদের মধ্যে আহসান হাবিব খান একজন অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল। রাশেদা সুলতানা অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ। আর মো. আলমগীর ও আনিছুর রহমান অবসরপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ সচিব।

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ কত দিনের হবে, আর নির্বাচনই বা কবে হবে, তা এখনও স্পষ্ট হয়নি। আওয়াল কমিশনের পদত্যাগের ফলে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে তাদের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচন করতে হবে।