বইমেলায় চিরায়ত বাংলার গল্পগুচ্ছ ‘পিঁপড়া ও দুই ছানা’

অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে শাহীন পরদেশীর গল্পের বই ‘পিঁপড়া ও দুই ছানা’। প্রকাশ করেছে প্রকাশনী সংস্থা ‘দোলন’।
চিরায়ত বাংলার গ্রামীণ কৃষি সমাজকে উপজীব্য করে বইটিতে মোট পাঁচটি গল্প আছে- ‘বুবুন ও কুটকুটি’, ‘পিঁপড়া ও দুই ছানা’, ‘শারমিনের চোখে একুশ’, ‘মা হারা শালিকছানা’ ও ‘দুই ভাইয়ের বন্ধু ব্যাঙ’।
‘বুবুন ও কুটকুটি’ গল্পটি এক কৃষকের সন্তান বুবুনকে কেন্দ্র করে। হেমন্তকাল। সুন্দর সকাল। মুক্তোদানার মতো শিশিরবিন্দু ঝিলিক দিচ্ছে গাছের পাতায়, ঘাসের ডগায়। বুবুন খুব সকালে ঘুম থেকে উঠল। উঠেই বাবার খোঁজ করছে।
মা বললেন, তোমার বাবা ধান কাটতে গেছেন। শুনে বুবুনও মাঠে যাওয়ার বায়না ধরল। কাঁচামরিচ দিয়ে পান্তা খেয়ে, গামছা আর কাস্তে হাতে চলে গেল মাঠে। বাবার কাছে গিয়ে বলল, আমিও আসলাম। তোমার সাথে ধান কাটব।
বাবা মুচকি মুচকি হাসেন আর ভাবেন, আহা কতই সুন্দর লাগছে বুবুনকে। মাথায় গামছা বাঁধা। হাতে কাস্তে। পাক্কা কৃষক মনে হচ্ছে। যদিও বাবার স্বপ্ন বুবুন বড় হয়ে সাংবাদিক হবে। দেশের জন্য কাজ করবে। সত্যের পথে চলবে। সত্যি কি বুবুন সাংবাদিক হতে পেরেছিল? জানা যাবে ‘বুবুন ও কুটকুটি’ গল্পটি পড়লে।
এদিকে একটি মা পিঁপড়ার ছিল তুলতুলে দুটি ছানা। বড় ছানাটির নাম ইচিং, ছোটটির নাম বিচিং। একদিন খাবারের খোঁজে বের হলো মা পিঁপড়া। সঙ্গে নিলো ছানা দুটিকেও। অনেক খোঁজার পরও কোথাও খাবার পেল না তারা।
গরমের দিন হওয়ায় রোদে ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত মা পিঁপড়া। ছানা দুটোও গরমে হাঁসফাঁস করছে। বিশ্রাম নেওয়ার মতো জায়গাও নেই আশপাশে। পরে একটা ছোট্ট গাছ দেখতে পেল। পিঁপড়া তার ছানা দুটি নিয়ে গাছের নিচে বসল। মা পিঁপড়া ভাবতে লাগল কীভাবে ছানা দুটির মুখে খাবার তুলে দেবে। ভাবতে ভাবতে এক সময় ঘুমিয়ে পড়ল।
ঘুম থেকে উঠে মা পিঁপড়া দেখল, খাবার না পেয়ে ইচিং বিচিং হাউমাউ করে কাঁদছে। মা পিঁপড়াটি ছানাদের এমন অবস্থা দেখে তাদের বুকে নিয়ে নিজেও কান্না শুরু করল। কান্নার শব্দে ছুটে এল শালিক, টিয়া, ময়না ও কাক। সবাই বলল, কী হয়েছে তোমাদের? তোমরা কাঁদছো কেন? শেষে মা পিঁপড়া কি পেরেছিল তার বাচ্চাদের খাবার দিতে? জানা যাবে ‘পিঁপড়া ও দুই ছানা’ গল্পে।
বইয়ের চতুর্থ গল্প ‘মা হারা শালিকছানা’র কাহিনি একটি শালিকছানাকে ঘিরে। সে এখনও নিজে নিজে খাবার খেতে পারে না। মুখে তুলে দিতে হয়। মা ছাড়া তাকে দেখার কেউ ছিল না। ক'দিন হলো ছানাটির মা মারা গেছে। এখন মা-ও নেই।
মাকে ছাড়া একা একা শালিকছানার অনেক কষ্ট হচ্ছে। সবসময়ই তার মন খারাপ থাকে। তার সঙ্গে খেলারও কেউ নেই। অন্য পাখির ছানারও তাকে বন্ধু বানাতে চায় না। এ নিয়ে শালিকছানাটির খুব কষ্টে দিন কাটত।
একদিন ছানাটি ভাবল- এই বনে আর না! দূরে কোথাও চলে যাবে। যেখানে কেউ তাকে চিনবে না। দূরে সরিয়ে দেবে না। সিদ্ধান্ত নিল, পরদিন সকালে বনের পাখিদের ঘুম ভাঙার আগেই সে বন ছেড়ে নতুন জায়গায় চলে যাবে।
ভোরের আলো ফোটার আগেই বেরিয়ে পড়ল শালিকছানা। একটু হেঁটে, একটু উড়ে সে চলল। কিছুক্ষণ পরপরই ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছিল। গাছের ডালে বসে একটু জিরিয়ে নিয়ে আবার উড়াল দেয় সে। এভাবে উড়তে উড়তে চলে এল একটি নদীর ধারে। এসে তো পড়ল মহাবিপদে। কয়েকটি দুষ্টু প্রাণী তাকে খুব বিরক্ত করতে লাগল। কী হলো তারপর? এমন টানটান উত্তেজনা নিয়েই লেখা ‘মা হারা শালিকছানা’।
আর. করিমের প্রচ্ছদে ‘পিঁপড়া ও দুই ছানা’ বইটির অলঙ্করণ করেছেন সাগর খান অরুণ। মূল্য ১৫০ টাকা।